BN/Prabhupada 0065 - কৃষ্ণ ভাবনায় ভাবিত হলে সবাই সুখী হবেন

The printable version is no longer supported and may have rendering errors. Please update your browser bookmarks and please use the default browser print function instead.


Arrival Lecture -- Gainesville, July 29, 1971

মহিলা অতিথিঃ এই আন্দোলনে কি অন্য সমস্ত লোকেদের স্থান আছে যারা সারাদিন হরে কৃষ্ণ জপ না করে পরোক্ষভাবে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করছে?

শ্রীল প্রভুপাদঃ না। পন্থাটি হচ্ছে যে, যদি আপনি গাছের গোঁড়ায় জল ঢালেন, তাহলে সেই জল পাতা, শাখা, উপশাখা সর্বত্র যায় এবং সবকিছুই সতেজ থাকে। কিন্তু আপনি যদি কেবল পাতায় জল ঢালেন, তবে পাতাও শুকিয়ে যাবে এবং গাছটিও শুকিয়ে যাবে। যদি আপনি উদরে খাবার দেন, তাহলে তার থেকে উৎপন্ন শক্তি আপনার আঙ্গুল, চুলের গোড়া, নখ এবং বাকি সব জায়গাতেই যাবে। আর যদি আপনি খাবারটি কেবল হাতেই দেন কিন্তু উদরে না দেন, তাহলে সেইটি কেবল বেকার অপচয় হবে। তাই এই সমস্ত মানবসেবামূলক কার্যক্রম কেবল অপচয়ই হয়েছে মাত্র যেহেতু তাতে কোন কৃষ্ণ ভাবনামৃত ছিল না। তারা বিভিন্নভাবে মানব সমাজের সেবা করার চেষ্টা করে চলেছে, কিন্তু সেইগুলো সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে তারা হতাশ হচ্ছে কারণ সেখানে কোন কৃষ্ণ ভাবনামৃত নেই। আর যদি লোকেদের কৃষ্ণভাবনায় প্রশিক্ষিত করে তোলা যায় তাহলে সকলে আপনা থেকেই সুখী হয়ে যাবে। যে কেউ এখানে যোগদান করবে, যে কেউ এই কথা শুনবে, যে কেউ এর সঙ্গে সহযোগিতা করবে - সকলেই সুখী হবে। তাই আমাদের পন্থা হচ্ছে একটি স্বাভাবিক পন্থা। আপনি ভগবানকে ভালোবাসুন, এবং যদি আপনি প্রকৃত অর্থেই ভগবানকে ভালোবাসতে দক্ষ হন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি সকলকেই ভালোবাসবেন। ঠিক যেমন একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি , তিনি যেহেতু কৃষ্ণকে ভালোবাসেন তাই তিনি পশুদেরও ভালোবাসেন। তিনি পাখিদের, পশুদের, সবাইকে ভালোবাসেন। কিন্তু এই তথাকথিত মানবতার ভালোবাসা মানে হচ্ছে তারা কিছু মানুষকে ভালোবাসছে আর পশুদের হত্যা করছে। তারা কেন পশুদের ভালোবাসে না? কারণ তারা ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি কখনই পশুদের হত্যা করবেন না, এমন কি পশুদের যন্ত্রণাও দেবেন না। সেইটিই হচ্ছে সার্বজনীন ভালোবাসা। আপনি যদি কেবল আপনার নিজের ভাই বা বোনকে ভালোবাসেন, সেইটি সার্বজনীন ভালোবাসা নয়। সার্বজনীন ভালোবাসা মানে হচ্ছে আপনি সকলকেই ভালোবাসবেন। এই সার্বজনীন ভালোবাসা কৃষ্ণভাবনামৃতের মধ্য দিয়েই লাভ করা যায়, অন্য কোন মাধ্যমে নয়।

মহিলা অতিথিঃ আমি এমন কিছু ভক্তদের জানি যাদেরকে তাদের বিভিন্ন সম্পর্ক, মানে, জাগতিক পিতা-মাতা ইত্যাদি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছে আর এটি তাদেরকে কিছু মাত্রায় হলেও দুঃখ দিয়েছে, কারণ তাদের পিতা মাতারা এটি বুঝতে পারে না। এখন এই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করতে আপনি কি উপদেশ করেন?

শ্রীল প্রভুপাদঃ দেখুন, একটি ছেলে যে কৃষ্ণভাবনাময়, সে তার পিতা-মাতা, পরিবার, দেশ, সমাজ সকলের প্রতি সবচাইতে মহৎ সেবা প্রদান করছে। কৃষ্ণভাবনাময় না হয়ে তারা তাদের পিতা-মাতাকে কি-ই বা সেবা দিচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু যেমন প্রহ্লাদ মহারাজ একজন মহান ভক্ত ছিলেন, আর তাঁর পিতা ছিলেন এক বিশাল অভক্ত, এতোটাই বিদ্বেষী ছিলেন যে ভগবান নৃসিংহদেবের হাতে তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু যখন ভগবান প্রহ্লাদ মহারাজকে বর প্রার্থনা করতে বললেন, তিনি বললেন, "হে প্রভু, আমি কোন ব্যবসায়ী নই যে, আমি আপনার কিছু সেবা করে তার বিনিময়ে এটা ওটা চাইবো। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।" নৃসিংহদেব তার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেনঃ "এই হচ্ছে আমার মহান শুদ্ধ ভক্ত"। কিন্তু সেই একই শুদ্ধভক্ত ভগবানের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, "হে প্রভু, আমার পিতা ছিলেন একজন নাস্তিক এবং তিনি অজস্র অপরাধ করেছেন, তাই আমি ভিক্ষা চাই যেন আমার পিতা মুক্তিলাভ করেন।" নৃসিংহদেব বললেন, "তোমার পিতা ইতিমধ্যেই মুক্তি লাভ করেছে কেননা তুমি তার পুত্র। সমস্ত অপরাধ থাকা সত্ত্বেও, যেহেতু তুমি তার পুত্র তাই সে মুক্তি লাভ করেছে। কেবল তোমার পিতাই নয়, তার পিতা, তার পিতা, এইভাবে সাতপুরুষ তারা সকলেই উদ্ধার লাভ করেছে। তাই যদি কোন পরিবারে একজন বৈষ্ণব জন্ম নেয়, সে কেবল তার পিতাকেই উদ্ধার করে না, তার পিতা, তার পিতা, তার পিতা এইভাবে সকলকে উদ্ধার করে। সেইটিই হচ্ছে পরিবারের প্রতি সবচাইতে মহান সেবা, কৃষ্ণ ভাবনাময় হওয়া। বাস্তবে এমনটা ঘটেছেও। আমার এক শিষ্য কার্তিকেয়, ওর মা এতোটাই সমাজপ্রেমী ছিল যে সাধারণত যখনই ও ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইত, মা বলতো, "একটু বোস। আমি নাচের পার্টিতে যাচ্ছি।" এই ছিল ওদের সম্পর্ক। তবুও, যেহেতু ছেলেটি কৃষ্ণভাবনাময় ছিল, সে তার মায়ের সাথে অনেকবার কৃষ্ণ সম্পর্কিত কথা বলত। মৃত্যুর সময় মা তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমার কৃষ্ণ কোথায়? তিনি কি এইখানে আছেন?" আর তৎক্ষণাৎ তিনি মারা গেলেন। তার মানে হচ্ছে যে তিনি মৃত্যুর সময় শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেছেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি মুক্তিলাভ করেছেন। সেই কথা ভগবদগীতাতে বলা হয়েছে, যং যং বাপি স্মরণ ভাবং ত্যজতন্তে কলেবরং। (গীতা ৮.৬) মৃত্যুর সময় যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে, তাহলে তার জীবন সার্থক। সুতরাং এই মা-টি তার কৃষ্ণভাবনাময় পুত্রের কারণে, মুক্তি লাভ করলেন। সরাসরি কৃষ্ণভাবনামৃতে না এসেও। সুতরাং এইটি হচ্ছে সুফল।