BN/Prabhupada 1062 - আমাদের জড়া প্রকৃতির উপর কর্তৃত্ব খাটানোর প্রবণতা আছে



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

আমাদের জড়া প্রকৃতির উপর কর্তৃত্ব ফলানোর প্রবণতা আছে। তাই আমরা আমাদের ভুলটা করি। যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা বিস্ময়কর কিছু ঘটতে দেখি, আমাদের জানা উচিত, এই বিস্ময়কর প্রকাশ বা সৃষ্টির পিছনে একজন নিয়ন্তা আছেন। নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোন কিছুরই প্রকাশ বা সৃষ্টি হয় না। নিয়ন্ত্রককে না মানা শিশুসুলভ কাজ। একটি খুব সুন্দর দ্রুত গতির মোটর গাড়ীর মত, খুব সুন্দর প্রকৌশল ব্যবস্থা, রাস্তায় চলছে। একটা শিশু ভাবতে পারে যে, "এই মোটর গাড়ীটা কিভাবে চলছে, কোন ঘোড়ার সাহায্য ছাড়া বা কোন পশুর দ্বারা টানা ছাড়াই?” কিন্তু একজন বুদ্ধিমান মানুষ বা এ সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি, জানেন যে, মোটর গাড়ীর সব ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, চালক ছাড়া এটা চলতে পারে না। সেই মোটর গাড়িটির উন্নত প্রকৌশল ব্যবস্থা বা বৈদ্যুতিক শক্তিঘর আছে। বর্তমান এই যান্ত্রিক যুগে, আমাদের জানা দরকার যে যান্ত্রিক সফলতার পিছনে, যন্ত্রপাতির বিস্ময়কর কাজের পিছনে একজন চালক আছেন । সূতরাং, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের চালক, তিনিই অধ্যক্ষ। তিনিই পরমেশ্বর যার নির্দেশে সবকিছু চলছে। এখন এই জীব, তারা স্বীকার করেছে ভগবান কর্তৃক প্রদত্ত এই ভগবদ্গীতা। যা আমরা পরবর্তী অধ্যয়ে দেখতে পাব যে, জীবসকল হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। “মমৈবাংশো জীবলোক জীবভূতঃ” (ভ. গী. ১৫/৭)। অংশ অর্থ হল “অবিচ্ছেদ্য”। স্বর্ণের অংশ কণাও যেমন সোনা, সাগরের এক ফোঁটা জলও যেমন লবণাক্ত; তেমনি আমরা জীবাত্মা হচ্ছি পরম নিয়ন্তা, পরমেশ্বর ভগবানের অথবা শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা যুক্ত আছি, আমার বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাত্রায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গুণাবলী কেননা আমরা পরমেশ্বর ভগবানের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ।অবশ্য আমরাও কোন কিছূ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। আমরা জড়া প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি। যেমন বর্তমানে আপনারা মহাশূন্যের উপর নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। আপনারা অন্তরীক্ষ অথবা অন্যান্য গ্রহ নিয়ন্ত্রিত করবার চেষ্টা করছেন। এই প্রচেষ্টা স্বাভাবিক, কারণ কর্তৃত্ব করার এই গুণ শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে বিদ্যমান। কারণ আংশিক মাত্রায় আমাদের কর্তৃত্বাভিমান রয়েছে। আমাদের বোঝা উচিত যে, আমাদের এই প্রবণতা পর্যাপ্ত নয়। প্রকৃতির উপর কর্তৃত্ব করার বাসনা আমাদের মনে থাকলেও আমাদের বোঝা উচিত যে আমরা পরম নিয়ন্তা নই। ভগবদ্গীতাতে এর বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

জড়া প্রকৃতি কি? প্রকৃতিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রকৃতি, জড়া প্রকৃতির ব্যাখ্যা ভগবদ্গীতায় অপরা প্রকৃতি রূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অপরা প্রকৃতি, এবং জীবকে বলা হয়েছে পরা প্রকৃতি। প্রকৃতির অর্থ হচ্ছে যে সব সময় নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে। প্রকৃতি স্ত্রী স্বরূপা। যেমন একজন স্বামী নিজের পত্নীর কার্যকলাপকে পরিচালিত করে, তেমনই, প্রকৃতিও অধঃস্তন, নিয়ন্ত্রিত। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন নিয়ন্ত্রক, এবং এই প্রকৃতি, জীব ও জড়া প্রকৃতি উভয়কে, ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি, পরমেশ্বর দ্বারা পরিচালিত হয়। গীতাতে বলা হয়েছে, জীব যদিও ভগবানের অপরিহার্য অংশ, তবুও তাকে প্রকৃতি বলে স্বীকার করতে হবে। ভগবদ্গীতার সপ্তম অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। “অপরেযমিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্” (ভ. গী. ৭/৫)। এই জড়া প্রকৃতি ”অপরা ইয়ম্”। ইতঃ তু, এবং এই নিম্ন প্রকৃতির অতীত আর একটি প্রকৃতি আছে। এবং সেই প্রকৃতি কি? জীব-ভূত, এইগুলি....

জড়া প্রকৃতি গঠিত হয়েছে তিন গুনের সমন্বয়ে: সত্ত্ব, রজ ও তম গুণ। এই গুণত্রয়ের (সত্ত্ব, রজ ও তম) উর্দ্ধে আছে, নিত্য কাল, নিত্য কাল। এবং প্রকৃতির এই গুণগুলির মিশ্রনে নিত্য কালের প্রভাবে ও পরিচালনায় সমন্বয় ঘটে। কর্ম প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। কর্ম প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে, যাকে কর্ম বলা হয়। এই কর্ম প্রক্রিয়া অনন্ত কাল ধরে ঘটে চলেছে। এবং আমরা আমাদের কর্মের ফল স্বরূপ সুখ বা দুঃখ ভোগ করি।