BN/Prabhupada 0660 - যদি তুমি কেবল তোমার যৌনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তবে তুমি খুবই শক্তিশালী হতে পারবে



Lecture on BG 6.13-15 -- Los Angeles, February 16, 1969

তমাল কৃষ্ণঃ শ্লোক ১৩ এবং ১৪, "শরীর, মস্তক ও গ্রীবাকে সমানভাবে রেখে, অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে, নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রশান্তাত্মা, ভয়শুন্য ও ব্রহ্মচর্যে ব্রতে স্থিত পুরুষ মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে, আমাকে জীবনের চরম লক্ষ্যরূপে স্থির করে হৃদয়ে আমার ধ্যানপূর্বক যোগ অভ্যাস করবেন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ এইটি হচ্ছে পন্থা। সবার প্রথমে তোমাকে একটি ভাল স্থান নির্বাচন করতে হবে, নির্জন স্থান যেখানে তোমাকে একাকী থাকতে হবে। এমন নয় যে যোগ ক্লাসে গিয়ে তুমি কিছু টাকা দিয়ে শারীরিক কসরত শিখে আসবে। আর ঘরে এসে সবধরনের আজেবাজে কাজ করে বেড়াবে। বুঝলে? এই সমস্ত হাস্যকর জিনিসের ফাঁদে পা দিও না। এসব কেবল... আমি ঘোষণা করে বলতে পারি যে এইসব কেবল প্রতারক এবং প্রতারিতের সংস্থা। বুঝলে? এখানে অভ্যাসের কথা বলা হচ্ছে। আর সে কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলছেন। শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে উন্নত কোন ব্যক্তি বা যোগী আছে?

এখানে প্রামাণিক উক্তি দেয়া হচ্ছে যে তোমাকে এইভাবে অভ্যাস করতে হবে। প্রথমে নিজের দেহকে সোজা রাখতে হবে... প্রথমে তোমাকে জায়গা নির্বাচন করতে হবে, পবিত্র স্থান, সেখানে তোমাকে একটি বিশেষ আসনে একাকী বসতে হবে। তারপর তোমাকে এইভাবে সোজা হয়ে বসতে হবে। "শরীর, মস্তক ও গ্রীবাকে সমানভাবে রেখে বসতে হবে" সমানভাবে। এই হচ্ছে যোগ পন্থা। এগুলো মনকে একাগ্র করতে সাহায্য করে, ব্যাস। কিন্তু যোগের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে হৃদয় অভ্যন্তরে সর্বদা শ্রীকৃষ্ণকে রাখা। এখানে বলা হচ্ছে যে, "শরীর, মস্তক ও গ্রীবাকে সমানভাবে রেখে, অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে নাসিকার অগ্রভাগে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।" তোমাকে এখানে এটি দেখতে হবে। যদি তুমি চোখ বন্ধ করে দাও, তুমি ঘুমিয়ে পড়বে। আমি তা দেখেছি। বহু বহু তথাকথিত যোগীরা, তারা ঘুমোয়, (নাক ডাকার আওয়াজ করে)। আমি নিজে তা দেখেছি। তোমরা দেখেছ? কারণ ঠিক যেই মুহূর্তে তুমি চোখ বন্ধ করছ, এটি স্বাভাবিক যে তুমি ঘুম ঘুম অনুভব করবে। তাই অর্ধ-নিমীলিত। এটি তোমাকে বুঝতে হবে। এই হচ্ছে পন্থা। তোমাকে তোমার নাসিকার অগ্রভাগের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। এই প্রকার অবিক্ষিপ্ত চিত্তে... এই পদ্ধতি তোমার মনকে নিবদ্ধ করতে সাহায্য করবে। প্রশান্ত মন, নিয়ন্ত্রিত মন, ভয়শুন্য। হ্যাঁ। কারণ তোমাকে... সাধারণত যোগীরা জঙ্গলে গিয়ে যোগাভ্যাস করতেন, এবং যদি ভাবেন, "এটা কি কোন বাঘ এলো না কি অন্য কিছু?" (হাস্য) অথবা কোন সাপ। কারণ তোমাকে জঙ্গলে একাকী বসে থাকতে হবে। জঙ্গলে অনেক ধরণের প্রাণী আছে। বাঘ, হরিণ, সাপ। তাই এটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে "ভয়শুন্য"... যোগাসনের ক্ষেত্রে সাধারণত মৃগচর্ম ব্যবহার করা হয়। কারণ এর কিছু ভেষজ কার্যকারিতা আছে যে মৃগচর্মের কাছে সাপ আসে না। যদি তুমি সেই বিশেষ ধরণের চামড়ার ওপর বস, তাহলে সাপ বা অন্যান্য সরীসৃপ প্রাণী সেখানে আসবে না। এই উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার হয়। এত তোমার ব্যাঘাত ঘটবে না। ভয়শুন্য। যৌনজীবন থেকে মুক্ত থাকতে হবে। যদি তুমি যৌনজীবনে লিপ্ত হও, তুমি কোনকিছুতে তোমার মনঃসংযোগ করতে পারবে না। এটিই হচ্ছে ব্রহ্মচারী জীবনের সুফল। যদি তুমি যৌনজীবন ছাড়া ব্রহ্মচারী থাকতে পার, তাহলে তুমি দৃঢ় হতে পারবে। ঠিক যেমন বাস্তবে ভারতবর্ষে আমরা মহাত্মা গান্ধীকে দেখেছি। তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন, অহিংস, অসহযোগ। সেই আন্দোলন বা যুদ্ধ শক্তিশালী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হয়েছিল। এবং তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ছিলেন যে "আমি ব্রিটিশদের সঙ্গে অহিংসা আর অসহযোগ দিয়েই লড়বো। কোনও অস্ত্র ছাড়াই।" কারণ ভারতবর্ষ তখন পরাধীন ছিল, কোন অস্ত্র ছিল না। এবং বেশ কয়েকবার সশস্ত্র যুদ্ধের চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। ওরা সবাইকে কেটে মেরে ফেলল। তাই গান্ধীজী এই উপায়টি উদ্ভাবন করলেন যে, "আমি ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ করব, কিন্তু ওরা যদিও বা সহিংস হয়, আমি সহিংস হব না। আমি সারা বিশ্বের সহানুভূতি অর্জন করব।" এটি ছিল তাঁর পরিকল্পনা। তিনি অত্যন্ত মহান রাষ্ট্রনেতা ছিলেন। কিন্তু তাঁর এই দৃঢ়তা এতো প্রবল থাকার কারণ তিনি ব্রহ্মচারী ছিলেন। ৩৬ বৎসর বয়স থেকে তিনি যৌনজীবন পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল কিন্তু কোন রকম যৌন সম্পর্ক ছিল না। তিনি গৃহী ছিলেন, তাঁর সন্তানাদি ছিল, স্ত্রী ছিল। কিন্তু ৩৬ বৎসরের যুবক থাকা কালে তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যৌন জীবন ত্যাগ করেছিলেন। আর এটিই তাঁকে এতোটা দৃঢ় করে দিয়েছিল যে, "আমি ব্রিটিশদের ভারত থেকে তাড়াবোই।" এবং তিনি তা করেও ছিলেন। তিনি প্রকৃত অর্থেই তা করেছিলেন। সুতরাং যৌনজীবন নিয়ন্ত্রণ করা, বা যৌনজীবন থেকে বিরত থাকা এতোটাই শক্তিশালী। এমন কি যদি তুমি কিছু নাও কর, কেবল যৌনজীবন থেকে বিরত থাক, তাহলে তুমি অনেক শক্তিশালী হতে পারবে। মানুষেরা এই রহস্যটি জানে না। তাই তুমি যা কিছুই কর, যদি তুমি তা দৃঢ়তার সঙ্গে করতে চাও তোমাকে যৌনজীবন বন্ধ করতে হবে। সেটিই হল রহস্য।

যে কোন পন্থায়, বৈদিক পন্থার কথাই ধর। তুমি যোগের পন্থা, ভক্তির পন্থা কিংবা জ্ঞানের পন্থাই গ্রহণ কর না কেন, কোনও পন্থাতেই যৌনজীবন অনুমোদিত না। না। যৌনজীবন কেবলমাত্র সংসারজীবনেই অনুমোদিত, কেবলমাত্র সুসন্তান উৎপাদন করার জন্য। ব্যাস। যৌনজীবন ইন্দ্রিয়সুখের জন্য নয়। যদিও স্বাভাবিকভাবেই তাতে সুখ থাকে। যদি কোন সুখ নাই থাকতো, তাহলে মানুষ কেন সংসারজীবনের দায়িত্ব নিত? সেটি হচ্ছে প্রকৃতির উপহারের রহস্য। কিন্তু আমাদের এর সুবিধা নেয়া উচিৎ নয়। এগুলো হচ্ছে জীবনের রহস্য। (পাশ থেকে কেউ)- তুমি এটি নিতে পার। এসব হচ্ছে জীবনের রহস্য। এভাবে যোগ অভ্যাস অত্যন্ত সুন্দর একটি ব্যবস্থা। যদি তুমি যৌনজীবনে লিপ্ত হও, তাহলে সেটি মূর্খতা। নিছক মূর্খতা। আর যদি কেউ বলে তোমার যত খুশী যৌন জীবন উপভোগ করতে পার, আর একই সঙ্গে তুমি যোগীও হতে পারবে, শুধু আমাকে পয়সা দিলেই হবে। আমি তোমাকে কিছু জাদুকরী মন্ত্র দেব।" এই সবই হচ্ছে বাজে কথা। একদম বাজে কথা। কিন্তু আমরা প্রতারিত হতে চাই। আমরা প্রতারিতই হতে চাইছি। আমরা মহান কিছু খুব সস্তায় পেতে চাই। তার মানে আমরা ঠকতে চাই। যদি তুমি খুব ভাল কিছু চাও তাহলে তোমাকে অবশ্যই তার জন্য মূল্য দিতে হবে। "না, আমি দোকানে যাব, মশাই, আমি আপনাকে দশ পয়সা দেব, আপনি আমাকে সবচেয়ে ভাল জিনিসটা দিন।" দশ পয়সার বিনিময়ে তুমি কিভাবে এটি আশা করতে পার? যদি তুমি মূল্যবান কিছু কিনতে চাও, যদি তুমি স্বর্ণ কিনতে চাও, তোমাকে তার জন্য সেরকম মূল্য দিতে হবে। ঠিক তেমনই, তুমি যোগে সিদ্ধি লাভ করতে চাও, তাহলে তোমাকে ঠিক এইভাবে তার জন্য মূল্য দিতে হবে। একে ছেলেখেলা বানিয়ে দিও না। সেইটিই হচ্ছে ভগবদগীতার নির্দেশ। তুমি যদি একে ছেলেখেলা মনে কর, তাহলে তোমাকে ঠকতে হবে। আর এরকম অনেক ঠকবাজেরা তোমার টাকাপয়সা লুটে নিয়ে তোমাকে ঠকানোর জন্য তৈরিই হয়ে আছে। এখানে প্রামাণিক কথা বলা হচ্ছে। যৌন জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার কথা।