BN/Prabhupada 0732 - আমি কোন আকাশ-বাতাসকে সেবা করতে পারি না। আমাকে অবশ্যই কোন ব্যক্তিবিশেষকে সেবা করতে হবে



Room Conversation with Yoga Student -- March 14, 1975, Iran

প্রভুপাদঃ সুফিবাদ মানে কি? এর সাহিত্যিক অর্থ কি?

যোগী ছাত্রঃ এক অর্থে সুফিবাদ হচ্ছে হিন্দু প্রসঙ্গে ভক্তিযোগ যা তাই।

প্রভুপাদঃ ভক্তিযোগ মানে হচ্ছে ভগবানের প্রতি সেবা নিবেদন। এটিই বোঝায় কি?

যোগী ছাত্রঃ ঠিক তাই।

প্রভুপাদঃ তাহলে ভগবানকে যদি সেবা করতে হয়, তবে তাঁকে অবশ্যই একজন ব্যক্তি হতে হবে; তা না হলে সেবা করার প্রশ্ন কোথায়?

যোগী ছাত্রঃ সুফিরা ঈশ্বরের ব্যক্তিগত দিকটি দেখতে পান ......

প্রভুপাদঃ যদি কেউ ব্যক্তি না হন, তাহলে কি করে আমি তার সেবা করবো? আমি আকাশ কিংবা বাতাসকে সেবা করতে পারিনা। আমাকে অবশ্যই একজন ব্যক্তিকে সেবা করতে হবে। ভালোবাসা কখনও আকাশ কিংবা বাতাসে থাকতে পারে না। এটিকে অবশ্যই একজন ব্যক্তি হতে হবে। স্ত্রী অথবা পুরুষ, এটি ব্যাপার নয়। অন্যথায় কোথায় ভালোবাসা? কাকে ভালবাসি?

যোগী ছাত্রঃ সুফিরা এই রূপগুলোতে ভালোবাসা খুঁজে পায় ...... যেমন, সূফী ইবনে আরাবী, একজন সুন্দরী রমণীর মুখমণ্ডলের মধ্য দিয়ে......

প্রভুপাদঃ সুন্দরী নারীর মুখমণ্ডলের মধ্য দিয়ে?

যোগী ছাত্রঃ হ্যাঁ। প্রভুপাদঃ জড়বাদীরাও এখানে খুঁজে পায়।

যোগী ছাত্রঃ এটি সম্পূর্ণরূপে জড় দিক। প্রভুপাদঃযেই কারণে ইসলাম ধর্মে কোন মূর্তি রূপকে অস্বীকার করা হয়েছে, কারণ তা পরিনামে জড় রূপ বলে মনে হবে। যখনই তারা কোন রূপের চিন্তা করে, তারা জড় রূপের চিন্তা করে, সুন্দরী নারীর মুখ। সেটিই অধপতন। তাই তোমরা জড় রূপ গ্রহণ না করতেই বদ্ধপরিকর হয়ে থাক। এটি হচ্ছে বৈদিক জ্ঞান। অপানি পাদঃ জবনো গ্রহীতা। " তার কোন পা নেই, হাত নেই।" এটি হচ্ছে রূপের অস্বীকার। এর পরেই বেদ বলছে, জবনো গ্রহীতা। " তোমরা তাঁকে যা নিবেদন কর তা তিনি গ্রহণ করতে পারেন।" এর মানে তিনি ...... ভগবানের কোন জড় রূপ নেই, কিন্তু তাঁর রূপ আছে; অন্যথায় তিনি কিভাবে গ্রহণ করেন? তিনি আমার ভালোবাসা কিভাবে বুঝবেন? তাই মূল ইসলামে কোন রূপকে স্বীকার করা হয় না। তো এটি হচ্ছে বৈদিক ব্যাখ্যা, সাকার এবং নিরাকার। রূপহীন মানে কোন জড় রূপ নেই, আর রূপ আছে মানে চিন্ময় রূপ, যুগপৎ। ঠিক যেমন আমি এবং তুমি ... আমরা...... আমি দেহটির ভিতরে রয়েছি, কিন্তু আমি এই দেহটি নই। এই রূপটি "আমি" নই। তাহলে কোথা থেকে এই দেহের রূপটি আসল? কারণ আমার রূপ রয়েছ। সোয়েটারের হাতা আছে কারণ আমার হাত আছে। সোয়েটারটা হচ্ছে আবরণ। যদি আমার রূপ না থাকত, তাহলে সোয়েটারের হাত থাকে কেন, প্যান্টের পা থাকে কেন? কিন্তু প্যান্টটি প্রকৃতপক্ষে পা নয়। আসল পা টি হচ্ছে প্যান্টটির ভিতরে। একইভাবে, এটি আমার রূপ নয়; এটি হচ্ছে প্যান্ট এর মতো, প্যান্টের পা অথবা কোটের হাতার মতো। আসল রূপটি হচ্ছে অভ্যন্তরে, অস্মিন দেহে। এটি জড় রূপ নয়। আসল রূপটি যদি আমি দেখতে পেতাম, তুমি দেখতে পেতে, তাহলে কোন বিবাদ থাকত না, চিন্ময় আত্মা। কিন্তু তারা দেখতে পায়না। তাই তারা বলে " নিরাকার।" যদি এটি নিরাকার বা রূপহীন হত তাহলে বাইরের রূপটি আসল কিভাবে? এটি কিভাবে হতে পারে? দর্জি কোট বানায় কারণ মানুষটির রূপ আছে। যেহেতু কোটটির হাত আছে, তাই এটি সিদ্ধান্ত করা হয় যে, যে মানুষটির জন্য কোটটি বানানো হয়েছে, তার রূপ আছে। তুমি কিভাবে বলতে পার যে রূপ নেই? সমস্যাটি হচ্ছে যে আমরা কোটের রূপটি দেখি, কিন্তু আমরা মানুষের রূপটি দেখিনা। এটি আমার চোখের সমস্যা- এমন নয় যে ভগবান রূপহীন। ভগবান রূপহীন নন।

যোগী ছাত্রঃ ঈশ্বরকে সাধুদের রূপে দেখা যায়। ঈশ্বরকে সাধুদের আকারে দেখা যায়।

প্রভুপাদঃ হুউ? এটি অন্য ব্যাপার, এটি গৌণ। কিন্তু ভগবানের রূপ আছে। এটিই হচ্ছে সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা আমাদের বর্তমান চোখ দিয়ে তা দেখতে পারিনা। এটিই বর্ণনা করা হয়েছে, অতঃশ্রীকৃষ্ণ নামাদি ন ভবেদ্‌ গ্রাহ্যম ইন্দ্রিয়ৈঃ ( ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১.২.২৪৩)। তোমার এই ভোঁতা ইন্দ্রিয় সমূহের দ্বারা ...... একই বিষয়, আমি তোমাকে দেখি। আমি তোমাকে কি দেখি? তোমার দেহ। তুমি আমকে দেখ- আমার দেহ। কিন্তু যখন শরীরটি এখানে থাকে কিন্তু আত্মা থাকেনা, তখন এটি এটি একটি মাটির ঢেলা। তুমি এটিকে লাথি মারতে পারে, কেউ প্রতিবাদ করবে না। একটি মৃত দেহকে যদি তুমি তোমার পা আর বুট দিয়ে থেঁতলিয়ে ফেল, কেউ বলবে না যে " তুমি কেন এমন করছ?" কিন্তু যখনই আত্মা সেখানে থাকবে, যদি কেউ এভাবে চূর্ণ- বিচূর্ণ করে, তৎক্ষণাৎ চারদিক থেকে প্রতিবাদ আসবে, " তুমি কেন এমন করছ?" কাজেই মানুষের আসল রূপ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। তাই তারা বলে রূপহীন।