BN/Prabhupada 1072 - জড় জগত ত্যাগ করে নিত্য জগতে নিত্য জীবন লাভ করুন



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

জড় জগৎ ত্যাগ করে নিত্য জগতে নিত্য জীবন লাভ করুন তাঁর অহৈতুকি করুণার মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে শ্যাম সুন্দর রূপে প্রকাশ করেন। দুর্ভাগ্যবশত স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা তাঁকে উপহাস করে, অবজানন্তি মাম্‌ মূঢ়া (ভ.গী. ৯.১১)। যেহেতু ভগবান আমাদের মত একজন সাধারণ মানুষের রূপ নিয়ে আসেন এবং লীলাবিলাস করেন। কিন্ত ভগবানকে আমাদের মত একজন সাধারণ মানুষ মনে করা উচিত নয়। এটা তাঁর সর্ব শক্তিমত্তা ও অহৈতুকী কৃপা যে, তিনি আমাদের সম্মুখে তাঁর প্রকৃত রূপ প্রকাশ করেন। এবং তাঁর নিত্য লীলা প্রদর্শন করেন, ভগবানের সেই ধাম আধ্যাত্মিক আকাশের তেজোময় কিরন ব্রহ্ম জ্যোতিতে অসংখ্য গ্রহ ভাসছে, ঠিক যেমন আমাদের সূর্য রশ্মিতে অসংখ্য গ্রহ রয়েছে, ঠিক একই ভাবে, ভগবদ্ধাম, কৃষ্ণলোক বা গোলক ধাম থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মিচ্ছটা, ব্রহ্ম জ্যোতিতেও অসংখ্য গ্রহাণু রয়েছে। আনন্দ-চিন্ময়-রস-প্রতিভাবিতাভিস (ব্র.সং. ৫.৩৭), সবগুলো ধাম চিন্ময়, সেগুলো আনন্দ চিন্ময়, সেগুলো জড় নয়, সেজন্য ভগবান বললেন,

ন তদ ভাসয়তে সূর্য
ন শশাঙ্ক ন পাবক,
যদ্‌ গত্বা ন নিবর্তন্তে
তদ ধাম পরমম মম
(ভ.গী. ১৫.৬)

যে কেউ চিদাকাশে প্রবেশ করলে তাকে আর এই জড় জগতে ফিরে আসতে হবে না। যতদিন আমরা এই জড় জগতে আছি, চন্দ্রলোকের নিকট প্রবেশের কি প্রশ্ন... চন্দ্রগ্রহ, অবশ্যই, নিকটতম গ্রহ, এমনকি আমরা যদি সর্ব্বোচ্চ গ্রহ লোকেও যাই, যাকে ব্রহ্ম লোক বলা হয়, সেখানেও জড় জগতের দুঃখ দুর্দশা বিদ্যমান, জড় দুঃখ দুর্দশা হলো : জন্ম , মৃত্যু, জরা, ব্যাধি। জড় অস্তিত্বের চারটি মূলনীতি থেকে জড় জগতের কোন গ্রহই মুক্ত নয়। সেজন্য ভগবান ভগবদগীতায় বললেন, আব্রহ্ম-ভুবনা-ল্লো কা পুনরাবর্তিনো অর্জুন (ভ.গী. ৮.১৬)। জীব এক গ্রহ লোক থেকে অন্য লোকে ভ্রমণ করছে। এটা এমন নয় যে, স্পুটনিক এর মত যান্ত্রিক উপায়ে আমরা অন্য গ্রহে যেতে পারব। কেউ যদি অন্য গ্রহে যেতে চায়, তার যথাযথ পন্থা রয়েছে। যান্তি দেব-ব্রতা দেবান পিতৃন যান্তি পিতৃ ব্রতা (ভ.গী. ৯.২৫)। কেউ যদি অন্য গ্রহে যেতে চায়, যেমন চন্দ্র গ্রহে, স্পুটনিক দিয়ে আমাদের যাওয়ার দরকার নেই ভগবদগীতা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে, যান্তি দেব-ব্রতা দেবান। এই চন্দ্র অথবা সূর্য গ্রহ অথবা এই ভূলোকের উপরিভাগের লোক সমূহকে বলা হয় স্বর্গ লোক। স্বর্গ লোক, ভূলোক, ভুবর্লোক, স্বর্গলোক। গ্রহ লোকগুলির আলাদা আলাদা স্থিতী রয়েছে। তাই দেবলোক, এইভাবেই জানা যায়। ভগবদগীতায় খুব সরল পথ বর্ণনা করা হয়েছে যাতে যে কেউ উচ্চতর গ্রহলোক, দেবলোকে যেতে পারে। যান্তি দেব-ব্রতা দেবান। যান্তি দেব-ব্রতা দেবান। দেব ব্রতা, যদি আমরা সুনির্দিষ্ট দেব দেবীর আরাধনা অনুশীলন করি, তাহলে আমরা সেই সেই দেব দেবীর লোকে যেতে পারব। এমনকি আমরা সূর্য গ্রহে ও যেতে পারি, চন্দ্র গ্রহে যেতে পারি, স্বর্গলোকে যেতে পারি, কিন্ত ভগবদগীতা আমাদের এই জড় জগতের অন্য গ্রহ লোক গুলিতে যেতে উপদেশ দিচ্ছে না। কারণ, এমনকি যদি আমরা এই জড় জগতের সর্ব্বোচ্চ লোক, ব্রহ্ম লোকেও যাই, আধুনিক বিজ্ঞানীদের গণনা অনুসারে, স্পুটনিক এর সাহায্যে এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্ব্বোচ্চ গ্রহে যেতে সময় লাগবে ৪০,০০০ বছর। এখন এই ৪০,০০০ বছর বেচে থাকা সম্ভব নয় , আর এই জড় জগতের সর্ব্বোচ্চ গ্রহে পৌছানো সম্ভব নয়। কিন্ত কেউ যদি নির্দিষ্ট দেবদেবীর আরাধনায় জীবন উৎসর্গ করে, তাহলে সে সেই সেই দেবলোকে যেতে পারে। যেমনটি ভগবদগীতায় উল্লেখ করা হয়েছে, যান্তি দেব-ব্রতা দেবান পিতৃন যান্তি পিতৃ ব্রতা (ভ.গী. ৯.২৫)। একই ভাবে পিতৃ লোক রয়েছে। একই ভাবে, কেউ যদি চিন্ময় লোকে যেতে চায়, চিন্ময় লোক.... চিন্ময় লোক মানে কৃষ্ণ লোক। চিদাকাশে অসংখ্য ধাম রয়েছে, সনাতন ধাম, সনাতন ধাম, যা কখনো বিনাশ হয় না। কিন্ত এই সমস্ত সনাতন ধামের মধ্যে একটি ধাম রয়েছে, মূল ধাম, যা গোলোক বৃন্দাবন নামে অভিহিত। এই সমস্ত তথ্য ভগবদগীতায় রয়েছে, এবং আমাদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এই জড় জগত ত্যাগ করে সনাতন ধামে দিব্য জীবন লাভ করার জন্য।