BN/Prabhupada 0658 - শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে জ্ঞানযোগ এবং ভক্তিযোগের পরম সমন্বয়

The printable version is no longer supported and may have rendering errors. Please update your browser bookmarks and please use the default browser print function instead.


Lecture on BG 6.13-15 -- Los Angeles, February 16, 1969

ভক্তঃ শ্রীল প্রভুপাদের জয় হোক।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হরে কৃষ্ণ। সাংখ্য যোগ হচ্ছে অষ্টাঙ্গ যোগ। এই আসন পদ্ধতি এবং ধ্যানকে বলা হয় সাংখ্য যোগ। আর জ্ঞান যোগ হচ্ছে দার্শনিক পদ্ধতির মাধ্যমে জানা। ব্রহ্ম কি এবং ব্রহ্ম কি নয় সে সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া। নেতি নেতি। সেটি হচ্ছে জ্ঞানযোগ। ঠিক যেমন বেদান্ত সূত্র হচ্ছে জ্ঞানযোগ। তোমরা বেদান্তসূত্র পড়লে সেখানে পাবে যে তাতে বলা আছে জন্মাদি অস্য যতঃ (ভাগবত ১.১.১) তারা একটি ইঙ্গিত দেয় যে পরম ব্রহ্ম বা পরম সত্য হলেন তিনি যার থেকে সমস্ত কিছু উৎপন্ন হয়েছে। এখন আমাদের এটি বুঝতে হবে যে সেটি কি। পরম সত্যের প্রকৃতিটি কেমন তা শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে । শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম শ্লোকে পরম সত্য সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ জন্মাদি অস্য যতোহন্বয়াদ ইতরতঃ চার্থেষু অভিজ্ঞঃ স্বরাট (ভাগবত ১.১.১) পরম সত্য হচ্ছেন সমস্ত উৎপন্ন বস্তুর পরম কারণ , তারপর তার লক্ষণগুলো কি কি? ভাগবতে বলা হয়েছে তিনি অবশ্যই চেতন হবেন, তিনি কোন মৃত বা জড় নন। তিনি অবশ্যই চেতন বস্তু হবেন। এবং কেমন ধরণের চেতন। হন্বয়াদ ইতরতঃ চার্থেষু ঠিক যেমন আমি চেতন বা জ্ঞানবান, তুমিও চেতন বা জ্ঞানবান। কিন্তু আমি আমার সম্পর্কে জানি না যে আমার শরীরে কতগুলো লোম রয়েছে। আমি দাবী করছি এটি আমার মাথা। কিন্তু যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় "আপনি কি জানেন আপনার শরীরে কতগুলো লোম বা চুল রয়েছে?" সেই ধরণের জ্ঞান কোন জ্ঞান নয়। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে ভগবান বা পরম বস্তু তিনি সবকিছুই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জানেন। আমি জানি আমি খাচ্ছি। কিন্তু আমি এটি জানি না যে কিভাবে এই খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া আমার সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করছে। এটি কিভাবে খাদ্য থেকে রক্তে রূপান্তরিত হচ্ছে, কিভাবে তা কাজ করছে, কিভাবে তা শিরায় শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। আমি এর কিছুই জানি না। কিন্তু ভগবান তিনি সবকিছুই জানেন। তাঁর সৃষ্টির প্রতিটি কোণায় কোণায় কি ঘটছে তিনি তার সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অবগত আছেন। তাই ভাগবত ব্যাখ্যা করছেন, সেই পরম সত্য যার থেকে সবকিছুই নির্গত হয়েছে তিনি হলেন পরম জ্ঞানী। জ্ঞানী। অভিজ্ঞঃ মানে জ্ঞানী।

তাহলে এবার তুমি হয়তো প্রশ্ন করবে যে "তিনি যেহেতু এতোই শক্তিশালী, সবকিছুই জানেন, তিনি নিশ্চয়ই তা সেই রকম কোন উৎস থেকে শিখেছেন... " না। আমরা বলি যে যদি কেউ অন্য কারো থেকে জ্ঞান গ্রহণ করে থাকে, তার মানে সে ভগবান নয়। স্বরাট। নিজে নিজেই। তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ। এই হচ্ছে জ্ঞানযোগ। প্রকৃতিটি কি সে সম্পর্কে অধ্যয়ন... শুধু এটি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা কর যে , যেই পরম বস্তু থেকে সমস্তকিছু সৃষ্টি হয়েছে তার প্রকৃতিটি কেমন হওয়া উচিৎ। সেইটিই শ্রীমদ্ভাগবতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের পরম সমন্বয়। হ্যাঁ। জ্ঞানযোগের পন্থা মানে হচ্ছে পরম সত্যের অনুসন্ধান করা অথবা দার্শনিক পন্থার দ্বারা পরম সত্যের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করা। একে বলা হয় জ্ঞানযোগ। আর আমাদের ভক্তিযোগ হচ্ছে একই পদ্ধতি, লক্ষটি একই। কেউ ওখানে দার্শনিক জ্ঞানের মাধ্যমে পরম সত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, কেউ বা সেই পরম সত্যে মনোনিবেশ করতে চেষ্টা করছে, আর অন্যরা, ভক্তরা সেই পরম পুরুষ ভগবানের সেবায় যুক্ত আছেন যাতে তিনি তাঁকে প্রকাশ করেন। একটি পন্থা হচ্ছে আরোহ পন্থার দ্বারা জানা, আর আরেকটি হচ্ছে অবরোহ পন্থা। ঠিক যেমন অন্ধকারে, যদি তুমি, সূর্য কি বস্তু, তা আরোহ পন্থার দ্বারা জানতে চাও, খুব শক্তিশালী কোন বিমানে বা স্পুটনিক-এ চড়ে জানতে চাও, তাহলে সারা আকাশ ঘুরে বেড়াও, তুমি দেখতেই পাবে না। কিন্তু অবরোহ পন্থা হচ্ছে, যখন সূর্য উঠবে, তুমি সঙ্গে সঙ্গেই তা বুঝতে পারবে। আরোহ পন্থা- আমার প্রচেষ্টা, আরোহ পন্থা। ঠিক যেমন আমার পিতা বলেছেন মানুষ মরণশীল। আমি তা মেনে নিয়েছি। কিন্তু তুমি যদি চাও যে সেইটি গবেষণা করে দেখবে, তাহলে গবেষণা কর। লক্ষ লক্ষ মানুষকে তোমার পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে ওরা আসলেই মরণশীল না কি অমর। আর সেইটি করতে বহুকাল সময় লাগবে। কিন্তু যদি তুমি উচ্চতর কর্তৃপক্ষের থেকে জ্ঞানটি গ্রহণ কর যে মানুষ মরণশীল, তাহলেই তোমার জ্ঞানটি পরিপূর্ণ।

অথাপি তে দেব-পদাম্বুজদ্বয়প্রসাদলেশানুগৃহীত এব হি... জানাতি তত্ত্বং ভগবন্মহিমাম্নো ন চান্য একোহপি চিরাং বিচিন্বান্ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০.১৪.২৯) অতএব বলা হয়েছে, "হে ভগবান, যিনি আপনার সামান্যতম কৃপাও লাভ করেছেন তিনি শীঘ্রই আপনাকে জানতে পারেন।" আর যারা আরোহ পন্থার দ্বারা আপনাকে জানতে চেষ্টা করছেন, তারা তাদের জল্পনা কল্পনা দিয়ে লক্ষ লক্ষ বছর ধরেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তারা কখনই আপনাকে বুঝতে পারবে না।" তারা কোনদিনই আপনাকে বুঝতে সমর্থ হবে না। তারা কেবল হতাশা এবং সংশয়ই লাভ করবে। "ওহ ভগবান শুন্য।" ব্যাস, শেষ। যদি ভগবান শুন্যই হবেন তাহলে সেই শুন্য থেকে কিভাবে এতো সমস্ত রূপ সৃষ্টি হল? ভগবান শুন্য নন। ভাগবতে বলা হয়েছে, বেদান্তে বলা হয়েছে, জন্মাদি অস্য যতঃ সবকিছুই ভগবানের থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এখন আমাদের এটি বুঝতে হবে যে তা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে। সেইটিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কি ভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কিভাবে তা জানা সম্ভব। এই হল বেদান্ত সূত্র। বেদান্ত মানে চরম জ্ঞান। বেদ মানে জ্ঞান এবং অন্ত মানে চরম। অতএব বেদান্ত মানে পরম জ্ঞান। পরম জ্ঞান হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান।