BN/Prabhupada 0360 - আমরা সরাসরি কৃষ্ণের নিকটে যাই না, আমাদের কৃষ্ণের দাস থেকে সেবা শুরু করা উচিত



Lecture on SB 7.9.42 -- Mayapur, March 22, 1976

তাই এখানে, কো নু অত্র তে অখিল-গুরো ভগবান প্রয়াস (শ্রী.ভা ৭.৯.৪২)। তাই প্রত্যেকের অনুগ্রহের জন্য কিছু অতিরিক্ত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, কিন্তু কৃষ্ণের প্রয়োজন নেই। এই হচ্ছে কৃষ্ণ। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তাই করতে পারেন। তিনি অন্য কারো উপর নির্ভর নয়। অন্যরা কৃষ্ণের অনুমোদনের উপর নির্ভর করে, তবে কৃষ্ণকে কারো অনুমোদন প্রয়োজন হয় না। তাই প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন ভগবান প্রয়াস। প্রয়াস, উপদেশ দেওয়া হচ্ছে যে প্রয়াস না করার জন্য, বিশেষ করে ভক্তদের। এমন কোন প্রয়াস করার প্র‍য়োজন নেই, যাতে খুব কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। না। আমাদের শুধুমাত্র সরল জিনিস করা উচিত যেটা সম্ভব। অবশ্য, একজন ভক্ত ঝুঁকি নেয়। যেমন হনুমান। তিনি ভগবান রামচন্দ্রের সেবক ছিলেন। ভগবান রামচন্দ্র সীতাদেবীর তথ্য চাইছিলেন। তাই তিনি বিচার করেছিলেন, "আমি সমুদ্রের ওপাশে লঙ্কায় কিভাবে যাব?" তিমি শুধুমাত্র, ভগবান রামচন্দ্রকে বিশ্বাস করেছিলেন,"জয় রাম," বলে ঝাপ দিলেন। ভগবান রামচন্দ্রকে একটা সেতু নির্মাণ করার ছিল। অবশ্য এই সেতুটি অদ্ভুত ছিল, কারণ বানরেরা পাথর এনেছিল। তারা তা সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছিল, কিন্তু পাথর গুলো ভাসছিল। সুতরাং কোথায় তোমার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি? হ্যাঁ। পাথর জলে ভাসছে। এটা বিজ্ঞানীরা করতে পারবে না। কিন্তু ভগবান রামচন্দ্রের ইচ্ছা ছিল, পাথর জলে ভাসবে। অন্যথায় সমুদ্রের মধ্যে কতগুলো পাথর ছুঁড়ে ফেলতে হবে যাতে সেটা একটি সেতুর স্তরে আসে? ও এটা সম্ভব ছিল না। এটা সম্ভব, সবকিছুই সম্ভব। কিন্তু রামচন্দ্র, ভগবান রামচন্দ্র, চেয়েছিলেন, "এটা হয়ে যাক। ওরা পাথর নিয়ে আসুক এবং তা ভাসবে। তারপর আমরা সমুদ্র পাড়ি দেব।" কোন পাথর ছাড়াই তিনি যেতে পারেন, কিন্তু তিনি বানরদের কিছু সেবা চাইছিলেন। সেখানে অনেক বাদর ছিল। বড় বড় বাদরের, বড় বড় পেট, লঙ্কা ডিঙ্গাতে, মাথা করে হেট। সেখানে অনেক বাদর ছিল, কিন্তু ঠিক হনুমানের মতো সক্ষম ছিল না। তাই জন্য তাদেরকে কিছু সু্যোগ দেওয়া হয়েছিল যে," তোমরা কিছু পাথর আনো। তোমরা হনুমানের মতো লাফ দিতে পারবে না, তাই তোমরা পাথর আন, এবং আমি পাথরকে ভাসতে বলব।"

তাই কৃষ্ণ যা কিছু করতে পারেন। অঙ্গানি যস্য সকলেন্দ্রিয়-বৃত্তিমন্তি। তিনি সব কিছু করতে পারেন। আমরা তার কৃপা ছাড়া কিছুই করতে পারি না। তাই প্রহ্লাদ মহারাজ অনুরোধ করেছিলেন যে "যদি আপনি আমাদের উপর কৃপা করেন, এটা আপনার কাছে কোন বড় ব্যাপার নয়, কারন আপনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। কারণ আপনি সৃষ্টি, স্থিতী প্রলয়ের কারন, তাই এটা আপনার কাছে কঠিন কিছু নয়। এটা ছাড়া, মুঢ়েষু বৈ মহদ্‌নুগ্রহ আর্ত বন্ধু (শ্রী.ভা ৭.৯.৪২)। সাধারণত, যারা আর্তবন্ধু, পীড়িত মানুষদের বন্ধু, তারা বিশেষ করে মুঢ়দের, মূর্খদের কৃপা করেন। কৃষ্ণ সেই প্রয়োজনে আসেন, কারণ আমরা সবাই মূঢ়। দুষ্কৃতিনো। ন মাং দুষ্কৃতিনো মূঢ়া প্রপ্যদন্তে। সাধারণত আমরা পাপী, কারন আমরা মূঢ়, আমরা কৃষ্ণতে আত্মসর্মপন করি না। ন মাং প্রপ্যদন্তে। যে ব্যক্তি কৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণ করে না, সে একজন দুষ্কৃতিনো, মূঢ়, নরাধাম, মায়াপহৃত-জ্ঞানা। কৃষ্ণের ইচ্ছা ছাড়া স্বাধীনভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। এটা সম্ভব নয়। এইজন্য কৃষ্ণের ইচ্ছা ছাড়া যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে, তারা সব মূঢ়, সব বোকা। কৃষ্ণ কি বলছে তা তারা গ্রহণ করবে না এবং তারা কৃষ্ণ ছাড়া কিছু আইন স্থাপন করার চেষ্টা করছে। "ভগবানের প্রয়োজন নেই।" বেশীরভাগ বিজ্ঞানীরা এইরকম বলে। ""এখন আমরা বিজ্ঞান পেয়েছি, আমরা সবকিছু করতে পারি।" তারা মূঢ়। এটা সম্ভব নয়। স্বাধীনভাবে তুমি কৃষ্ণের ইচ্ছা ছাড়া কিছু করতে পারবে না।

তাই এটা ভাল যে সর্বদা কৃষ্ণের কৃপা পেতে চেষ্টা করতে হবে। এবং তুমি কৃষ্ণের কৃপা সরাসরি কামনা করতে পারো না। এটা আরেকটা ব্যাপার। কিম তেনে তে প্রিয়-জ্ঞানং অনুসেবতাং ন (শ্রী.ভা ৭.৯.৪২)। আপনি তাঁর ভক্তের সহায়তা ছাড়া কৃষ্ণের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না। যস্য প্রসাদাদ ভগবৎ-প্রাসাদৌ। আপনি সরাসরি ভগবানের ইচ্ছা পেতে পারেন না। এটা আরেকটা বোকামি। আপনাকে অবশ্যই কৃষ্ণের সেবকের মাধ্যমে যেতে হবে। গোপীভর্তূর পদ-কমলয়োর দাস-দাসানুদাস। এটা আমাদের পদ্ধতি। আমরা সরাসরি কৃষ্ণের কাছে যাই না। আমরা কৃষ্ণের সেবকের সেবা প্রথমে শুরু করি। এবং কে কৃষ্ণের সেবক? যে আরেকজন কৃষ্ণের সেবক হবে। একেই বলে দাস- দাসানুদাস। কেউই স্বাধীনভাবে কৃষ্ণের সেবক হতে পারে না। এটা আরেকটা বোকামি। কৃষ্ণ কারোর সেবা সরাসরি গ্রহন করেন না। না, এটি সম্ভব নয়। তোমাকে অবশ্যই আসতে হবে সেবকের সেবক হইতে (চৈ.চ.মধ্য ১৩.৮০)। একে বলে পরম্পরা পদ্ধতি। পরম্পরা পদ্ধতির মাধ্যমে যেমন তুমি জ্ঞান অর্জন করো... কৃষ্ণ ব্রহ্মাকে বলেছিলেন, ব্রহ্মা নারদকে বলেছিলেন, নারদ ব্যাসদেবকে বলেছিলেন এবং এইভাবে এই জ্ঞান আমরা অর্জন করছি। যেমন কৃষ্ণ...ভগবদগীতা কৃষ্ণ দ্বারা অর্জুনকে বলা হয়েছিল।

তাই যদি আমরা অর্জুনের মতো এই পদ্ধতি বোঝার চেষ্টা না করি, তাহলে তুমি ভগবানকে বুঝতে সক্ষম কখনো হতে পারবে না। এটা কখনো সম্ভব নয়। আপনাকে সেই প্রক্রিয়াকে মানতে হবে যেটা অর্জুন স্বীকার করেছিল। অর্জুন এটা বলেছিল, "আমি আপনাকে পরম ভগবান বলে স্বীকার করছি, কারন ব্যাসদেব গ্রহন করেছেন, অসিত গ্রহন করেছেন, নারদ গ্রহন করেছেন।" একই জিনিস। আমাদেরকে কৃষ্ণকে বুঝতে হবে। আমরা সরাসরি বুঝতে পারবো না। সেইজন্য এই ধূর্ত ব্যাখা দ্বারা কৃষ্ণকে যারা বোঝার চেষ্টা করে, তারা সকলে ধূর্ত। তারা কৃষ্ণকে বুঝতে পারে না। হতে পারে তারা তথাকথিত খুব বড় মানুষ। কেউই বড় মানুষ নয়। তারা স বৈ... স্ব-বিড্‌-বরাহোষ্ট্র-খরৈ সংস্তুত: পুরুষ: পশু: (শ্রী.ভা.২.৩.১৯)। পুরুষ: পশু:. এই বড়, বড় পুরুষ, যারা কিছু দুষ্ট লোকের দ্বারা প্রশংসিত, এই সব বড়, বড় নেতারা, তারা কি? কারণ ওরা কৃষ্ণের ভক্ত নয়, ওরা নেতৃত্ব দিতে পারে না। তারা আমাদের বিপথে চালিত করে। তাই আমরা তাদের দুষ্ট বলি। এটিই হচ্ছে মানদণ্ড। এই মান গ্রহণ করুন আপনি যদি কোনো কিছু কারো কাছ থেকে শিখতে চান, প্রথমে দেখুন যে তিনি কৃষ্ণের ভক্ত কিনা। অন্যথায় তার থেকে কিছু শিখবেন না। আমরা এই ধরনের ব্যাক্তির কাছ থেকে কোন শিক্ষা নিই না, "হয়ত," "মনে হয়", এই ধরণের ব্যক্তি নয়। না। আমাদের এই ধরনের বৈজ্ঞানিক বা গণিতজ্ঞ চাই না। না। কৃষ্ণকে যে জানে, কৃষ্ণের যে ভক্ত। যিনি কৃষ্ণকথা বলতে গিয়ে অভিভূত হন, কেবল তাঁর থেকে শ্রবণ করুন। অন্যথায় সব বদমাশ।

আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।