BN/Prabhupada 0673 - একটি চড়াই পাখি সমুদ্র শুষে ফেলার প্রতিজ্ঞা করছে। এর নাম হচ্ছে দৃঢ় বিশ্বাস



Lecture on BG 6.16-24 -- Los Angeles, February 17, 1969

ভক্তঃ দৃঢ়তার ব্যাপারে সেই চড়াই পাখির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত যে সমুদ্রে তার ডিমগুলি হারিয়ে ফেলেছিল। সমুদ্রের পাড়ে এক চড়াই পাখিটি দিম পেড়েছিল। কিন্তু বিশাল সমুদ্রের ঢেউ তার ডিমগুলি ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। চড়াই পাখিটি অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে সমুদ্রকে তার ডিমগুলি ফিরিয়ে দিতে বলেছিল। সমুদ্র তার কথায় কর্ণপাত করে নি। তাই সে সমুদ্রকে শুষে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। সে তখন...

শ্রীল প্রভুপাদঃ দেখ যে একটি চড়াই সমুদ্রকে শুষে ফেলার প্রতিজ্ঞা করল (হাসি) একেই বলা হয় দৃঢ় বিশ্বাস। ঠিক যেমন আমাদের গান্ধীজী। তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তার যুদ্ধ ছিল অহিংসার, অসহযোগের। দেখলে? কিন্তু তাতে দৃঢ়তা ছিল। "আমি অবশ্যই ব্রিটিশদের তাড়াবো।" আর তিনি তা করেও ছিলেন। আর অস্ত্রটি কি? অসহযোগ। "ঠিক আছে, তোমরা যুদ্ধ কর, তোমরা আমাকে ফেল। কিন্তু আমি আক্রমণ করব না।" দেখলে? তিনি কি করলেন? দৃঢ়তা। লোকেরা তা দেখে হেসেছিল। "গান্ধী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, এতো শক্তিশালী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে।" প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশরা, তারা ভারত হারাবার পর তাদের সম্পূর্ণ সাম্রাজ্য তারা হারায়। কারণ সেটি ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্নস্বরূপ। তারা দূর প্রাচ্যে তাদের সকল অধিকৃত ক্ষমতা হারায়, মিশরে তাদের ক্ষমতা হারায়, তারা সুয়েজ খালের ওপর তাদের কর্তৃত্ব হারায়, সবকিছুই হারায়। তাই দৃঢ়তা এতোই চমৎকার একটি বিষয়। এরপর পড়ো।

ভক্তঃ "সেই চড়াই পাখিটি তার ছোট্ট ঠোঁট দিয়ে জল শুষে নিতে আরম্ভ করল। আর তার এই অসম্ভবকে সাধন করার দৃঢ়তা দেখে সবাই তাকে উপহাস করতে লাগল। তার এই সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল এবং শেষমেশ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর বিশাল বাহন গরুড় সেখানে উপস্থিত হলেন। তার ছোট্ট বোনটির প্রতি করুণার উদ্রেক হল, এবং তাই তিনি সেই ছোট্ট চড়াইটিকে দেখতে এলেন। তিনি তাকে সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করলেন। তিনি সমুদ্রকে চড়াইয়ের ডিমগুলি ফেরত দিতে বললেন অন্যথায় চড়াই পাখির সেই কাজটি তিনিই সারবেন বলে জানালেন। সমুদ্র তা শুনে অত্যন্ত ভয় পেল এবং ডিমগুলি ফেরত দিল। এই ভাবে সেই চড়াইটি গরুড়দেবের কৃপায় সুখী হল।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ, গরুড় তাকে সাহায্য করতে এসেছিল। এর পর পড়ো।

ভক্তঃ ঠিক একইভাবে, যোগের অনুশীলন বিশেষ করে কৃষ্ণভাবনামৃতে ভক্তিযোগের অনুশীলন, খুব কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি বিধিনিষেধগুলি গভীর দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করেন, ভগবান তাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। ভগবান তাকেই সাহায্য করেন যিনি নিজেকে সাহায্য করেন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ আজ এ পর্যন্তই। কোন প্রশ্ন?

ভক্তঃ শ্রীল প্রভুপাদ, যখন আপনি বলছেন সাফল্য লাভের জন্য দৃঢ় বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়... এবং তখন কি ভাবে একজন ব্যক্তি সবসময় তার দৃঢ় বিশ্বাসকে ধরে রাখবে? অর্থাৎ কি ভাবে সর্বদা এই উৎসাহ বা দৃঢ়তার অগ্নি সবসময় জ্বালিয়ে রাখা যায়? যখন কি না আমাদেরকে অনেক কিছুর সঙ্গে তাল মেলাতে হয়...

শ্রীল প্রভুপাদঃ দৃঢ়তা মানে তোমার উৎসাহও থাকতে হবে। সেটি দৃঢ়তার একটি অঙ্গ। উৎসাহাৎ ধৈর্যাৎ, তৎ-তৎ-কর্ম প্রবর্তনাৎ (উপদেশামৃত শ্লোক ৩) উৎসাহ হচ্ছে দৃঢ়তার প্রকৃত সূচনা। যদি উৎসাহী না হও, তবে তোমার দৃঢ়তা কি ভাবে বজায় থাকবে? তাই দৃঢ়তা, উৎসাহ, ধৈর্য, বিধিবদ্ধ নিয়ম পালন, এগুলো দৃঢ়তারই বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ। উৎসাহ, ধৈর্য, তৎ তৎ কর্ম- এই সব কিছুরই একটি নাম দৃঢ়তা। এইগুলি সব দৃঢ়তারই বিভিন্ন দিক।