BN/Prabhupada 1073 - যতদিন আমরা এই জড় জগতের উপর কর্তৃত্ব করার প্রবণতা ত্যাগ না করছি



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

যতদিন আমরা এই জড় জগতের উপর কর্তৃত্ব করার প্রবণতা ত্যাগ না করছি , ভগবদগীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ে জড় জগতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে,

উর্দ্ধমুলমধঃশাখমশ্বত্থং
প্রাহুর অব্যয়ম
ছন্দাংসি যস্য পর্ণানি
যস তং বেদ স বেদ-বিত
(ভ.গী. ১৫.১)।

জড় জগতের বর্ননা ভগবদগীতার পঞ্চদশ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এমন একটি বৃক্ষ রূপে যার মূল উপরের দিকে, উর্দ্ধ মুলম। উপরের দিকে মূল, এমন বৃক্ষের অভিজ্ঞতা কি আপনাদের কারো আছে? প্রতিফলন রূপে এমন বৃক্ষের অভিজ্ঞতা আমরা পাই। কোনো নদী অথবা জলাধারের তীরে দাঁড়িয়ে, আমরা দেখতে পারি যে, জলাধারের তীরবর্তী বৃক্ষটি জলে উর্দ্ধ দিকে মূল ও শাখা প্রশাখা নিম্নবর্তী অবস্থায় প্রতিফলিত হয়। ঠিক, এমনিভাবে, এই জড় জগতটি প্রকৃতপক্ষে চিজ্জগতের প্রতিফলন। ঠিক যেভাবে, জলাধারের তীরবর্তী বৃক্ষটি জলের নিচে নিম্নবর্তী অবস্থায় দেখা যায়। ঠিক, এমনিভাবে এই জগতটিকে বলা হয় প্রতিবিম্ব, প্রতিবিম্ব... যেভাবে প্রতিবিম্বে বাস্তবতা থাকে না, কিন্ত, একই সময়ে আমরা প্রতিবিম্ব থেকে বুঝতে পারি, কোথাও বাস্তব বস্তুটি রয়েছে। প্রতিবিম্বের উদাহরণ, মরুভূমিতে জলের প্রতিবিম্ব বোঝায় যে, মরুভূমিতে জল নেই, কিন্ত অন্য কোথাও জল রয়েছে। ঠিক এমনিভাবে, চিজ্জগতের প্রতিফলনে অথবা এই জড় জগতে, নি:সন্দেহে কোনো সুখ নেই। কিন্ত, প্রকৃত জল বা প্রকৃত সুখ চিজ্জগতে পাওয়া যায়। ভগবান উপদেশ দিচ্ছেন যে, যে কেউ নিম্নবর্ণিত পন্থায় চিজ্জগতে উন্নীত হতে পারে,

নির্মাণ-মহা। নির্মান-মোহ জিত সঙ্গ-দোষ
অধ্যাত্ম-নিত্যা বিনিভৃত্ত-কামা:
দ্বন্দ্ব বিমুক্তা সুখ দুখ সমজ্ঞৈ
গচ্ছন্তি অমূঢ়া পদম অব্যয়ং তৎ
(ভ.গী. ১৫.৫)

সেই পদম অব্যয়ম, সেই নিত্য জগত, কেবল মাত্র তিনিই লাভ করবেন, যিনি " নির্মাণ মোহ। নির্মাণ মোহ। নির্মাণ মানে আমরা উপাধির পিছনে ছুটছি। আমরা কৃত্রিম উপাধি চাই। কেউ শিক্ষক হতে চায়, কেউ প্রভু হতে চায়, কেউ রাষ্ট্রপতি হতে চায়, কেউ বা ধনী হতে চায়, আবার অন্য কেউ অন্য কিছু, যেমন রাজা হতে চায় | এগুলো সবই উপাধি, যতদিন আমাদের এই উপাধির প্রতি আসক্তি থাকবে... যেহেতু এই সমস্ত উপাধি জড় শরীরের সাথে সম্পর্কিত এবং আমরা এই শরীর নই। এই হচ্ছে ভগবদ উপলব্ধির প্রারম্ভিক স্তর। সেজন্য কারোরই উপাধির প্রতি আসক্ত হওয়া উচিত নয়। এবং জিত-সঙ্গ-দশা, সঙ্গ-দশা। এখন আমরা জড়া প্রকৃতির তিনটি গুনের দ্বারা আবদ্ধ। এবং যদি আমরা ভগবত সেবার দ্বারা এই আসক্তি থেকে মুক্ত হই.... যতদিন আমরা ভগবত সেবার দ্বারা অনুপ্রানিত না হব, আমরা জড়া প্রকৃতির তিনটি গুন থেকে মুক্ত হতে পারব না। সেজন্য ভগবান বললেন, বিনিবৃত্ত-কামা: , এই সব উপাধি বা আসক্তি আমাদের কামনা বাসনার প্রতিফলন। আমরা জড়া প্রকৃতির উপর প্রভুত্ব করতে চাই। তাই, যতদিন আমরা এই জড়া প্রকৃতির উপর প্রভুত্ব করার প্রবণতা ত্যাগ না করছি, ততদিন আমাদের ভগবানের রাজ্য, সনাতন ধামে প্রবেশের অনুমোদন নেই। দ্বন্দৈ বিমুক্তা সুখ দুঃখ সমজ্ঞৈ গচ্ছন্তি অমূঢ়া পদম অব্যয়ং তত্ (ভ.গী. ১৫.৫) সেই নিত্য জগত, যা এই জড় জগতের মত নশ্বর নয়, কেবলমাত্র অমুঢ়া লাভ করতে পারবেন। অমুঢ়া মানে মোহগ্রস্থ। যিনি এই মিথ্যা জড় ভোগের দ্বারা মোহগ্রস্থ নন। এবং যিনি ভগবদ সেবায় নিয়োজিত, তিনি সেই নিত্য জগতের প্রবেশাধিকারী। এবং সেই নিত্য জগতে সূর্য, চন্দ্র বা বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। এটা হচ্ছে চিজ্জগতে প্রবেশের একটা ঝলক।