BN/Prabhupada 0739 - আমরা ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্য একটি অতি সুন্দর মন্দির নির্মাণ করব



Lecture on CC Adi-lila 1.6 -- Mayapur, March 30, 1975

তো চৈতন্য চরিতামৃতের লেখক শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের কারণ বর্ণনা করছেন। কারণটা হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ জানতে চাচ্ছেন, "রাধারানীর মধ্যে কি আছে?" তিনি হচ্ছেন মদন মোহন। শ্রীকৃষ্ণের আরেকটি নাম হচ্ছে... । তিনি আকর্ষণীয়। শ্রীকৃষ্ণ প্রত্যেকের কাছে আকর্ষণীয়; এমনকি তিনি কামদেব মদনকেও আকর্ষণ করেন। মদন জড়-জগতে আকর্ষণীয়, আর তিনি হচ্ছেন মদন মোহন। আর শ্রীমতি রাধারানী হচ্ছেন মদনমোহন মোহিনী, মানে তিনি মদনমোহনকেও মোহিত করেন। তাই শ্রীকৃষ্ণ জানতে চাচ্ছেন, "রাধারানীর মধ্যে এমন কি আছে যা দ্বারা তিনি আকর্ষণ করেন? আমি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড আকর্ষণ করি, আর সে আমাকে আকর্ষণ করে।"

তো এই অনুভূতি নিয়ে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, তৎ ভাব-আঢ্যঃ লোভাৎ। (CC Adi 1.6) এগুলো হচ্ছে চিন্ময় প্রেমের ভাব। লোভাতঃ অনুভব করার লোভবশত। তৎ ভাব-আঢ্যঃ‌ সমজনিঃ "তিনি শচী মাতার গর্ভে আবির্ভূত হয়েছেন।" সমজনি শচীগর্ভসিন্ধৌ হরীন্দুঃ। (CC Adi 1.6) পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীহরি, তিনি চন্দ্রের মতো। আমরা এই মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছি। এই মনোভাব নিয়ে যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন ঠিক চন্দ্রের মতো। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই মায়াপুর ভূমিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই তাঁকে এখানে বলা হয় "চন্দ্র।" তাই আমরা বলি চন্দ্র, মায়াপুর-চন্দ্র। এখন যেমন মায়াপুর-চন্দ্র উদীয়মান হচ্ছেন... উদীয়মান। উদীয়মান মানে তিনি সমগ্র বিশ্বে চন্দ্রালোক বিতরণ করছেন। এটি হচ্ছে চিন্তাধারা, চন্দ্রালোক। শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং শ্রেয়ঃকৈরব। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিজে বলেছেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে নিজেদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখবেন না, কিছু আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য। এটি আবশ্যক নয়। এর প্রয়োজন নেই।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে আরও বেশি করে উদিত হতে দেয়া উচিত। যাতে করে এই সূর্য, চন্দ্রালোক সমগ্র বিশ্বে তাঁর আলো ছড়াতে পারে। এটি প্রত্যাশিত। যার কারণে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অবশ্যই আমরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্য একটি সুন্দর মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করবো। আজ সকাল বেলা এই বিষয়ে আমরা চিন্তা করছিলাম। তাই এই জায়গা হতে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপ চন্দ্র তাঁর আলো বিতরণ করবে। শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং‌ বিদ্যাবধূজীবনম্‌। (চৈচ অন্ত্য ২০.১২)। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এই হরে কৃষ্ণ আন্দোলন... পরম্‌ বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণ-সংকীর্তনম। এই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং বলেছেন। চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নিনির্বাপণং শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং‌ বিদ্যাবধূজীবনম্‌। (চৈচ অন্ত্য ২০.১২)। বিদ্যাবধূজীবনম। এটিই প্রকৃত জ্ঞানদীপ্তি। সমগ্র পৃথিবীর মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। চন্দ্রালোক তাদেরকে আলোকিত করবে। তারা সব মূর্খ, মূঢ়। এটি ভগবতগীতাতেও বলা হয়েছেঃ

ন মামং দুষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ
প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ
মায়য়াপহৃতজ্ঞানা
আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা ৭.১৫)

এই মুহূর্তে এইসমস্ত মূর্খ মানুষেরা... এটি খুবই খুবই দুঃখজনক যে তারা মরেছে খুব বিদ্বান পণ্ডিত, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ হিসেবে। কিন্তু ভগবতগীতায় শ্রীকৃষ্ণের বর্ণনানুসারে, এরা সব মূর্খ আর বদমাশ। কেন? ন মাম্‌ দুষ্কৃতিণ মূঢ়াঃ প্র...। তারা শ্রীকৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি। শ্রীকৃষ্ণ এই ব্রহ্মাণ্ডের এই গ্রহে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এটি প্রচার করার জন্য যে "আত্মসমর্পণ কর।" সর্বধর্মান্‌ পরিত্যজ্য মামেকং (শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৮.৬৬)। কিন্তু তারা করেনি। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীকৃষ্ণের একজন ভক্ত রূপে... তিনি শ্রীকৃষ্ণ।

নমো মহাবদান্যায়
কৃষ্ণপ্রেমপ্রদায় তে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য
নাম্নে...
(চৈচ মধ্য ১৯.৫৩)।

তিনি শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত দয়ালু। প্রথমে তিনি পরম পুরুষোত্তম ভগবান রূপে এসেছিলেন। এবং তিনি ভগবানের আদেশ বলে দাবি করেছিলেন,"আমার নিকট আত্মসমর্পণ কর।" কিন্তু মানুষ তা করেনি। তাই শ্রীকৃষ্ণ আবার এসেছেন ভক্ত রূপে, কৃষ্ণ চৈতন্য নাম্নে, এখন তিনি তোমাদের শুধু কৃষ্ণই নয় কৃষ্ণ প্রেম দিতেও প্রস্তুত, উন্মুক্তভাবে। এটি গ্রহণ কর আর সমগ্র বিশ্বে তা বিতরণ কর। এটিই প্রয়োজন।

অস্যংখ্য ধন্যবাদ।

ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ। (সমাপ্ত)