BN/Prabhupada 0714 - লাভ যাই হোক না কেন, আমি কেবল কৃষ্ণের জন্য কথা বলব



Lecture on SB 1.16.24 -- Hawaii, January 20, 1974

কাল, সময় অত্যন্ত শক্তিশালী সময়ে সবকিছুই করা যায়। কালের প্রভাবে তুমি সুখী হতে পার কালেড় প্রভাবে তুমি দুঃখী হতে পার, অনেক দুঃখী , অনেক বিষাদগ্রস্ত হতে পার। কাল তোমাকে অনেক কিছু দিতে পারে। আর কাল হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । কালরূপেন তুমি ভগবদ্গীতায় একাদশ অধ্যায়ে পাবে যে আমি এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না... "আপনি কে? বিরাট রূপ। বিশ্বরূপ। অর্জুন জিজ্ঞাসা করেলেন, " হে প্রভু আপনি কে? তখন ভগবান বললেন, "আমিই কালরূপ।" এখন আমি এসেছি তোমাদের সবাইকে ধ্বংস করতে। তাই আমাদের কাজ হবে যাতে জীবনকে কেবল মাত্র কৃষ্ণভাবনামৃতেই ব্যবহার করা হয়। আর কিছু নয়। সেটিই চৈতন্য মহাপ্রভুর সংস্কৃতি। আর সেটি খুব কঠিন কিছুও নয়। একেবারেই না। কীর্তনীয় সদা হরিঃ (চৈতন্য চরিতামৃত আদি ১৭.৩১) কিন্তু এটি কঠিন। দিনের মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টাই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করা। যারা অভ্যস্ত নয়, তারা কেবল হরিনাম জপ করলে পাগল হয়ে যাবে সেটি (অস্পষ্ট)... তুমি হরিদাস ঠাকুরকে অনুকরণ করতে পারবে না। যে "এখন আমি একটা নির্জন জায়গায় বসে বসে হরে কৃষ্ণ জপ করব"। তা সম্ভব নয়, মহাশয়। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে মনোসংযোগ করতে গেলে পারমার্থিক ভাবে অত্যন্ত উন্নত স্তরে থাকতে হয়। এটা এতোটা সহজ নয়।

সুতরাং নবাগতদের জন্য অনেক ধরণের সেবানিযুক্তি থাকতে হবে নতুন অবস্থায় যদি তুমি উন্নত অবস্থার অনুকরণ কর তাহলে তা কেবল পাগলামিই হবে, নতুন অবস্থায় আমাদের সর্বদা যুক্ত থাকতে হবে। শ্রীকৃষ্ণকে বিভিন্নভাবে সেবা করা যায় বিভিন্নভাবে তুমি কৃষ্ণসেবা করতে পার। কর্মনা মনসা বাচা এতাবজ্জন্ম সাফল্যম্‌ দেহিনাম্‌ ইহ দেহিষু কর্মনা মনসা বাচা শ্রেয় আচরণম্‌ সদা কর্মনা মনসা - আমাদের তিনটি উপায় আছে কাজের মাধ্যমে - কর্মনা, চিন্তার মাধ্যমে - মনসা এবং বাচা - বাক্যের মাধ্যমে আমরা কর্মনা মনসা বাচা-র দ্বারা কাজ করতে পারি তাই এই ত্রিদণ্ড সন্ন্যাস মানে আসলে চারটি দণ্ড আছে। একটি দণ্ড হচ্ছে সেই ব্যক্তির প্রতীক আর বাকী তিনটি দণ্ড - সেইগুলি কায়, মন ও বাক্যের প্রতীক। এই দণ্ড মানে হচ্ছে, সম্ভবত তোমরা জান, অথবা জান না। কিন্তু বোঝার চেষ্টা কর ... কর্মনা- এই দণ্ড মানে হচ্ছে " আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এখন থেকে আমি আমার যা কিছুই রয়েছে না কেন সবকিছুই নিযুক্ত করব।" আমার সম্পদ আছে আমি শরীর দিয়ে কাজ করি, আমার মনের দ্বারাও কাজ করি, এবং বাক্যের দ্বারাও কাজ করতে পারি তাই এই ত্রিদণ্ড সন্ন্যাস মানে হল যিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন অর্থাৎ কায়, মন ও বাক্যকে নিযুক্ত করেছেন। সেটিই ত্রিদণ্ড সন্ন্যাস। যে ব্যক্তিই তাঁর কায়, মন ও বাক্যকে শ্রীকৃষ্ণ সেবায় পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছেন তিনিই সন্ন্যাসী সন্ন্যাসী মানে কেবল পোশাক বদলানো আর মনে মনে অন্য চিন্তা করা নয়। না। সন্ন্যাসী মানে ... কেউ তাঁর পোশাক বদলেছে কি না সেটি বড় ব্যাপার নয়। যদি তিনি তাঁর কায়, মন ও বাক্যকে পূর্ণরূপে যুক্ত করেছেন তাহলে তিনিই সন্ন্যাসী।

অনাশ্রিত কর্মফলম্‌ কার্যম্‌ কর্ম করোতি যঃ, স সন্ন্যাসী (গীতা ৬.১) শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন সন্ন্যাসী কে? অনাশ্রিত কর্মফলম্‌ "আমি শ্রীকৃষ্ণের জন্য কর্ম করব" তাহলে লাভ কি পাব? "কি লাভ পেলাম সেটি বড় ব্যাপার না আমার কাছে, আমি কেবল শ্রীকৃষ্ণের জন্য কথা বলব। ব্যাস্‌" স সন্ন্যাসী । শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন। "এটি আমার কর্তব্য, কার্যম্‌" কার্য মানে কর্তব্য "আমার কাজ কেবল শ্রীকৃষ্ণের সেবার জন্য কথা বলা, আর কিছু না। আমি অন্য কিছু বলব না।" সেই ব্যক্তিই সন্ন্যাসী । অনাশ্রিত কর্মফলম্‌ ... এখন তুমি যদি তোমার হয়ে কথা বলার জন্য কোন আইনজীবীকে কোর্টে লাগাও "এক্ষুনি আমাকে দুই হাজার ডলার দিন"। সে টাকা নেবে, কিন্তু একজন সন্ন্যাসী, সে চব্বিশ ঘণ্টা শ্রীকৃষ্ণের জন্য কথা বলবে, কোন কিছু পাবার প্রত্যাশায় নয়। তিনিই হচ্ছেন সন্ন্যাসী । চব্বিশ ঘণ্টা শ্রীকৃষ্ণের সেবাউ কায় মন ও বাক্যকে নিযুক্ত করা। সেই-ই সন্ন্যাসী । চব্বিশ ঘণ্টা কৃষ্ণচিন্তা করা - তিনিই সন্ন্যাসী। এই হচ্ছে সন্ন্যাসীর কাজ। আর কিছু নয়। অনাশ্রিত কর্মফলম্‌ কার্যম্‌ কর্ম ... সকলেই নিজের লাভের জন্য কাজ করছে। "আমি কত টাকা পাব" - কেবল এই চিন্তা। "আমি কতটা নাম-যশ পাব?" নিজের লাভের জন্য। সেইটি জাগতিক। সেটি জাগতিক। যেই মাত্র তুমি তোমার নিজের লাভের বা স্বার্থের জন্য কিছু করবে সেটিই জাগতি হয়ে যাবে। আর যেই মাত্র তুমি শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্যে, তাঁর লাভের জন্য কাজ করবে, তা চিন্ময় হয়ে যাবে। ব্যাস্‌। এই হচ্ছে জড় আর চিন্ময়ের পার্থক্য।