BN/Prabhupada 0704 - হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন কর এবং এই যন্ত্র (কানটিকে) সেই নাম শুনতে ব্যবহার কর



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ?

বিষ্ণুজনঃ প্রভুপাদ? জড় জগতে বিভিন্ন শক্তির পরিমাপের অনেক যন্ত্রপাতি আছে। পারমার্থিক শক্তিকে কেউ কীভাবে কেউ মাপবে, কি ধরণের যন্ত্রপাতি দিয়ে মাপবে, বা সেই রকম যন্ত্রপাতি বানাবেই বা কীভাবে?

শ্রীল প্রভুপাদঃ জড় শক্তি... তোমার প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক শক্তি এবং বিদ্যুতের মতো?

বিষ্ণুজনঃ আমরা জাগতিক জিনিস হয়তো কোন নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি দিয়ে মাপতে পারি , কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের চিন্ময় শক্তিকে মাপার যন্ত্র কোথায়?

শ্রীল প্রভুপাদঃ সেই যন্ত্রও তোমাদের কাছে আছে। মৃদঙ্গ করতাল। কেবল ওগুলো বাজিয়ে কীর্তন কর। অনেক সরল যন্ত্র। তোমার জিহ্বা হল সেই যন্ত্র। হরে কৃষ্ণ কীর্তন কর। তোমার সেই যন্ত্র আছে, প্রত্যেকেরই আছে। তোমাকে তা কিনতে হবে না। তোমার দুটো কান যন্ত্র রয়েছে। কেবল সেই শব্দ তরঙ্গ শ্রবণ কর। এইভাবে সমস্ত যন্ত্র তোমার সাথেই আছে। এসব তোমাকে অন্য কোথাও থেকে কিনতে বা ভাড়া করে আনতে হবে না। তোমার জিহ্বা আছে, কান আছে। হরে কৃষ্ণ কীর্তন কর এবং কান দিয়ে শ্রবণ কর। ব্যাস্‌। সর্ব সিদ্ধি। তোমাকে এর জন্য কোন শিক্ষিত বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিক বা এটা ওটা হবার প্রয়োজন নেই। কেবল হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন কর এবং শ্রবণ কর। সবকিছুই দেয়া আছে। প্রত্যেকেরই কাছেই এইসব যন্ত্রপাতি আছে। এসবের জন্য তোমাকে কোন কর দিতে হবে না। বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করলে তার জন্য তোমাকে কর দিতে হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তোমার সবকিছু পূর্ণরূপে আছে। পূর্ণমিদং পূর্ণমদঃ (শ্রীঈশোপনিষদ, আবাহন)। ভগবানের সৃষ্ট সবকিছুই সম্পূর্ণ। এই পৃথিবীকে দেখছ না? মাটির সম্যক অস্তিত্ব পরীক্ষা করে দেখ। দেখবে তা সম্পূর্ণ। সমুদ্র ও মহাসাগরে যথেষ্ট পরিমাণ জলের সংগ্রহ আছে সূর্যের আলো আছে, তার থেকে জল বাষ্প হচ্ছে এবং মেঘে পরিণত হচ্ছে। তারপর তা সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে এবং এর থেকে উৎপাদন হয়। জলের বিশাল সংগ্রহ আছে। তুমি সেই জলেই তোমার ঘরের ট্যাংক ভরে রাখছ। এছাড়াও পর্বতশৃঙ্গ থেকে ঝর্ণা নেমে আসছে, এইভাবে সারাবছর নদী প্রবাহিত হচ্ছে। তোমরা কি এটা দেখতে পারছ না যে কি সুন্দর মাথা কাজ করছে এর পেছনে? তুমি পারবে এইভাবে অজস্র জলপ্রবাহ বানাতে? তুমি যদি মনে কর হাজার হাজার গ্যালন জলকে বাষ্প বানাবে, তোমাকে বহু যন্ত্রপাতির আয়োজন করতে হবে। আর এখানে কোটি কোটি টন জল তাৎক্ষণিকভাবে মহাসাগর আর সমুদ্র থেকে চলে যাচ্ছে বাষ্পে পরিণত হচ্ছে, হালকা মেঘ যাতে করে তা আবার সঙ্গে সঙ্গে পড়ে না যায়। দেখছ তো? জলের ট্যাঙ্কের মতো নয়। এই জল আবার পর্বতচূড়ায় ঝর্ণা হয়ে জমা থাকছে এবং পরবর্তীতে তা সর্বত্র ছড়াচ্ছে, এইভাবে সব ব্যবস্থা করা আছে। শস্য এবং শাকসবজি ফলাতে গেলে জলের প্রয়োজন। সবকিছুই রয়েছে।

পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদম্‌ (ঈশোপনিষদ আবাহন) যেহেতু তা পূর্ণবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মাথার দ্বারা সৃষ্টি তাই সবকিছুই পরিপূর্ণ। ঠিক তেমনই তোমার দেহও পারমার্থিক উপলব্ধির জন্য পূর্ণরূপে তৈরি। তোমার বাহ্যিক কোন যন্ত্রপাতির দরকার নেই। এই যোগপদ্ধতিটিই হচ্ছে সেই পূর্ণতমকে বোঝা। সবকিছুই পূর্ণ। তোমার খাবার পূর্ণ, তোমার বন্দোবস্ত পূর্ণ, তোমার মানবশরীরটি পূর্ণ। তুমি কেবল এটি উপযোগ করার চেষ্টা কর। এবং জীবনের সব জ্বালা যন্ত্রণা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যাও। শব্দতরঙ্গ। বেদান্ত সূত্র বলছেন কেবল চিন্ময় শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমেই আমরা মুক্ত হয়ে যেতে পারি। তাই এই শব্দ - (অস্পষ্ট)। বুঝলে? তাই যন্ত্র ইতিমধ্যেই তোমার সঙ্গে রয়েছে। প্রত্যেকের সাথেই। কেবল এর সদ্ব্যবহার কর। এই সরল পন্থার। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন কর এবং শ্রবণ কর। ব্যাস্‌। হ্যাঁ।