BN/Prabhupada 0646 - যোগপদ্ধতি মানে এই নয় যে আপনি যা খুশী আজেবাজে করতে থাকবেন



Lecture on BG 6.2-5 -- Los Angeles, February 14, 1969

শ্রীল প্রভুপাদঃ পড়ছে কে?

ভক্তঃ শ্লোক সংখ্যা দুই। "যাকে সন্ন্যাস বলা যায়, তাকেই যোগ বা পরমেশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বলা যায়, কারণ ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনই যোগী হওয়া যায় না।" (গীতা ৬.২)

শ্রীল প্রভুপাদঃ এখানে যোগ অনুশীলনের একটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে। যোগ মানে যুক্ত হওয়া। যদিও আমরা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু বর্তমানে আমাদের বদ্ধ অবস্থায়, আমরা বিচ্ছিন্ন রয়েছি। একই উদাহরণ। এই আঙ্গুলটি তোমার দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, কিন্তু যদি বিচ্ছিন্ন হয়, কেটে ফেলা হয়, তাহলে এর কোনই মূল্য নেই। কিন্তু এটি যতক্ষণ আমাদের দেহের সঙ্গে জুড়ে আছে, এর মূল্য লাখ লাখ টাকা অথবা তার চেয়েও বেশি। যদি কোন রোগ হয় তাহলে রোগ সারাতে তুমি যে কোন অঙ্কের টাকাই ব্যয় করবে। একইভাবে আমরা... বর্তমানে, আমাদের জড় অস্তিত্বের বদ্ধ দশায়, আমরা ভগবান থেকে আলাদা হয়ে রয়েছি। তাই আমরা ভগবানের সম্পর্কে কথা বলতে এতোটাই অনাগ্রহী, ভগবানকে বুঝতে বা তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্কটি জানতে অনাগ্রহী। আমরা ভাবছি এটি কেবল সময়ের অপচয় মাত্র। এখানে সমবেত সকলেই জানে যে এই কৃষ্ণভাবনাময় মন্দিরটি কেবল ভগবানের সম্পর্কে বলে। অথবা কোন চার্চ। লোকেরা খুব একটা আগ্রহী নয়। তারা ভাবে এটি এক ধরণের, পারমার্থিক উন্নতির নামে বিনোদন অন্যথায় এটি কেবল সময়ের অপচয় মাত্র। বরং ভালো হয় যদি এই সময়টা কিছু টাকা উপার্জনে লাগানো যায়। অথবা কোন ক্লাব কিংবা রেস্তোরাঁয় গিয়ে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করে কাটালেই ভালো।

তাই ভগবান থেকে আলাদা হয়ে থাকা মানে ইন্দ্রিয় ভোগ। যারা ইন্দ্রিয়সুখভোগে অত্যন্ত আসক্ত, তারা যোগ অনুশীলনের জন্য যোগ্য নয়। যোগ পদ্ধতি মানে এই নয় তুমি ইন্দ্রিয় সুখভোগে যা খুশি সব আজেবাজে কাজ করতে থাকবে। আর শুধু চুপ করে ধ্যানে বসে থাকবে। সেটি শুধু বিশাল এক ধাপ্পাবাজি মাত্র। এর কোন মানেই নেই। যোগ পদ্ধতি মানে প্রথমে ইন্দ্রিয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা, যম নিয়ম। যোগ অনুশীলনের আটটি বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। যম, নিয়ম, আসন, ধ্যান, ধারণা, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, সমাধি। এই অধ্যায়ের শুরুতেই আমরা আলোচনা করব, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শেখাবেন যে যোগ পদ্ধতিটি কি। শ্রীকৃষ্ণ প্রথমেই বলছেন, কেউই যোগী হতে পারে না, যদি না সে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বাসনা পরিত্যাগ করে।

তাই সে যেই হোক না কেন, যদি সে ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে লিপ্ত হয়, তাহলে সে একটা বাজে লোক। সে যোগী নয়, সে কখনও যোগী হতে পারে না। যোগ পদ্ধতি মানে হল কঠোর ব্রহ্মচর্য, কোন যৌন জীবন নয়। সেটিই হচ্ছে যোগ পদ্ধতি। যৌন জীবনে লিপ্ত হলে কেউ যোগী হতে পারে না। যে সমস্ত তথাকথিত যোগীরা তোমাদের দেশে এসে বলে, "হ্যাঁ, তোমার যা ইচ্ছে সব করতে পারো। তুমি শুধু ধ্যান কর, আমি তোমাকে কিছু মন্ত্র দিচ্ছি"। এ সব কিছুই বাজে কথা। এখানে প্রামাণিক উক্তি দেয়া হয়েছে যে, ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বাসনা থেকে ত্যাগ না করলে কেউই যোগী হতে পারে না। এটিই হচ্ছে প্রথম শর্ত। পড়তে থাকো। (BG 6.3)

ভক্তঃ তৃতীয় শ্লোক। অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলনে যারা নবীন, তাদের পক্ষে কর্ম অনুষ্ঠান করাই উৎকৃষ্ট সাধন। আর যারা ইতিমধ্যেই যোগারুঢ় হয়েছে, তাঁদের পক্ষে সমস্ত কর্ম থেকে নিবৃত্তিই উৎকৃষ্ট সাধন। শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। দুটি স্তর রয়েছে। একটি হচ্ছে যারা যোগের সিদ্ধ অবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার অনুশীলন করছেন, আর আরেকটি হচ্ছে যারা ইতিমধ্যেই সিদ্ধিলাভ স্তরে উন্নীত হয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ সিদ্ধি স্তরে পোঁছায় নি, কেবল অনুশীলন করছে, সেই স্তরে অনেক কিছু করণীয় থাকে। আসন ব্যবস্থা, যম, নিয়ম। তাই সাধারণত তোমাদের দেশে অনেক ধরণের যোগ গোষ্ঠী রয়েছে। তারা এই আসন পদ্ধতি দেখাচ্ছে। কিভাবে বসতে হয়, বিভিন্ন আসন প্রণালী। সেটি কেবল সাহায্যকারী। কিন্তু সেটি কেবল মাত্র প্রকৃত স্তরে উন্নীত হওয়ার একটি পদ্ধতি মাত্র। সেগুলো কেবল মাধ্যম। প্রকৃত যোগসিদ্ধি এইসব শারীরিক কসরৎ থেকে আলাদা। দুটি ধাপ রয়েছে। একটি ধাপ সিদ্ধির স্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, আর আরেকটি স্তর হচ্ছে যারা সিদ্ধি স্তরে পৌঁছে গিয়েছে।