BN/Prabhupada 0598 - আমরা বুঝতে পারবো না ভগবান কতো বিশাল। সেটি আমাদের সীমাবদ্ধতা



Lecture on BG 2.23 -- Hyderabad, November 27, 1972

সুতরাং প্রকৃতপক্ষে, পরম সত্যের চূড়ান্ত বা শেষ কথা হচ্ছে একজন ব্যক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যারা মূঢ় বা অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্‌ (শ্রীমদ্ভগবত গীতা ৯.১১)। " ওহ্‌ কৃষ্ণ? সে ভগবান হতে পারে, কিন্তু এখন সে মায়াকে আশ্রয় করে একজন ব্যক্তি রূপে প্রকাশিত হয়েছে।" এটি হচ্ছে মায়াবাদ দর্শন। তারা মায়াকে অধ্যয়ন করে; তারা ভগবানকেও মায়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। এই হচ্ছে মায়াবাদ দর্শন। কিন্তু ভগবান মায়া নন। ভগবান কখনও মায়া দ্বারা আবৃত হন না। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তেঃ (শ্রীমদ্ভগবত গীতা ৭.১৪)। " যদি কেউ আমার নিকট আত্মসমর্পণ করে তবে সে মায়ার কবল থেকে মুক্ত হতে পারে।" শ্রীকৃষ্ণ কি করে মায়াধীন হতে পারেন? এটা খুব একটা ভালো দর্শন নয়। শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণ করার মাধ্যমেই তুমি মায়ামুক্ত হতে পার। তাহলে সেই পরম ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণ কি করে মায়াধীন হতে পারেন? তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্, পরং ভাবমজানন্তো‌ (শ্রীমদ্ভগবত গীতা ৯.১১)। তারা জানেনা যে ভগবান কতোটা শক্তিশালী, ভগবান কতোটা ক্ষমতাবান। তারা পরম প্রভুর ক্ষমতাকে তাদের নিজেদের ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করছে। একটি ব্যাঙের দর্শন। ডঃ ব্যাঙ। ব্যাঙ ভাবছে, " আটলান্টিক মহাসাগর হয়ত আমার এই কূয়োটা থেকে আর একটু বড় হবে।" কারণ সে এটার মধ্যেই সবসময় বসবাস করে। কূপমণ্ডূক ন্যায়, এটি সংস্কৃত, এটিকে বলে কূপমণ্ডূক ন্যায়। কূপ মানে কূয়ো, আর মণ্ডূক মানে ব্যাঙ। ব্যাঙ আজীবন কূয়োর মধ্যে থেকে আর কেউ যদি তাকে বলে যে আরেকটি বিশাল জলরাশি আছে, যার নাম আটলান্টিক মহাসাগর। তখন সে শুধু পরিমাপ করে যে " এটা হয়তো আমার এই কুয়োটা থেকে আর অল্প একটু, অল্প একটু বড় হবে।" কিন্তু সে বুঝতে পারেনা যে সেটা কতো বিশাল। সুতরাং ভগবানও বিশাল। আমরা বুঝতে পারিনা যে ভগবান কতোটা বিশাল। এটি আমাদের মূর্খতা। আমরা শুধু পরিমাপ করছিঃ " তিনি হয়তো আমার থেকে এক ইঞ্চি বড় হবেন। অথবা আমার থেকে এক ফুট বড়।" এটি হচ্ছে মানসিক কল্পনা। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, মনুষ্যাণাম্‌ সহস্রেষু কশ্চিৎ যততি সিদ্ধয়েঃ (শ্রীমদ্ভগবতগীতা ৭.৩)। " হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কোন একজন পরম সত্যকে জানার মাধ্যমে তাঁদের জীবনকে সার্থক করার জন্য চেষ্টা করেন।" যততামপি সিদ্ধানাম্‌ কশ্চিৎ মাম্‌ বেত্‌তি তত্ত্বতঃ (শ্রীমদ্ভগবতগীতা ৭.৩)।

তাই ভগবান কে আমরা আমাদের মানসিক কল্পনার দ্বারা উপলব্ধি করতে পারবোনা। না আমরা পারব আত্মার পরিমাপ কতটুকু তা উপলব্ধি করতে। এটি সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদেরকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে জানতে হবে যে ভগবানের স্বরূপ কি, পরম সত্যের স্বরূপ কি, আত্মার স্বরূপ কি। আমাদেরকে শুনতে হবে। আমাদেরকে শ্রবণ করতে হবে। তাই বৈদিক সাহিত্যকে বলা হয় শ্রুতি। তুমি পরীক্ষণ চালাতে পারনা। এটি সম্ভব নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা ভাবে যে তারা পরীক্ষা করতে পারবে, তারা মানসিক কল্পনার দ্বারা পরম সত্যকে জানতে পারবে। ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছেঃ

পন্থাস্তু কোটিশত-বৎসর সংপ্রগম্যো
বায়োরথাপি মনসো মুনিপুঙ্গবানাম্‌
সোহপ্যস্তি যৎপ্রপদসীম্ণ্য়‌বিচিন্ত্যতত্ত্বে
গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌ তমহম্‌ ভজামি।
(ব্রহ্মসংহিতা ৫.৩৪)।

পন্থাস্তু কোটিশত-বৎসর সংপ্রগম্যো। যদি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তুমি আকাশে উন্নীত হতে থাক ভগবানকে খোঁজার জন্য, কোথায় ভগবান ......... পন্থাস্তু কোটিশত-বৎসর সংপ্রগম্যো বায়োরথাপি এই সাধারণ বিমানের সাহায্যে নয়, বায়ু বিমানে, বায়ুর গতিতে বা মনের গতিতে। মনের গতিবেগ সবচেয়ে দ্রুত। তুমি এখানে বসে আছ, যদি তোমার কোন চিন্তা আসে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তোমার মন লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে চলে যাবে। তাই মনের বিমানে হোক বা বায়ু বিমানে হোক, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ভ্রমন করেও তুমি তাঁকে খুঁজে পাবে না। পন্থাস্তু কোটিশত-বৎসর সংপ্রগম্যো বায়োরথাপি মনসো মুনিপুঙ্গবানাম্‌......... মুনিপুঙ্গবানাম। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, মহান মহান সাধু সন্তরা, তাঁরাও পারেন না।