BN/Prabhupada 0620 - আপনার গুণ ও কর্ম অনুসারে আপনি একটি নির্দিষ্ট কর্তব্যে নিয়োজিত আছেন



Lecture on SB 1.7.36-37 -- Vrndavana, September 29, 1976

শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণই আপনাকে রক্ষা করতে পারেন, আর কেউই নয়। যদি আপনি এই কথাটি জানতে পারেন, তাহলে আপনি প্রমত্ত নন। আর যদি আপনি এই কথাটি না জানেন, তাহলে আপনি একটি বদমাশ, আপনি প্রমত্ত। কেবল শ্রীকৃষ্ণ। তাই শ্রীকৃষ্ণ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। "সর্বধর্মাণ পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ (গীতা ৪৮.৬৬)। সুহৃদং সর্বভূতানাম্ (গীতা ৫.২৯) "আমিই সকলের সুহৃদ্। আমিই তোমাকে সুরক্ষা দিতে পারি।" "অহং ত্বাং সর্ব-পাপেভ্য মোক্ষয়স্যামি মা শুচঃ"। তাই তোমাদের শ্রীকৃষ্ণের কাছে শরণাগত হতে হবে, অন্যথায় তুমি একটি বদমাশ, প্রমত্ত, মূঢ়। শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ দিচ্ছেন, "এটি কর"। কিন্তু আমরা বদমাশ, প্রমত্ত। আমরা ভাছি আমার ছেলে আমাকে সুরক্ষা দেবে, আমার স্ত্রী আমাকে সুরক্ষা দেবে। আমার বন্ধু আমাকে সুরক্ষা দেবে, আমার সরকার আমাকে সুরক্ষা দেবে।" এই সব কিছু হচ্ছে অর্থহীন বাজে কথা। প্রমত্ত। এই হচ্ছে প্রমত্ত কথাটির অর্থ। এটি কেবল বোঝার চেষ্টা কর। প্রমত্ত তস্য নিধানং পশ্যন্নপি। (ভাগবত ২.১.৪)

আরেক ধরণের প্রমত্ত হল, যারা ইন্দ্রিয় সুখের পেছনে পাগলের মতো ছোটে। নূনং প্রমত্তঃ কুরুতে বিকর্ম (ভাগবত ৫.৫.৪)। আরেকটি শ্লোক রয়েছে 'নূনং প্রমত্ত'। যারা প্রমত্ত, যাদের জীবনের কোনও দায়িত্ববোধ নেই, কখনও কখনও অপ্রয়োজনে চুরি করছে, অনেক বাজে কাজ করছে - বিকর্ম। কেন? প্রমত্ত - সেও প্রমত্ত। নূনং প্রমত্তঃ কুরুতে বিকর্ম (ভাগবত ৫.৫.৪) কেন সে শাস্তি পাবার ঝুঁকি নিচ্ছে? ধরুণ, একজন লোক চুরি করছে, সে শাস্তি পাবে। হয় রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কিংবা ভগবানের দেয়া প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সে শাস্তি পাবেই। সে হয়তো রাষ্ট্রের আইনকে ফাঁকি দিলে দিতেও পারে, কিন্তু সে কখনই ভগবানের আইন, প্রকৃতির আইন ফাঁকি দিতে পারবে না। প্রক্রিতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি (গীতা ৩.২৭)। সেটি সম্ভব নয়। ঠিক যেমন প্রকৃতির নিয়মে তুমি কোন রোগের দ্বারা আক্রান্ত হতে পার, সুতরাং তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে। সেই রোগের থেকে তোমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সেটিই হল শাস্তি। তুমি চাইলেও তা এড়াতে পারবে না। তেমনি, তুমি যাই কর না কেন। কারণং গুণসঙ্গোহস্য (গীতা ১৩.২২) যদি তুমি কুকুর বেড়ালের মতো জীবন যাপন কর, তাহলে সেটি শাস্তি, তমোগুণে আচ্ছন্ন। তাহলে পরের জন্মে তোমাকে কুকুর হতে হবে। অবশ্যই তুমি শাস্তি পাবে। এই হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম।

অতএব যে ব্যক্তি এই আইনগুলো জানে না, সে অনেক ধরণের পাপকর্ম, বিকর্ম করে চলে। কর্ম, বিকর্ম, অকর্ম। কর্ম মানে যা কিছু শাস্ত্রে অনুমোদিত। গুণ কর্ম। গুণকর্ম বিভাগশঃ (গীতা ৪.১৩)। কর্ম মানে শাস্ত্রে যা বলা হয়েছে, তুমি যেই নির্দিষ্ট ধরণের গুণ তোমার মধ্যে বিকশিত করেছ, সেই অনুসারে তোমার কর্ম হবে। ব্রাহ্মণ কর্ম, ক্ষত্রিয় কর্ম, বৈশ্য কর্ম। সুতরাং যদি তুমি মেনে চল... এটি গুরুদেব এবং শাস্ত্রের কর্তব্য কাউকে তার কর্ম নির্দিষ্ট করে দেয়া, যখন সে ব্রহ্মচারী থাকে, তখন এটা বলা যে, "তুমি এইভাবে কর" "তুমি ব্রাহ্মণের মতো কর্ম কর" "তুমি ক্ষত্রিয়ের মতো কর্ম কর" "তুমি বৈশ্যের মতো কর্ম কর, আর অন্যরা "শুদ্র"। সুতরাং এই বিভাজন গুরুদেব করে থাকেন। কিভাবে? যস্য যল্লক্ষণং প্রোক্তং বর্ণাভিব্যঞ্জকং (ভাগবত ৭.১১.৩৫) গুরুদেব বলে দেবেন, "তুমি এইভাবে কাজ কর।" অর্থাৎ সেটি নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। সেটি হচ্ছে কর্ম, গুণ-কর্ম। গুরুদেব দেখবেন যে এঁর মধ্যে এই এই গুণগুলি রয়েছে। সেটি স্বাভাবিক। ঠিক যেমন বিদ্যালয়ে, কোন নির্দিষ্ট ছাত্রকে বিজ্ঞানী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, কাউকে প্রকৌশলী হিসেবে, কাউকে চিকিৎসক হতে, কাউকে আইনজ্ঞ হিসেবে, তার প্রবণতা অনুসারে, ছাত্রটির ব্যবহারিক মনস্তত্ত্ব দেখে এটি ঠিক করে দেয়া হয়, "তুমি এটি পড়"। ঠিক একইভাবে, সমাজের এই চারটি বিভাজনও অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক। যখন সে গুরুদেবের নির্দেশে গুরুকুলে থাকে, তাঁকে একটি নির্দিষ্ট ধরণের কাজ ঠিক করে দেয়া হয়, এবং যদি সে সেই কাজটি বিশ্বস্তভাবে করতে পারে, স্ব-কর্মণা তম্ অভ্যাচার (গীতা ১৮.৪৬)। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। এবং তার গুণ ও কর্ম অনুসারে সে একটি নির্দিষ্ট ধরণের পেশাগত কাজে নিযুক্ত হয়।

শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টিবিধানের জন্য হলে কোনও কিছুই খারাপ নয়। অত" পুম্ভির্দ্বিজশ্রেষ্ঠা বর্ণাশ্রম বিভাগশঃ (ভাগবত ১.২.১৩) বর্ণাশ্রম বিভাগ অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু বর্ণাশ্রমের উদ্দেশ্যটি কি? শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ হলেই কি সে সফল? না। শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত কেউই সফল নয়। সেটিই হচ্ছে প্রকৃত সাফল্য।