BN/Prabhupada 0616 - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র - এটি স্বাভাবিক বিভাজন



Lecture at World Health Organization -- Geneva, June 6, 1974

মানব সমাজ যদি মহান আচার্যদের প্রদর্শিত পদাঙ্ক অনুসরণ না করে, মহান সন্তপুরুষদের, তাহলে অনেক বড় সমস্যা হবে। এবং সেটিই আসলে ঘটছে। ভগবদ্গীতায় যখন শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন কথোপকথন করছিলেন, অর্জুন যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থার কথা বলছিলেন, যে স্ত্রীলোকেরা সবাই বিধবা হয়ে যাবেন, তারা তাদের চরিত্র সমুন্নত রাখতে পারবেন না, এবং তারপর অধর্ম নীতিসমূহ বিস্তার লাভ করবে। সুতরাং তিনি বলেছিলেন, তিনি এইভাবে যুক্তি দেখাচ্ছিলেন যে,

অধর্মাভিভাবৎ কৃষ্ণ,
প্রদুষ্যন্তি কুল-স্ত্রীয়,
স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয়,
জায়তে বর্ণসঙ্করঃ
(গীতা ১.৪০)

বৈদিক সভ্যতা হচ্ছে বর্ণাশ্রম ধর্ম। বর্ণাশ্রম ধর্ম যদি যথাযথভাবে সংরক্ষিত না হয়, তাহলে আমন জনসংখ্যা বাড়বে যাদের বর্ণসঙ্কর বলা হয়, মিশ্র জনগণ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র - এটি স্বাভাবিক বিভাজন। সমাজকে অবশ্যই বিভাজিত হতে হবে... চাতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টং গুণকর্ম বিভাগশঃ (গীতা ৪.১৩)। (পাশ থেকে) কোনও প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক বিভাজন। ঠিক যেমন আপনারা আপনাদের দেহের মধ্যেও স্বাভাবিক বিভাজন পেয়েছেন। মাথা, বাহু, উদর, পা, ঠিক একইভাবে সামাজিক বিভাজনও রয়েছে। কেউ খুবই বুদ্ধিমান হন, কেউ আবার সামরিক মনোভাবাপন্ন, কেউ কেউ ব্যবসা ও শিল্পে আগ্রহী, আর কেউ কেউ থাকে যারা শুধু পেট পুরে খেতেই আগ্রহী। অতএব এরকম স্বাভাবিক বিভাজন রয়েছে। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, চাতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টং, যদি এই চাতুর্বর্ণং, এই বিভাজন ... সমাজের সবচাইতে বুদ্ধিমান মানুষেরা, তাঁদেরকে ব্রাহ্মণ করে তুলতে প্রশিক্ষিত করতে হবে। শমো দমো তিতিক্ষ আর্জবম্ জ্ঞানং বিজ্ঞানং আস্তিক্যম্ ব্রহ্ম-কর্ম-স্বভাবজম্। (গীতা ১৮.৪২) সামাজিন বিভাজন অবশ্যই থাকতে হবে। সবচাইতে বুদ্ধিমান শ্রেণির মানুষদের, বেদ অধ্যয়নে নিযুক্ত হওয়া উচিত এবং জ্ঞান অর্জন করা উচিত, আর সেই জ্ঞান মানব সমাজে ছড়িয়ে দেবে। যাতে করে সমাজের লোকেরা নির্দেশনা পেতে পারে, সমাজের শান্তিপূর্ণ অবস্থা বা প্রয়োজনমত কাজ করতে পারে। এই হচ্ছে নির্দেশ। ক্ষত্রিয়রা এই সমাজকে রক্ষা করার জন্য কাজ করা উচিত, সামরিক ক্ষমতা বা সামরিক মনোভাবাপন্ন। যখনই কোন বিপদ, আক্রমণ আসবে তাঁরা আমাদের সুরক্ষা দেবে। একইভাবে, এক ধরণের শ্রেণির লোক থাকবে যারা খাদ্যশস্য উৎপাদন ও গোরক্ষা করবে। কৃষি-গোরক্ষ-বাণিজ্যম্ বৈশ্যকর্ম-স্বভাবজম্ (গীতা ১৮.৪৪) আর বাকী যে সমস্ত লোকেরা যারা বুদ্ধিজীবী অথবা সামরিক-মনোভাবাপন্ন, অথবা খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারবে না, তারা এই তিন শ্রেণির লোকেদের সাহায্য করবে। তাদের বলা হয় শুদ্র। এই হচ্ছে সামাজিক বিভাজন। সুতরাং এই হচ্ছে বর্ণাশ্রম ধর্ম। ধর্ম শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ধর্ম মানে হচ্ছে পেশাগত কর্তব্য। ধর্ম মানে কোনও ধর্মীয় ভাবপ্রবণতা নয়। না। স্বাভাবিক বিভাজন এবং পেশাগত কর্তব্য।