BN/Prabhupada 1067 - ভগবদ্গীতার বাণী অবশ্যই ইচ্ছামত ব্যাখ্যা ও খেয়াল খূশী মতো মতবাদ না দিয়ে গ্রহণ করতে হবে

The printable version is no longer supported and may have rendering errors. Please update your browser bookmarks and please use the default browser print function instead.


660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

ভগবদ্গীতার বাণী আমাদেরকে অবশ্যই ইচ্ছামত ব্যাখ্যা না করে, খেয়াল খুশী মত বা্দ না দিয়েই গ্রহণ করতে হবে এখানে জীবও তার ক্ষুদ্র সত্তা নিয়ে পূর্ণ। স্বয়ং সম্পুর্ণ ভগবানের সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান অপূর্ণ, তাই আমরা আমাদের অপূর্ণতা অনুভব করি।

ভগবৎ-তত্ত্বজ্ঞানের পূর্ণ প্রকাশ হয়েছে বেদে এবং বৈদিক জ্ঞান পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়েছে ভগবদ্গীতাতে। বেদের সমস্ত জ্ঞানই অভ্রান্ত। এখানে বিভিন্ন উদাহরণ আছে, আমরা কিভাবে গ্রহণ করতে পারি বৈদিক জ্ঞান যে অভ্রান্ত। উদাহরণ স্বরূপ, হিন্দুরা জানেন যে, বেদ পূর্ণ এবং অভ্রান্ত, এখানে একটি নগন্য উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। যেমন গোময়। গোময় হলো পশুর মল। স্মৃতি অর্থাৎ বৈদিক অনুশাসন অনুযায়ী, পশুর মল অপবিত্র এবং তা স্পর্শ করলে স্নান করে পবিত্র হতে হয়। তাতেই বলা হচ্ছে যে, গোময় পশুর মল হলেও তা পবিত্র। এমনকি কোন স্থান যদি অপবিত্র থাকে, তবে সেখানে গোময় লেপন করলে তা পবিত্র হয়ে যায়। এখন কেউ তর্ক করতে পারে এটা কিভাবে হয়, যে এক জায়গায় বলা হয়েছে পশুর মল অপবিত্র, আবার অন্যত্র বলা হয়েছে গোময়ও পশুর মল, ইহা পবিত্র, সুতরাং ইহা পরষ্পর বিরোধী। বস্তুত, এটা পরষ্পরবিরোধী উক্তি বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বৈদিক অনুশাসন বলেই এটি গ্রহণ করা হয়েছে। এবং এটি গ্রহণ করে কেউ ভুল করেছে বলা হয় না। আধুনিক বিজ্ঞানের একজন রসায়নবিদ ডঃ লাল মোহন ঘোষাল এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনে পেয়েছেন, তিনি অতি সুক্ষাতিসুক্ষ রূপে বিশ্লেষনে করে দেখেছেন যে গোময়ে সব কটি জীবানুনাশক গুণ বর্তমান রয়েছে। অনুরূপভাবে তিনি কৌতুহলী হয়ে গঙ্গার পবিত্র জলকে বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং আমার অভিজ্ঞতা এই যে বৈদিক জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে অভ্রান্ত কারণ বৈদিক জ্ঞান সব রকম সন্দেহ ও ভ্রান্তির অতীত। সুতরাং, ভগবদ্গীতা হচ্ছে সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ। সুতরাং বৈদিক জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে অভ্রান্ত। ইহা প্রকৃত গুরু-শিষ্য পরম্পরার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছে।

অতএব বৈদিক জ্ঞান নিয়ে গবেষনা চলে না। গবেষণা বলতে যা বোঝায়, তা ত্রূটিপূর্ণ কারণ ত্রূটিপূর্ণ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ঐ গবেষণা হয়ে থাকে। তাই গবেষণালব্ধ ফলাফলও ত্রূটিপূর্ণ। ইহা ত্রূটিহীন হতে পারে না। ত্রূটিহীন, অভ্রান্ত জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে যা ভগবদ্গীতায় বর্ণিত হয়েছে, সবেমাত্র আমরা শুরু করেছি, এবং পরম্পরাপ্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ (ভ. গী. ৪/২)। আমাদেরকে সঠিক উৎস থেকে এই জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে যার উৎস হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান এবং যা গুরু শিষ্য পরম্পরাক্রমে সম্পূর্ণ অপরিবর্তিতভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। সুতরাং স্বয়ং ভগবান কর্তৃক ভগবদ্গীতা জ্ঞান প্রদান করেন এবং অর্জুন, আমি বলতে চাচ্ছি, শিষ্যরূপে ভগবদ্গীতার জ্ঞান আহরণ করেন, তিনি বাদানুবাদ না করে ভগবানের মুখ-নিঃসৃত বাণীকে পরম সত্য বলে গ্রহণ করেছিলেন। ভগবদ্গীতাকে আংশিকভাবে গ্রহণ করলে হবে না, আমরা বলতে পারি না যে ভগবদ্গীতার একটি অংশ আমরা গ্রহণ করব, আর বাকিটা গ্রহণ করব না। উহা গ্রহণ করা হয়নি। ভগবদ্গীতার বাণী আমাদের সম্পূর্ণ অপরিবর্তিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। কিংবা ইচ্ছামত ব্যাখ্যা না করেই গ্রহণ করতে হবে। কারণ বৈদিক জ্ঞান সম্পূর্ণ অভ্রান্ত রূপে গ্রহণ করা উচিত। বৈদিক জ্ঞান অপ্রাকৃত উৎস থেকে গ্রহণ করতে হবে এবং এর প্রথম বাণী নিঃসৃত হয়েছিল স্বয়ং ভগবানের কাছ থেকেই। ভগবানের নিঃসৃত বাণীকে বলা হয় অপৌরুষেয়, তার মানে-কোন জড় জাগতিক লোক যিনি চারটি ত্রূটি পূর্ণ এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক নিঃসৃত হয়নি। জাগতিক মানুষের ইন্দ্রিয় চারটি ত্রূটি দ্বারা পরিপূর্ণ, সেগুলো হলো ১)সাধারণ মানুষ অবধারিতভাবে ভুল করে (ভ্রম), ২) সে মায়ার দ্বারা আচ্ছন্ন (প্রমাদ), ৩)সে অন্যকে প্রতারণা করতে চেষ্টা করে (বিপ্রলিপ্সা), এবং সে তার ত্রূটিপূর্ণ ইন্দ্রিয় দ্বারা সীমিত (কর্নাপাটব)। এই চারটি ত্রূটি যুক্ত ব্যক্তি, পরমতত্ত্ব জ্ঞানের অভ্রান্ত তথ্য প্রদান করতে পারে না। বেদ উহার মতো নয়। বেদ ভগবান কর্তৃক সৃষ্ট জীব ব্রহ্মার হৃদয়ে প্রদান করেছিলেন। এবং ব্রহ্মা তাঁর পুত্রগণ এবং শিষ্যকে প্রদান করেন। ঠিক যেভাবে পরমেশ্বর ভগবানের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন (অবিকৃতভাবে)।