BN/Prabhupada 1065 - সর্ব প্রথম জানতে হবে যে সে এই জড় দেহ নয়



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

সর্ব প্রথম জানতে হবে যে সে এই জড় দেহ নয়। আমরা যখন জড়ের প্রভাবে কলুষিত থাকি, তখন আমাদের সেই অবস্থাকে বলা হয় বদ্ধ অবস্থা। মিথ্যা অহংকার, মিথ্যা চেতনা..... এই বদ্ধ অবস্থায় আমাদের চেতনা বিকৃত হয়ে থাকে এবং তার ফলে আমরা মনে করি যে, জড় পদার্থ থেকে আমরা উদ্ভুত হয়েছি। এরই নাম অহংকার।সমস্ত জড় কর্ম, যস্যাত্ম-বুদ্ধিঃ কুণপে ত্রিধাতুকে (শ্রী.ভা. ১০.৮৪.১৩) যস্যাত্ম-বুদ্ধিঃ কুণপে ত্রিধাতুকে, যিনি দেহগত চিন্তায় সম্পূর্ণ নিমজ্জিত। সম্পূর্ণ ভগবদ্গীতা পরমেশ্বর ভগবান ব্যাখ্যা করেছেন কারন অর্জুন নিজেকে দেহাত্মবুদ্ধি সম্পন্ন জীবের মত উপস্থাপন করেছেন। দেহাত্মবুদ্ধি থেকে অবশ্যই মুক্তি লাভ করতে হবে। অধ্যাত্মবাদীদের সেটিই প্রাথমিক কর্তব্য, যিনি মুক্ত হতে চান, ‍যিনি মুক্তি লাভ করতে চান। এবং তাকে সর্বপ্রথম জানতে হবে সে এই জড় দেহ নয়। সুতরাং এই চেতনা, বা জড় চেতনা....যখন আমরা কলুষিত চেতনা থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ চেতনায় অবস্থিত হই, সেই স্তরকে মুক্তি বলা হয়। মুক্তি বা স্বাধীনতা মানে জড় চেতনা থেকে মুক্ত হওয়া। শ্রীমদ্ভাগবতেও মুক্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে: মুক্তির্হিত্বান্যথরূপং স্বরূপেণ ব্যবস্থিতিঃ (শ্রী.ভা. ২.১০.৬)। স্বরূপেণ ব্যবস্থিতিঃ মুক্তি মানে জড় জগতের কলুষিত চেতনা থেকে মুক্ত হওয়া, এবং বিশুদ্ধ চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়া। পুরো ভগবদ্গীতার শিক্ষায় বিশুদ্ধ চেতনা জাগরন করতে বলা হয়েছে। ভগবদ্গীতার শেষ পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই যে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জিজ্ঞেস করেছেন, তাঁর চেতনা কলুষমুক্ত হয়ে পবিত্র হয়েছে কি না। সে বিশুদ্ধ চেতনা পাপ্ত হয়েছে কিনা। পবিত্র বা বিশুদ্ধ চেতনা বলতে বোঝায় ভগবানের নির্দেশানুসারে কর্ম করা। এই হচ্ছে বিশুদ্ধ চেতনার মর্মার্থ। চেতনা আছে কিন্তু যেহেতু আমরা ভগবানের অংশ, তাই আমরা প্রভাবিত হই । জড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার ফলে প্রকৃতির তিনটি গুণের দ্বারা আমাদের চেতনা প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ভগবান যেহেতু পরমেশ্বর, তাই তিনি কখনই এর দ্বারা প্রভাবান্বিত হন না। ক্ষুদ্র স্বতন্ত্র জীব ও ভগবানের মধ্যে এটিই হচ্ছে পার্থক্য...

এখন এই চেতনা... এই চেতনা বলতে কি বুঝায়? এই চেতনা হচ্ছে “আমি” আমি কে? কলুষিত চেতনায় এই আমি মানে,”আমি হচ্ছি সমস্ত জগতের অধীশ্বর” এটি কলুষিত চেতনা। ”আমি হচ্ছি ভোক্তা।” এই জগত প্রতিনিয়তই আবর্তিত হচ্ছে, কারণ প্রত্যেকটি জীবসত্তা মনে করে যে, যে আমি হচ্ছি এই জগতের স্রষ্টা ও অধীশ্বর। জড় চেতনার দুটি প্রকাশ হয়। একটি হল “আমি হচ্ছি স্রষ্টা” এবং অন্যটি “আমি হচ্ছি ভোক্তা।” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরমেশ্বর ভগবানই হচ্ছেন সব কিছুরই স্রষ্টা ও ভোক্তা। এবং জীব ভগবানের অপরিহার্য অংশ হবার ফলে, সে প্র্রকৃত পক্ষে স্রষ্টাও নয়, ভোক্তাও নয়, সে হচ্ছে সহায়ক। ঠিক যেমন একটি যন্ত্র সমগ্র যন্ত্রটির পরিচালনায় সহযোগিতা করে। যদি আমাদের শরীরের নিয়মতন্ত্র গবেষণা করি। হাত, পা, চোখ, মুখ আদি হচ্ছে দেহের অংশ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কাজ করছে, কিন্তু এইগুলি হচ্ছে দেহের অংশ, তারা কখনই ভোক্তা নয়।ভোক্তা হচ্ছে উদর। যেমন পা দেহকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে চলে। হাত খাদ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে, দাঁত চর্বণ করে এবং সমস্ত দেহই উদরকে ভোগ করতে সহযোগিতা করে। কারণ উদরই হচ্ছে কারন এই শরীরকে পুষ্ট করতে। তাই সব কিছু উদরকে দেওয়া হয়। প্রাণোপহারাচ্চ যথেন্দ্রিয়াণাং (ভা ৪/৩১/১৪)। ঠিক গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন সমস্ত গাছটিতে জল দেওয়া হয়। বা তুমি সুস্থ থাকতে পারো.... শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ- যেমন হাত, পা, চোখ, কান, আঙ্গুল সমূহ-- উদরের সহিত সহযোগিতা করলে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে। ঠিক তেমনই পরম স্রষ্টা ও পরম ভোক্তা। তিনিই ভোক্তা এবং তিনিই সৃষ্টিকর্তা। এবং আমরা, আমি বলতে চাচ্ছি, অধস্তন জীব সকল হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের শক্তি জাত, সহযোগিতা করাই আমাদের কর্তব্য। এই সহযোগিতায় সাহায্য করবে। যেমন, একটি পুষ্টিকর খাবার আঙ্গুল খেয়ে নিল। যদি আঙ্গুল চিন্তা করে “কেন আমরা উদরকে খাবার দিব” চল আমরাই ভোগ করি। তাহা ভুল। আঙ্গুল সমূহ ভোগ করতে সক্ষম নয়। আঙ্গুল যদি নিদিষ্ট খাবার ভোগ করতে চায়, আঙ্গুলকে অবশ্যই উদরকে খাওয়াতে হবে।