BN/Prabhupada 1076 - মৃত্যর সময়ে আমরা এই জগতে থাকতে পারি অথবা চিজ্জগতে উন্নীত হতে পারি



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

মৃত্যুর সময়ে আমরা এই জগতে থাকতে পারি অথবা চিৎজ্জগতে উন্নীত হতে পারি। বিভিন্ন প্রকার ভাব রয়েছে। জড়া প্রকৃতিও তার মধ্যে একটি, যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি, যে, এই জড়া প্রকৃতিও পরমেশ্বর ভগবানের শক্তির প্রকাশ। বিষ্ণু পুরাণে পরমেশ্বর ভগবানের শক্তিসমূহের সারমর্ম প্রদান করা হয়েছে।

বিষ্ণু শক্তি পরা প্রোক্তা

ক্ষেত্রজ্ঞাখ্যা তথা পর
অবিদ্যা কর্ম সমজ্ঞানা
তৃতীয়া শক্তিঃ ইশ্বতে
(চৈ.চ. মধ্য ৬.১৫৪)

সমস্ত শক্তি, পরস্য শক্তি বিবিধৈব শ্রুয়তে (চৈ. চ. মধ্য ১৩.৬৫ তাৎপর্য)। পরমেশ্বর ভগবানের বিচিত্র শক্তি রয়েছে, অসংখ্য শক্তি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্ত মহান তত্তবেত্বা ঋষিগণ, মুক্ত আত্মা, তারা বিশ্লেষণ করেছেন এবং সমস্ত শক্তি কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন, তিনটি শিরোনামে। প্রথমত...সবকিছুই বিষ্ণু শক্তি। শক্তিসমূহ, ভগবান বিষ্ণুর বিবিধ শক্তি। সেই শক্তিটি হলো পরা, চিন্ময়। এবং ক্ষেত্রজ্ঞাখ্যা তথা পরা, জীব সমূহ, ক্ষেত্রজ্ঞ, তারাও চিন্ময় শক্তির অন্তর্ভুক্ত, যেমনটি ভগবদ গীতায় নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা পূর্বেই বর্ণনা করেছি। এবং অন্য শক্তিটি হলো জড়া শক্তি, তৃতীয়া কর্ম সম্জ্ঞানা (চৈ.চ. মধ্য ৬.১৫৪) অন্য শক্তিটি হলো অজ্ঞতা। আর সেটি হলো জড়া শক্তি। আর সেটিও ভগবত শক্তি। তাই, মৃত্যর সময়ে আমরা এই জড়া শক্তি বা এই জড় জগতে থাকতে পারি, অথবা চিৎজ্জগতে যেতে পারি। এই হলো মানদন্ড। তাই ভগবদ গীতায় বলা হয়েছে,

যং যং বাপি স্মরণ ভাবম্‌
ত্যাজত্যন্তে কলেবরম্‌
তম তমেবৈতি কৌন্তেয়
সদা তদ্ভা‌বভাবিত
(ভ.গী. ৮.৬)।

এখন, আমরা যেভাবে চিন্তা করে অভ্যস্ত , জড়া শক্তি অথবা চিৎ শক্তির বিষয়ে, এখন, কিভাবে আমরা আমাদের ধারনা নিতে পারি? জড় চেতনাকে কিভাবে চিন্ময় চেতনায় স্থানান্তর করা যায়? চিন্ময় চেতনার উন্মেষ করার জন্য বৈদিক সাহিত্য রয়েছে। ঠিক যেমন জড় চেতনার বিকাশের জন্য প্রচুর জড় সাহিত্য রয়েছে- পত্রিকা, ম্যাগাজিন, উপন্যাস , গল্প ও আরো অনেক কিছু। সাহিত্যে ভরপুর। তাই আমাদের চেতনা এইসব জড় সাহিত্যে নিবিষ্ট। ঠিক একইভাবে, আমরা যদি আমাদের চেতনাকে চিন্ময় স্তরে উন্নীত করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই বৈদিক সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে। তত্ত্ববেত্তা ঋষিগণ সেজন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদিক সাহিত্য, পুরাণ উপহার দিয়ে গেছেন। পুরাণ গুলো নিছক গল্পকথা নয়, এগুলো ঐতিহাসিক সত্য। চৈতন্য চরিতামৃতে একটি শ্লোক রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে, অনাদি বহির্মুখ জীব কৃষ্ণ ভুলি গেলা অতএব কৃষ্ণ বেদ পুরাণ কৈলা (চৈ.চ.মধ্য ২০.১১৭) বিস্মৃতিপরায়ণ জীবসমূহ, বদ্ধ জীবেরা ভগবানের সাথে তাদের নিত্য সম্পর্কের কথা ভুলে গেছে, এবং তারা জড়জাগতিক কাজকর্মে ডুবে আছে। এবং চিন্ময় স্তরে তাদের চেতনা উন্নীত করার জন্য, কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস বৈদিক সাহিত্য রচনা করেছেন। বৈদিক সাহিত্য মানে প্রথমে তিনি এক বেদকে চারভাগে বিভক্ত করলেন। তারপর তিনি পুরাণ গুলির মাধ্যমে সেগুলি ব্যাখ্যা করলেন। তারপর অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন স্ত্রী, শুদ্র ও বৈশ্যদের জন্য তিনি মহাভারত রচনা করলেন। এবং মহাভারতের মধ্যে তিনি ভগবদগীতা উপহার দিলেন। তারপর পুনরায় বেদান্ত সূত্রের মাধ্যমে তিনি বৈদিক সাহিত্যের সারমর্ম প্রদান করলেন। এবং ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক বেদান্ত সুত্রে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি ভাষ্য প্রদান করলেন যা শ্রীমদ্ভাগবত নামে সমাদৃত।