BN/Prabhupada 0068 - সবাইকে কাজ করা উচিত

The printable version is no longer supported and may have rendering errors. Please update your browser bookmarks and please use the default browser print function instead.


Lecture on SB 6.1.45 -- Laguna Beach, July 26, 1975

নিতাইঃ "এই জীবনে যে ব্যক্তি যে পরিমাণে ও যে প্রকারে, ধর্ম বা অধর্ম আচরণ করে, পরবর্তী জীবনে, সেই ব্যক্তি সেই পরিমাণ ও সেই প্রকারে তার কর্মের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সুখ ভোগ করে অথবা কষ্টভোগ করে।

প্রভুপাদঃ

যেন যাবান্‌ যথাধর্মো
ধর্মো বেহ সমীহিতঃ
স এব তৎফলং ভুংক্তে
তথা তাবদমুত্র বৈ
(শ্রীমদ্ভাগবত ৬.১.৪৫)।

আগের শ্লোকে আমরা আলোচনা করেছি, দেহবান্‌ ন হ্যকর্মকৃৎ। যে-ই জড় দেহ ধারণ করেছে, তাকেই কর্ম করতে হয়। প্রত্যেককেই কর্ম করতে হয়। চিন্ময় দেহেও আমাদের কর্ম করতে হয়। জড় দেহেও আমাদের কাজ করতে হয়। কারণ আত্মার নীতি হচ্ছে কর্ম করা - আত্মা জীবন্ত শক্তি - তাই সে ব্যস্ত। জীবিত দেহ মানেই সে গতিশীল। কাজ করবে। সে অলসভাবে বসে থাকতে পারে না। ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, "এক মুহূর্তের জন্যও কেউ অলসভাবে থাকতে পারে না।" এটিই হচ্ছে জীবনের লক্ষণ। আর এই কাজটি চলে ভিন্ন ভিন্ন দেহ অনুসারে। কুকুরও দৌড়াচ্ছে, আবার মানুষও দৌড়াচ্ছে। কিন্তু একজন মানুষ ভাবছে সে অত্যন্ত সভ্য কারণ সে মোটরগাড়িতে দৌড়াচ্ছে। তারা উভয়েই দৌড়াচ্ছে, কিন্তু মানুষের একটি বিশেষ ধরণের শরীর রয়েছে যার দ্বারা সে একটি পরবহন বা সাইকেল তৈরি করে সেটার ওপর চড়ে দৌড়াতে পারে। সে ভাবছে যে "আমি কুকুরের থেকে অধিক গতিতে দৌড়াচ্ছি; তাই আমি সভ্য। এই হচ্ছে আধুনিক মনোভাব। সে জানে না যে, এই দৌড়ানোর মধ্যে পার্থক্যটা কি পঞ্চাশ মাইল বেগে আর পাঁচ মাইল বেগে অথবা পাঁচ হাজার মাইল বেগে কিংবা পাঁচ লক্ষ মাইল বেগে। ক্ষেত্রটি সীমাহীন। যে গতিই তুমি আবিষ্কার কর না কেন, তবু তা অপর্যাপ্তই থেকে যাবে।

এটি জীবন নয় যে, "যেহেতু আমি কুকুরের থেকে বেশী গতিতে দৌড়াচ্ছি, তাই আমি সভ্য।"

পন্থাস্তু কোটিশতবৎসরসংপ্রগম্যো
বায়োরথাপি মনসো মুনিপুঙ্গবানাম্‌
সোহপ্যস্তি যৎপ্রপদসীম্ন্যবিচিন্ত্যতত্ত্বে
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি
(ব্রহ্মসংহিতা ৫.৩৪)।

আমার গতি... কিসের জন্য এই গতি? কারণ আমরা একটা নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে চাই, এই জন্য তার গতি। আর আসল লক্ষ্য হচ্ছেন গোবিন্দ, বিষ্ণু। ন তে বিদুঃ স্বার্থগতিং হি বিষ্ণু। তারা বিভিন্ন গতিতে দৌড়াচ্ছে, কিন্তু তারা জানে না যে আসল লক্ষ্যটি কি। আমাদের দেশের একজন বড় কবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিনি যখন লন্ডনে ছিলেন - তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন - আমি সেটা পড়েছিলাম। তোমাদের পাশ্চাত্য দেশগুলোতে মানুষ খুব উচ্চ গতিতে গাড়ি চালায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন কবি। তাই তিনি এভাবে ভাবছেন যে "এই ইংরেজদের দেশটা খুব ছোট, কিন্তু তারা এতো তীব্র গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে যে তারা সমুদ্রে পড়ে যাবে।" তিনি এইভাবে মন্তব্য করেছিলেন। কেন তারা এতো দ্রুত গতিতে চলছে? আর একইভাবে আমরাও দ্রুত গতিতে নরকের দিকে দৌড়াচ্ছি। এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা, কারণ আমরা জানিনা যে আমাদের আসল গন্তব্য কোথায়। আমি যদি না জানি যে আমার গন্তব্য কোথায়, আর খুব দ্রুত গতিতে আমার গাড়িটি চালানোর চেষ্টা করি, তাহলে এর ফলাফলটা কি হবে? ফল হবে ধ্বংস। আমাদের অবশ্যই জানতে হবে আমরা কেন দৌড়াচ্ছি। ঠিক যেমন নদী তার বিশাল বিশাল ঢেউ নিয়ে বয়ে চলে, কিন্তু তার লক্ষ্য হচ্ছে সমুদ্র। নদী যখন সমুদ্রের সাথে মিশে যায়, তখন সে তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়। একইভাবে, আমাদেরকেও অবশ্যই জানতে হবে আমাদের গন্তব্য কোথায়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছেন ভগবান বিষ্ণু। আমরা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেকোনো ভাবেই হোক আমরা এই জড় জগতে পতিত হয়েছি। তাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে ভগবানের কাছে, ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া। এটি হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আর কোন লক্ষ্য নেই। তাই আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন শিক্ষা দিচ্ছে যে "তুমি তোমার জীবনের লক্ষ্য স্থির কর।" আর জীবনের লক্ষ্য কি?" গৃহে প্রত্যাবর্তন, ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া। তোমরা বিপরীত দিকে যাচ্ছ, নরকের দিকে যাচ্ছ। এটি তোমাদের লক্ষ্য নয়। তোমাদের ভগবানের দিকে ফিরে যাওয়া উচিত। এটিই হচ্ছে আমাদের কার্যক্রম।