BN/Prabhupada 0783 - আমরা এই জড় জগতে ভোগের মনোবৃত্তি নিয়ে এসেছি। তাই আমরা পতিত



Lecture on BG 1.21-22 -- London, July 18, 1973

শ্রীকৃষ্ণকে এখানে অচ্যুত বলে সম্বোধন করা হয়েছে। চ্যুত মানে পতিত, এবং অচ্যুত মানে যিনি কখনও পতিত হন না। ঠিক যেমন আমরা পতিত জীব। বদ্ধ জীব। এই জড় জগতে আমরা ভোগ করার মানসিকতা নিয়ে এসেছি তাই আমরা পতিত কেউ যদি তাঁর সঠিক অবস্থানে থাকেন তাহলে তিনি পতিত হন না না হলে সে পতিত। সেটিই হচ্ছে পতিত অবস্থা এই জড় জগতে সমস্ত জীবেরা ব্রহ্মা থেকে শুরু করে একটি নগন্য ক্ষুদ্র পিপীলিকা পর্যন্ত সবাই চ্যুত, বদ্ধ জীব। তারা কেন চ্যুত।

কৃষ্ণ ভুলিয়া জীব ভোগ বাঞ্ছা করে
পাশেতে মায়া তারে জাপটিয়া ধরে
(প্রেম বিবর্ত)

চ্যুত বা পতিত মানে জীব যখন জড় মায়া শক্তির গ্রাসে থাকে তখন তাকে বলা হয় পতিত ঠিক যেমন যখন একটি লোক পুলিশের অধীনে থাকে বুঝতে হয় যে সে একজন অপরাধী, সে পতিত সে তার সুনাগরিকের পদ থেকে পতিত ঠিক তেমনই, আমরা সকলেই শ্রীকৃষ্ণের অংশ। মমৈবাংশো জীব-ভূত (গীতা ১৫/৭) অংশ হিসেবে আমাদের পদ হচ্ছে যে আমাদের শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে থাকার কথা যেমন এই আঙ্গুলটি আমার দেহের অংশ। এই আঙ্গুলটির অবশ্যই উচিৎ আমাদের দেহের সাথেই লেগে থাকা যখন এই আঙ্গুলটি কাটা এবং পড়ে গেছে যদিও এটি আঙ্গুলই থাকে, কিন্তু তা আর এতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যেটি আগে দেহের সাথে যুক্ত থাকা অবস্থায় ছিল। তাই যেই পরমেশ্বর ভগবানের সেবার সঙ্গে যুক্ত নয়, সে পতিত। এই হচ্ছে সিদ্ধান্ত। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ পতিত নন।

যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ আমাদের উদ্ধার করতে আসেন

যদা যদা হি ধর্মস্য
গ্লানির্ভবতি ভারত
অভ্যুত্থানম্‌ অধর্মস্য
তদাত্মনম্‌ সৃজাম্যহম্‌
(গীতা ৪/৭)

ভগবান বলেছেন, "যখনই ধর্মের গ্লানি বা জীবের মূল স্বরূপ ধর্ম পালনের অবক্ষয় হয় তখনই আমি আবির্ভূত হই।" ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি। ধর্মকে সাধরণ দৃষ্টিতে লোক যা ধর্ম বলে মনে করে, আমরা সেভাবে ধর্ম শব্দের অনুবাদ করি না। ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী ধর্ম মানে এক ধরণের বিশ্বাস। বিশ্বাস বদলাতে পারে। কিন্তু ধর্ম এমনই একটি বস্তু যা বদলাতে পারে না। যদি তা বদলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি কৃত্রিম। ঠিক যেমন জল। সবাই জানে জল হচ্ছে তরল। কিন্তু কখনও কখনও জল খুব শক্ত হয়ে যায়, বরফে পরিণত হয় সেটি জলের স্বাভাবিক অবস্থা নয় কৃত্রিমভাবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বা কোন কৃত্রিম উপায়ে জল কঠিন পদার্থে পরিণত হয়েছে কিন্তু জলের স্বাভাবিক অবস্থা হচ্ছে তরল।

তাই আমরা যখন ভগবানের সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি, সেটিও অস্বাভাবিক অবস্থা। স্বাভাবিক অবস্থাটি হচ্ছে আমাদেরকে অবশ্যই ভগবানের সেবায় যুক্ত থাকতে হবে সেটিই আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা তাই একজন বৈষ্ণব কবি বলেছেন, "কৃষ্ণ ভুলিয়া জীব ভোগবাঞ্ছা করে" (প্রেম বিবর্ত) যখন জীব ভগবানকে বা তাঁর দিব্য অবস্থানকে ভুলে যায় ... শ্রীকৃষ্ণের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলছেন, ভোক্তারম্‌ যজ্ঞতপসাম্‌ সর্বলোক মহেশ্বরম্‌ (গীতা ৫/২৯) "আমিই অধীশ্বর, আমিই ভোক্তা"। এইটি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অবস্থান। তিনি কখনও তাঁর সেই অবস্থান থেকে পতিত হন না। তিনি ভোক্তা। তিনি সর্বদা সেই অবস্থানেই থাকেন। তিনি কখনও সেই পদ থেকে চ্যুত হন না। তিনি কখনও ভোগ্যা অবস্থানে আসেন না। সেটি সম্ভব নয়। যদি তুমি মনে কর যে তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ্যার স্তরে নিয়ে আসবে, অর্থাৎ তাঁকে ভোগ করবে, তাহলে তুমি পরাজিত হলে তাঁকে ভোগের অবস্থানে নিয়ে আসা মানে হচ্ছে কৃষ্ণকে সামনে রেখে "আমি কিছু লাভ করে নিতে চাই বা ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ করতে চাই" সেটি আমাদের অস্বাভাবিক অবস্থা। শ্রীকৃষ্ণ কখনই সেই অবস্থানে আসতে স্বীকার করবেন না। কখনই না। কৃষ্ণকে ভোগ করা যায় না। তিনি সর্বদাই ভোক্তা। তিনি সর্বদাই মালিক। তাই কৃষ্ণ ভুলিয়া জীব - কথাটির অর্থ হচ্ছে যখন আমরা শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃত অবস্থানটি ভুলে যাচ্ছি যে তিনি হচ্ছেন পরম ভোক্তা। তিনিই সর্বোচ্চ মালিক ভুলে যাওয়া। যেই মুহূর্তে আমি ভাবছি "আমি ভোক্তা, আমি মালিক" সেটিই আমার অধঃপতিত অবস্থা "কৃষ্ণ ভুলিয়া জীব ভোগবাঞ্ছা করে " জাপটিয়া ধরে... তৎক্ষণাৎ মায়া আমাদের জাপটে ধরবে ।