BN/Prabhupada 0114 - একজন ভদ্রলোক যার নাম কৃষ্ণ, তিনি সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করছেন



Lecture -- Laguna Beach, September 30, 1972

ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যে,

দেহিনোহস্মিন্‌ যথা দেহে
কৌমারং যৌবনং জরা
তথা দেহান্তরম্‌ প্রাপ্তিঃ
ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি
(গীতা ২/১৩)

তুমি, আমি, আমরা সকলেই এই দেহে আবদ্ধ হয়ে আছি আমি চিন্ময় আত্মা, তুমি চিন্ময় আত্মা সেটিই হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ, অহম্‌ ব্রহ্মাস্মিঃ "আমি ব্রহ্মবস্তু" অর্থাৎ আত্মা। পরব্রহ্ম নয়, ভুল বুঝবে না কিন্তু। পরব্রহ্ম মানে ভগবান। আমরা ব্রহ্ম, সেই পরমব্রহ্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ পরম নয়, পরমব্রহ্ম ভিন্ন ঠিক যেমন তোমরা আমেরিকান, কিন্তু তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আমেরিকান মি. নিক্সন। কিন্তু তুমি বলতে পার না যে, "যেহেতু আমি আমেরিকান, তাই আমিও মি. নিক্সন"। তা তুমি বলতে পার না। তদ্রূপ, তুমি, আমি, আমরা প্রত্যেকেই, ব্রহ্ম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা পরব্রহ্ম, পরব্রহ্ম হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। ঈশ্বর পরমঃ কৃষ্ণ (ব্রহ্মসংহিতা ৫.১) ঈশ্বর পরমঃ । ঈশ্বর মানে নিয়ন্ত্রণ কর্তা। আমরা সকলেই কিছু না কিছু মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকর্তা কেই তাঁর পরিবার নিয়ন্ত্রণ করছেন, কেউ বাঁ তাঁর অফিস, কেউ তাঁর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন আবার কেউবা তাঁর শিষ্যদের নিয়ন্ত্রণ করছেন সবশেষে কেউ হয়ত একটা কুকুরকে নিয়ন্ত্রণ করছে যদি কারোর নিয়ন্ত্রণ করার মতো কিছু না থাকে, তাহলে সে একটা পোষা কুকুর রেখে, বা পোষা বিড়াল রেখে তা নিয়ন্ত্রণ করে তাই প্রত্যেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সেটা বাস্তব। কিন্তু পরম নিয়ন্তা হচ্ছেন কৃষ্ণ। এখানে তথাকথিত নিয়ন্তা আবার অন্য কোন নিয়ন্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় আমি হয়ত আমার শিষ্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কিন্তু আমি আবার কারোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি, আমার গুরুদেবের দ্বারা আমি নিয়ন্ত্রিত তাই কেউই বলতে পারে না যে, "আমিই পরম নিয়ন্তা," না। এখানে যাদের পাবে তারা সবাই তথাকথিত নিয়ন্তা, কিছু মাত্রায় নিয়ন্তা, কিন্তু সে নিজেও কারোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু কৃষ্ণ হচ্ছেন এমন কেউ যিনি কেবলই নিয়ন্তা, তিনি কারোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন না। শ্রীকৃষ্ণকে বোঝা এমন কঠিন কিছু নয় এটা বুঝতে চেষ্টা কর যে, প্রত্যেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছে, আমাদের প্রত্যেকেই কিন্তু একই সাথে কারোর না কারোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু এমন একজন ব্যক্তি আছেন যার নাম শ্রীকৃষ্ণ তিনি প্রত্যেককে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিন্তু তিনি কারোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নন। তিনিই ভগবান

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণ
সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ
অনাদিরাদি গোবিন্দ
সর্বকারণ কারণম্‌
(ব্রহ্মসংহিতা ৫.১)

এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন খুবই বিজ্ঞানসম্মত, প্রামাণিক এবং যে কোন বুদ্ধিমান মানুষই তা বুঝতে পারবে তাই আপনারা যদি এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন তাহলে তা আপনাদেরই লাভ আপনাদের জীবন সফল হবে , আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য সফল হবে। বাস্তব সত্য আমাদের বইগুলি আপনারা পড়ার চেষ্টা করুন। আমাদের অনেক গ্রন্থ রয়েছে আপনারা এসে নিজের চোখে দেখে যেতে পারেন যে আমাদের শিষ্যেরা তা কিভাবে করছে, কিভাবে ওঁরা কৃষ্ণভাবনামৃতে উন্নতি সাধন করছে ওদের সঙ্গ করার দ্বারা আপনারা শিখতে পারেন ঠিক যেমন কেউ যদি যান্ত্রিকবিদ্যা শিখতে চায়, তাকে কারখানায় ঢুকতে হবে এবং শ্রমিকদের সঙ্গ করতে হবে, যন্ত্রপাতি নিয়ে, তাহলে ক্রমে ক্রমে সেও একজন যন্ত্রবিশারদ হতে পারবে, প্রযুক্তি বুঝতে পারবে ঠিক তেমনই, সবাইকে এই সুযোগ দিতেই আমরা এই কেন্দ্রসমূহ খুলছি যাতে করে মানুষ শিখতে পারে যে কিভাবে ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে হয়, কিভাবে আমাদের নিজ আলয়ে আমরা ফিরতে পারি সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য। এবং তা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত, বৈদিক এবং প্রামাণিক এই জ্ঞান আমরা সরাসরি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকে প্রাপ্ত হয়েছি সেটিই হচ্ছে ভগবদগীতা। আমরা ভগবদগীতা যথাযথ উপস্থাপন করছি। এতে কোন রকম আজেবাজে ব্যাখ্যা নেই শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় বলেছেন যে তিনিই হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। আমরাও সেই একই কথা বলছি যে পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ আমরা তা বিকৃত করছি না ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "আমার ভক্ত হও, সর্বদা আমার কথা চিন্তা কর, আমার পূজা কর, আমাকে নমস্কার কর" । আমরাও সকলকে সেই শিক্ষাই দিচ্ছি যে, "সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের কথা চিন্তা করুন, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে এই মহামন্ত্র জপের মাধ্যমে আপনি সর্বদা কৃষ্ণের কথাই চিন্তা করবেন