BN/Prabhupada 0705 - ভগবাদ্গীতায় আমরা ভগবৎ তত্ত্ববিজ্ঞানের এই পরম উৎকৃষ্ট জ্ঞান লাভ করি



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

ভক্তঃ এই বিষয়ে কিছু বলুন যে আমাদেরকে অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ বিষ্ণুকে বুঝতে হবে।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। কৃষ্ণ নিজেকে বিস্তার করতে পারেন। ঠিক যেমন তুমি এখানে বসে রয়েছ। তুমি তোমার এপার্টমেন্টে নেই। কারণ তুমি বদ্ধজীব। চিন্ময় স্তরে তুমিও তোমাকে বিস্তৃত করতে পারবে কিন্তু যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের দেহ জড় নয়, তাই তিনি নিজেকে কোটি কোটি রূপে বিস্তার করতে পারেন তিনি এখানে বসতে পারেন, তিনি ওখানেও বসতে পারেন। ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি (গীতা ১৮/৬১) তিনি সকলের হৃদয়েই উপবিষ্ট আছেন। প্রত্যেকের। তাঁর বিস্তারের মাধ্যমে যদিও তিনি এক কিন্তু নিজেকে বিস্তৃত করতে পারেন কারণ তিনি মহান। যেমন সূর্য মহান তাই দুপুরবেলা যদি তুমি তোমার বন্ধুকে টেলিগ্রাম পাঠালে যে হয়তো তোমার থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আছে। "সূর্য কোথায়"? সে বলবে, "ওহ্‌ আমার মাথার ওপর"। আর এদিকে তুমিও দেখবে সূর্য তোমার মাথার ওপর। কারণ তিনি (সূর্য) মহান। তাই শ্রীকৃষ্ণ মহান হবার কারণে তিনি একই সঙ্গে অনেক জায়গায় থাকতে পারেন। সেটিই তাঁর বিস্তার এই উদাহরণটি গ্রহণ কর। সূর্য কি? সেটি কেবল শ্রীকৃষ্ণের এক অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টি। যদি সেই সূর্য একই সাথে সবার মাথার ওপর থাকতে পারে, কেউ পাঁচ হাজার বা দশ হাজার মাইল দূরে থাকলেও, তাহলে কি শ্রীকৃষ্ণ থাকতে পারেন না? তোমার যুক্তি ক্ষমতার প্রয়োগ করছ না কেন? সূর্য কি শ্রীকৃষ্ণের চেয়েও বড়? না। কৃষ্ণ কোটি কোটি সূর্য সৃষ্টি করতে পারেন। যদি সূর্যেরি এতো শক্তি থাকতে পারে, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের থাকতে পারে না কেন? তাহলে তুমি কৃষ্ণকে বুঝলে না?

শ্রীকৃষ্ণ অখিলাত্মাভূত (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৭) তিনি বিস্তার করতে পারেন। সেই কথা ত্রয়োদশ অধ্যায়ে আছে ক্ষেত্রজ্ঞম্‌ চাপি মাম্‌ বিদ্ধি সর্বক্ষেত্রেষু ভারত (গীতা ১৩/৩) ক্ষেত্র, ক্ষেত্রজ্ঞম্‌। ঠিক যেমন তুমি চিন্ময় আত্মা। তুমি এই দেহের মালিক আমি এই দেহের (নিজদেহের) মালিক। তুমি তোমার দেহের মালিক। কিন্তু যেহেতু আমি এই দেহে বসে আছি... কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত দেহের মালিক কারণ তিনি সবার দেহে বসে আছেন। ঠিক যেমন এই বাড়িটি আমার বা অন্য একজনের মালিকানায় আছে আরেকটি বাড়ি অন্য কোন লোকের মালিকানায় আছে। কিন্তু সম্পূর্ণ আমেরিকাটি রাষ্ট্রের মালিকানায়। তদ্রূপ যখনি মহানতা বা বিশালতার কথা বলা হচ্ছে, সেটি সম্ভব, বিস্তারের মাধ্যমে আর যেহেতু আমি নিজেকে বিস্তার করতে পারি না, তাই কৃষ্ণও বিস্তার করতে পারেন না, এটি হচ্ছে ব্যাঙের দর্শন। আমরা সবসময় কেবল নিজের মতো করেই সবকিছু মনে করি। যেহেতু আমি নিজের বিস্তার করতে পারি না, তাই এটি কীভাবে সম্ভব যে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে বিস্তার করতে পারেন? তুমি কে? তোমার অবস্থাটি কি? তুমি কেন তোমার সাথে শ্রীকৃষ্ণের তুলনা করছ? হ্যাঁ। শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে বিস্তার করতে পারেন। এই রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। মনে কোর না যে যেহেতু তুমি তোমার বিস্তার করতে পার না, তাই শ্রীকৃষ্ণও নিজেকে বিস্তার করতে পারেন না। এটি হচ্ছে মূর্খের দর্শন। তাঁরা কেবল আনুষ্ঠানিক ভাবে বলে "ভগবান মহান"। কিন্তু আসলে যখন সে চিন্তা করবে যে, "ওহ্‌ তিনি কতোটা মহান? আমি এটা করতে পারি না, শ্রীকৃষ্ণ কীভাবে তা করেন"। কিন্তু কেবল আনুষ্ঠানিক ভাবে বলা যে "ভগবান মহান"। আসলে ভগবানের বিশালতা সম্বন্ধে তাঁদের কোন ধারণাই নেই। সেই কথা আমরা ভগবদগীতায় পাই। তাই এটি হচ্ছে ভগবদ জ্ঞানের পরমোৎকর্ষ। অখিলাত্মভূতঃ (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৭) । যদি তুমি জানতে চাও যে ভগবান কতোটা মহান তাহলে তোমাকে বৈদিক শাস্ত্রের সাহায্য নিতে হবে আর কোন সাহিত্য নয়।

ভক্তঃ প্রভুপাদ? আমরা জানি যে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর সবসময় খুব সোজা হয়ে বসতেন। এবং সেই কথা ভগবদগীতাতেও বলা হয়েছে সোজা হয়ে বসা উচিত এটি কি আমাদেরকে জপে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে? যদি আমরা সোজা হয়ে বসি কোনরকম চিত্তবিক্ষেপ ছাড়া (অস্পষ্ট) , জপের সময়?

শ্রীল প্রভুপাদঃ না না, এর জন্য কোন নির্দিষ্ট বসার ভঙ্গিমার আবশ্যকতা নেই। কিন্তু যদি তুমি সোজা হয়ে বস, তাহলে তা তোমার জন্য সাহায্যকর হবে। যদি তুমি এইরকম সোজা হয়ে বস, তাহলে সেটি খুব ভাল। এটি সাহায্য করতে পারে, মনোসংযোগে, এমন কি শ্রবণ কীর্তনের সময়। তাই এইসব প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়ে খুব একটা কড়াকড়ি করি না। কিন্তু তিনি ব্রহ্মাচারী ছিলেন, তিনি সেইভাবে বসতে পারতেন। সেটি হচ্ছে ব্রহ্মচারীর লক্ষণ। তিনি কোন ভণ্ড ব্রহ্মচারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রকৃত ব্রহ্মচারী। হ্যাঁ।