BN/Prabhupada 0061 - এই দেহটি একটি চামড়া, হাড় ও রক্তের থলে মাত্র



Northeastern University Lecture -- Boston, April 30, 1969

আমার প্রিয় ছেলে এবং মেয়েরা, তোমাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই প্রবচনে অংশ নেয়ার জন্য। আমরা এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রসার করছি কেন না সারা জগত জুড়ে এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এই পন্থাটিও অত্যন্ত সরল। সেটিই হচ্ছে বাড়তি সুবিধা। প্রথমে এটি বোঝার চেষ্টা কর যে চিন্ময় স্তরটি কি। আমাদের জীবনব্যবস্থার কথা বলতে গেলে এটি হচ্ছে একটি ভিন্ন ধরণের স্তর। সুতরাং আমাদেরকে সবার প্রথমে চিন্ময় স্তরে ওঠতে হবে। তারপর আসবে চিন্ময় ধ্যানের প্রশ্ন। ভগবদগীতায় তৃতীয় অধ্যায়ে তোমরা দেখবে যে বদ্ধ জীবনের বিভিন্ন অবস্থার কথা আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে ইন্দ্রিয়ানি পরাণ্যাহুঃ (গীতা ৩.৪২)। সংস্কৃত ইন্দ্রিয়াণি। প্রথম হচ্ছে দেহগত জীবনের ধারণা। এই জড় জগতে আমরা সকলেই দেহাত্মবুদ্ধির ধারণার বশবর্তী। আমি ভাবছি 'আমি ভারতীয়', তুমি ভাবছ তুমি আমেরিকান। কেউ ভাবছে, 'আমি রাশিয়ান' কেউ আবার ভাবছে 'আমি অন্য একটা কিছু' সুতরাং সকলেই ভাবছে "আমি হলাম এই দেহটি" এটি হচ্ছে একটি মানদণ্ড বা স্তর। একে বলা হয় ইন্দ্রিয়ের স্তর কারণ যতক্ষণ আমাদের এই দেহাত্মবুদ্ধির ধারণা থাকছে, আমরা ভাবি সুখ মানে হল ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করা। ব্যাস। সুখ মানে হল ইন্দ্রিয় তৃপ্তি কারণ দেহ মানে ইন্দ্রিয়। সুতরাং ইন্দ্রিয়াণি পরাণ্যাহুঃ ইন্দ্রিয়েভ্যঃ পরম্ মনঃ (গীতা ৩/৪২) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন জীবনের জড় ধারণায় বা দেহাত্মবুদ্ধির ধারণায় আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেটিই চলছে। বর্তমানে নয়, এমন কি সৃষ্টির শুরু থেকেই। এটিই হচ্ছে রোগ যে আমি ভাবছি "আমি হলাম এই দেহটি" শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, যস্যাত্মবুদ্ধিঃ কুণপে ত্রিধাতুকে স্বধীঃ কলত্রাদিষু ভৌম ইজ্যধিঃ (ভাগবত ১০/৮৪/১৩) "যে ব্যক্তি এই জড় ধারণায় রয়েছে যে, "আমি হলাম এই দেহ" আত্মবুদ্ধি কুণপে ত্রিধাতু। আত্মবুদ্ধি মানে হল এই অস্থিচর্মের থলেটিকে স্বরূপ বলে মনে করা। এটি একটি থলে। এই দেহটি হচ্ছে অস্থি, চর্ম, রক্ত, মল, মূত্র, ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর একটি থলে। বুঝলে? কিন্তু আমরা ভাবছি যে, "আমি হচ্ছি অস্থি, চর্ম, মল মূত্রের একটি থলে। এটিই হচ্ছে আমার সৌন্দর্য। এটিই আমাদের সবকিছু।"

এ সম্পর্কে অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প রয়েছে। অবশ্য আমাদের সময়ও খুব কম। তবুও আমি একটি গল্প বলতে ইচ্ছা করছি। একজন লোক একটি সুন্দরী মেয়ের প্রতি আসক্ত ছিল। মেয়েটি তাতে রাজী ছিল না। কিন্তু ছেলেটি নাছোড়বান্দা ছিল। ভারতবর্ষে মেয়েরা তাদের সতীত্ব খুব কঠোরভাবে রক্ষা করে। মেয়েটি রাজী ছিল না। তাই সে বলল, "ঠিক আছে, আমি রাজী। আপনি এক সপ্তাহ পরে আসুন"। মেয়েটি নির্দিষ্ট সময় করে বলে দিল। ছেলেটি খুব খুশী হল। মেয়েটি সাতদিন ধরে রেচক ঔষধ বা জোলাপ খেতে লাগল। এইভাবে সে দিনরাত কেবল মলত্যাগ আর বমি করতে লাগলো । আর সেই বিষ্ঠা এবং বমন সে সুন্দর সুন্দর পাত্রে ভরে রাখল। যখন সেই নির্ধারিত সময় এলো, সেই ছেলেটি মেয়েটির কাছে এলো। মেয়েটি তখন দরজার কাছে বসে ছিল। ছেলেটি জিজ্ঞেস করল, "ঐ মেয়েটি কোথায়?" সে উত্তর দিল, "আমিই সেই মেয়েটি"। "না, না। তুমি নও। তুমি খুব কুৎসিত। ঐ মেয়েটি খুব সুন্দরী ছিল। তুমি সেই মেয়েটি নও।" "না, আমিই সেই মেয়েটি। কিন্তু আমি আমার সৌন্দর্যটি আলাদা পাত্রে ভরে রেখেছি।" "সেটি আবার কি?" মেয়েটি দেখালো, " এই হল আমার সৌন্দর্য। এই বিষ্ঠা আর বমি। এই সেই বস্তু"। আসলে যে কেউই খুব বলিষ্ঠ বা সুন্দরী হতে পারে - যদি সে তিন-চার বার পায়খানা করে, তবে তৎক্ষণাৎ সবকিছু পাল্টে যাবে। আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, শ্রীমদ্ভাগবতে যেমনটা বলা হয়েছে, যে এই দেহগত ধারণার জীবন খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। যস্যাত্মবুদ্ধিকুণপে ত্রিধাতুকে (ভাগবত ১০/৮৪/১৩)