BN/Prabhupada 0662 - দুশ্চিন্তায় পরিপূর্ণ কেননা তারা কতগুলো অনিত্য বস্তুকে আঁকড়ে ধরে আছে



Lecture on BG 6.13-15 -- Los Angeles, February 16, 1969

তমাল কৃষ্ণঃ শ্লোক ১৫ "এভাবেই দেহ, মন ও কার্যকলাপ সংযত করার অভ্যাসের ফলে যোগীর জড় বন্ধন মুক্ত হয় এবং তিনি তখন আমার ধাম প্রাপ্ত হন।" (গীতা ৬.১৫)

শ্রীল প্রভুপাদঃ সংস্কৃতে নির্বাণ মানে শেষ হয়ে যাওয়া। শেষ। তাকে বলা হয় নির্বাণ। অর্থাৎ সমস্ত জাগতিক করমের সমাপ্তি। আর নয়। তাকেই বলা হয় নির্বাণ। আর যতক্ষণ না তুমি এই সব অনর্থক কাজ করা শেষ না করছ, শান্তি লাভের কোন প্রশ্নই আসে না। যতক্ষণ তুমি জাগতিক কর্মে লিপ্ত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি লাভের কোনই প্রশ্ন ওঠে না। প্রহ্লাদ মহারাজ তাঁর পিতাকে বলেছিলেন, 'তৎ সাধুমন্যে অসুরবর্য-দেহিনাম্ সদা সমুদ্বিগ্ন-ধীয়াং অসদ্-গ্রহাৎ। তাঁর পিতা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, "হে প্রিয় পুত্র,..." একটি পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চা পিতা এই বয়সের সন্তানের প্রতি সর্বদাই স্নেহ পরায়ণ থাকে, তাই সে জিজ্ঞাসা করেছিল, "হে প্রিয় পুত্র, এখনো পর্যন্ত তুমি যা শিখেছ, তার মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটি কি?" তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর পিতাকে বললেন, "হ্যাঁ, পিতা আমি আপনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাটি কি তা বলব" সেটি কি" তিনি বললেন, " তৎ সাধুমন্যে অসুরবর্য-দেহিনাম্ হে পিতা, এটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু" কাদের জন্য? কাদের জন্য শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, "তৎ সাধুমন্যে অসুরবর্য-দেহিনাম্ সদা সমুদ্বিগ্ন-ধীয়াং অসদ্ গ্রহাৎ (ভাগবত ৭.৫.৫) এই সব জড়বাদী লোকেরা যারা অনিত্য বস্তুর আশ্রয় নেয়... প্রতিটি শব্দ বোঝার চেষ্টা কর। এইসব জড়বাদী মানুষেরা অনিত্য বস্তু লাভের পেছনে লালায়িত হয়। ব্যাস। তোমরা নিজেদের অভিজ্ঞতাতেই সেটি দেখেছ রাষ্ট্রপতি কেনেডি তিনি অনেক ধনী লোক ছিলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন আর তা হওয়ার জন্য তিনি অঢেল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন, তার সুন্দর পরিবার ছিল, স্ত্রী, সন্তানাদি, রাষ্ট্রপতিত্ব - এক মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু শেষ। ঠিক তেমনই এই জড় জগতে প্রত্যেকেই চেষ্টা করছে অনিত্য বস্তুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে। কিন্তু আমি চিন্ময় আত্মা, নিত্য।

এই সব বদমাশেদের এই জ্ঞান হয় না যে "আমি হচ্ছি নিত্য" আমি কেন অনিত্য বস্তুর পেছনে ছুটছি?" যদি আমি সবসময় কেবল দেহের আরামের পেছনেই ছুটি যখন কি না আমি জানি যে এই দেহটি অনিত্য, আজ, কাল অথবা একশো বছরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে আর আমি হচ্ছি চিন্ময় আত্মা, আমার কোন জন্ম নেই মৃত্যু নেই, তাহলে আমার কর্তব্য কি? যতক্ষণ আমি জাগতিক কর্ম করছি সেগুলো সব দেহগত কর্ম। তাই প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন, অসদ্ গ্রহাৎ। দেখ কত চমৎকার বলছেন। তারা সর্বদা উদ্বিগ্ন। তারা উদ্বেগে পূর্ণ কারণ ওরা অনিত্য বস্তু আঁকড়ে আছে। তাদের সমস্ত কার্যকলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে অনিত্য কিছুকে আঁকড়ে ধরা। তাই তারা সর্বদাই উদ্বেগে পরিপূর্ণ। যে কোন মানুষ, প্রাণী, পশু-পাখি, সর্বদাই উদ্বিগ্ন। এটি হচ্ছে ভবরোগ। তাই তুমি যদি সর্বদা উদ্বিগ্নই থাকবে, তাহলে শান্তি লাভের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? যদি রাস্তায় যাবে, দেখবে লোকে বলে "কুকুর হতে সাবধান" তারা সুন্দর সুন্দর বাড়িতে থাকছে, কিন্তু সর্বক্ষণ উদ্বেগে পূর্ণ। লোকজন না আসুক। ওখানে বরং কুকুর থাক। দেখলে? "কুকুর থেকে সাবধান" "প্রবেশ নিষেধ" অর্থাৎ যদিও সুন্দর বাড়িতে থাকছে, কিন্তু সর্বক্ষণ দুশ্চিন্তায় পূর্ণ। অফিসে বসে ভালো বেতন পাচ্ছে আর ভাবছে "ওহ, আমার এই চাকরীটা যেন চলে না যায়," দেখলে? বুঝতে পারছ? আমেরিকা অত্যন্ত ধনী দেশ। সুন্দর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সবকিছুই খুব ভাল। সর্বদাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। "ওহ, এই ভিয়েতনামের মানুষগুলো যেন এখানে না আসে।" সুতরাং এমন কে আছে যে এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত। অতএব সিদ্ধান্ত হল এই যে, যদি তুমি দুশ্চিন্তামুক্ত শান্তি লাভ করতে চাও, তাহলে তোমাকে কৃষ্ণভাবনামৃতে আসতে হবে। এ ছাড়া আর কোনই বিকল্প নেই। এটি অত্যন্ত বাস্তব। কেবল বোঝার চেষ্টা কর। তাই এখানে বলা হচ্ছে, "এভাবেই ধ্যান করার মাধ্যমে, শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করার মাধ্যমে, দেহকে সংযত করে" সবার প্রথমে জিহ্বা সংযত করতে হবে। তারপর উপস্থ। তাহলে তুমি সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তোমার জিহ্বাকে কৃষ্ণনাম কীর্তন এবং কৃষ্ণপ্রসাদ গ্রহণের দ্বারা নিযুক্ত কর। তাহলেই তা সংযত। ব্যাস। আর যেই মুহূর্তে তোমার জিহ্বা সংযত হবে, তোমার উদরও সংযত হবে। তারপরেই তোমার উপস্থও সংযত হয়ে যাবে। সরল ব্যাপার। দেহ ও মনকে সংযত করা। মনকে শ্রীকৃষ্ণের চিন্তায় নিবদ্ধ কর, আর কোন কিছুতে নয়। সংযত কর। কার্যকলাপ - সবকিছু কেবল শ্রীকৃষ্ণের জন্যই কর। বাগান করা, টাইপ করা, রান্না করা, অন্যান্য কাজ করা, সবকিছুই কেবল শ্রীকৃষ্ণের জন্য। "এইভাবে তৎক্ষণাৎ তিনি পরমার্থবাদী যোগীতে পরিণত হন এবং শান্তি লাভ করেন, পরম নির্বাণ অর্থাৎ আমার ধাম প্রাপ্ত হন।" শ্রীকৃষ্ণকে কেন্দ্র করেই এই সবকিছু। কৃষ্ণভাবনাময় কার্যকলাপ ছাড়া তুমি অন্য আর কোথাও শান্তি খুঁজে পাবে না। কৃষ্ণভাবনামৃতের বাইরে কোথাও, তা সম্ভব নয়। পড়।