BN/Prabhupada 0601 - চৈত্যগুরু মানে যিনি অন্তর থেকে বিবেক এবং বুদ্ধি দান করেন



Sunday Feast Lecture -- Los Angeles, May 21, 1972

সুতরাং এইগুলো হল ভগবানের শক্তি। এমন নয় যে আমি কোন জাদু দেখালাম আর সঙ্গে সঙ্গে ভগবান হয়ে গেলাম। শুধু এই জাদুটি দেখুন, ভগবানের আসল জাদু দেখুন। কোন সস্তা ভগবানকে গ্রহণ করবেন না। ভগবান অবশ্যই ভগবানসুলভ জাদু দেখাবেন। ঠিক যেমন আমরা কিছু বিমান অথবা নভোযান বা জেটবিমান আকাছে উড়িয়ে ছোট ছোট জাদু দেখাচ্ছি। আমরা কতই না কৃতিত্ব নিচ্ছি, বৈজ্ঞানিকরা যেসব কৃতিত্ব ঘোষণা করে বেড়াচ্ছে। "কোন ভগবান নেই। আমিই ভগবান, কারণ আমি এই বিমানটি বানিয়েছি।" এইসব বিশাল গ্রহমণ্ডলীর তুলনায় তোমার এই বিমান এমন আর কি? সুতরাং জ্ঞানী ব্যক্তি কোন বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিকদের চেয়ে ভগবানকে অধিক কৃতিত্ব দেবেন। কেন না তিনি (ভগবানের) শক্তিসমূহ দেখতে পান, কি পরিমাণ শক্তি রয়েছে তাঁর। তাঁর অসংখ্য শক্তি রয়েছে। বৈদিক সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, পরাস্য শক্তিঃ বিবিধৈব শ্রূয়তে (চৈ.চ মধ্য ১৩.৬৫ তাৎপর্য) বেদে, উপনিষদে বলা হয়েছেঃ ন তস্য কার্যং কারণং চ বিদ্যতে ভগবানকে ব্যক্তিগতভাবে কিছুই করতে হয় না। ন তস্য কার্যং কারণং চ বিদ্যতে ন তৎ-সমস চাভ্যধিকাশ্চ দৃশ্যতে। কেউই তাঁর সমকক্ষ অথবা মহত্তর নন। কেউ না। এই হল ভগবান। যদি কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে, একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ভগবান, আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী ভগবান... ঠিক যেমন ইদানীং ভগবান হওয়াটা একটা ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এক ভগবানের সঙ্গে আরেক ভগবানের প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেউই ভগবানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। তিনিই হলেন ভগবান। ন তস্য সম। সম মানে সমান। অধিকস্য, অথবা মহত্ত্বর-ও নয়। তার অর্থ হল সকলেই তাঁর অধীন। সকলেই অধীন। সকলেই ভগবানের অধীনস্থ। সেই ব্যক্তি হয়তো অনেক শক্তিশালী হতে পারেন। কিন্তু কেউই ভগবানের সমকক্ষ বা তাঁর থেকে মহত্ত্বর হতে পারে না। সেটি হল বৈদিক শাস্ত্রের তথ্য। ন তস্য সম অধিকস্য দৃশ্যতে। আমরা খুঁজে পাই না... আরও মহান মহান সন্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন, তারাও গবেষণা করছেন, যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ত্ব। পরম পুরুষ। সুতরাং মহান সন্ত ব্যক্তিদের, বিশেষ করে ব্রহ্মাজীর, গবেষণার মাধ্যমে, তিনি এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বপ্রথম সৃষ্ট জীব। তিনি তাঁর পারমার্থিক উন্নতি এবং গবেষণার দ্বারা এটি উদ্ঘাটন করেছেন যে শ্রীকৃষ্ণই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ (ব্রহ্মসংহিতা ৫.১)। তিনি সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, "শ্রীকৃষ্ণই হলেন পরমেশ্বর ভগবান।" ঠিক যেমন আমরা বসে রয়েছি, অনেক ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রলোকেরা রয়েছেন এখানে। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি এখানে কে সর্বশ্রেষ্ঠ। তো ধরুন, তর্কের খাতিরে, আপনি এটা মেনে নিলেন যে "আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ।" কিন্তু আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নই। আমার পারমার্থিক গুরু রয়েছেন। তাঁর ওপর তাঁর গুরু রয়েছেন, আবার তাঁর ওপর তাঁর গুরু রয়েছে। এইভাবে আমরা ব্রহ্মা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছব। ব্রহ্মা হলেন এই ব্রহ্মাণ্ডের আদি গুরু যিনি আমাদের এই বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেছেন। সেজন্য তাঁকে পূর্বপুরুষ পিতা বা পিতামহ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু তিনিও স্বাধীন নন। বেদান্তসূত্র বা ভাগবতে বলা হয়েছে যে ব্রহ্মা ... তিনি প্রথম সৃষ্ট জীব। তিনি যখন সৃষ্ট হন তখন আর কেউ, আর কোন জীবই ছিল না। সুতরাং যদি আমি বলি যে তিনিও অন্য কারো থেকে জ্ঞানলাভ করেছেন, তাহলে তর্ক উঠতে পারে যে, "তাঁর ঊর্ধে কে সেই ব্যক্তি যিনি তাঁকে জ্ঞান দান করেছেন?" তাই ভাগবতে বলা হয়েছে, "না, তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন।" কিভাবে? "হৃদয় থেকে?" তেনে ব্রহ্মহৃদা। হৃদা। কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি সকলের হৃদয়েই বিরাজ করছেন, আপনার হৃদয়ে, আমার হৃদয়ে, সকলের। এবং তিনিই আপনাকে জ্ঞান দান করতে পারেন। তাই তাঁর নাম চৈত্যগুরু। চৈত্যগুরু মানে হল যিনি ভেতর থেকে বিবেক ও জ্ঞান দিয়ে থাকেন। ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টঃ (গীতা ১৫.১৫) "আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজমান" হৃদি, "হৃদয় অভ্যন্তরে"। সন্নিবিষ্ট, "আমি সেখানে অবস্থান করছি"। সর্বস্য। শুধু আপনার আর আমার নয়। এমনকি পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, ব্রহ্মা সকলের হৃদয়েই। সর্বস্য। সকল জীবের। সুতরাং সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্ট মত্তঃ। "আমার থেকে"। স্মৃতিঃ জ্ঞানং অপহোনং চ, " স্মৃতি, জ্ঞান অ বিস্মৃতি"। বিস্মৃতি-ও। যদি আপনি ভগবানকে ভুলে যেতে চান, ভগবান আপনাকে সেই বুদ্ধিও দেবেন যাতে আপনি তাঁকে ভুলে যেতে পারেন। তিনি এতোই দয়ালু। আপনি যাই চান, তিনি আপনাকে বুদ্ধি দেবেন, "এভাবে কর"।