BN/Prabhupada 0797 - যারা কৃষ্ণের হয়ে এই কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছে, তারা মহান যোদ্ধা



Arrival Address -- Vrndavana, September 3, 1976

প্রভুপাদঃ বৈদিক জ্ঞান মানে প্রকাশ এই জ্ঞান তথাকথিত জড় বিদ্যা বা পাণ্ডিত্য বা ব্যাকরণ দিয়ে বোঝার জ্ঞান নয় বৈদিক জ্ঞান কেবল সেই ব্যক্তির দ্বারা বোঝা সম্ভব যে শ্রীগুরুদেবের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস লাভ করেছে। গুরু মানে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি - কৃষ্ণ এবং তাঁর প্রতিনিধি এটি আমরা বারবার ব্যাখ্যা করেছি যে গুরু মানে ভগবানের আদর্শ প্রতিনিধি গুরু মানে জাদুকর বা ভেলকিবাজি নয় সেটি গুরু নয়। গুরু মানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু খুব সহজ ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে গুরু হওয়া যায় তিনি সবাইকে আদেশ করেছেন, বিশেষ করে যারা ভারতবর্ষে জন্মেছে ভারতভূমিতে হইল মনুষ্য জন্ম যার (চৈতন্য চরিতামৃত আদি ৯/৪১) বিশেষ করে আমরা ভারতীয়রা , সারা বিশ্বের গুরু হবার সুযোগসুবিধা আছে আমাদের কাছে। আমাদের সেই সুবিধা আছে কারণ এখানে আমরা সমস্ত বৈদিক গ্রন্থ গুলো পাচ্ছি বিশেষত ভগবদগীতা। ভগবান নিজে তা বলে গেছেন। যদি আমরা জীবনের উদ্দেশ্য কি তা বুঝতে পারি এবং তা প্রচার করি তাহলে আমরা গুরু হতে পারব আর যদি তুমি তথাকথিত স্বামী , যোগী এসব হয়ে লোক ঠকাতে চাও, তাহলে গুরু হতে পারবে না মহাপ্রভু বলেছেন, তোমরা সবাই বিশেষ করে ভারতীয়রা গুরু হও "আমার আজ্ঞায় গুরু হইয়া তার এই দেশ" এবং আমি কীভাবে গুরু হতে পারি? যারে দেখ তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ। ব্যাস্‌

সুতরাং এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের অর্থ হচ্ছে চৈতন্য মহাপ্রভুর আদেশ পালন করা আর মহাপ্রভুর নির্দেশ হচ্ছে কৃষ্ণ উপদেশ আর এই হচ্ছে কৃষ্ণ উপদেশঃ ন মাম্‌ দুষ্কৃতিন মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ (গীতা ৭/১৫) এটি আমাদের বানানো কথা নয়, এটি কৃষ্ণ উপদেশ যে, "সেই ব্যক্তি কৃষ্ণের শরণাগত হয় না, সে দুষ্কৃতিন, সে তৎক্ষণাৎ এই চার ধরণের লোকের মধ্যে পড়বে"। তারা কারা? "দুষ্কৃতিন, মূঢ়া, নরাধমাঃ, মায়য়াপহৃত জ্ঞানা এবং আসুরীম্‌ ভাবমাশ্রিতা" খুব সহজ। মূঢ় কে? যে ব্যক্তি কৃষ্ণের শরণাগত হয় না, যে জানে না যে শ্রীকৃষ্ণ কে। সে হয় দুষ্কৃতিন, মানে পাপী, নয়তো মূঢ়া , মূর্খ। নরাধমা, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য এবং মায়য়াপহৃত জ্ঞানা। এবং তার পড়াশোনা বিদ্যা ডিগ্রি সবকিছুই মূল্যহীন কারণ প্রকৃত জ্ঞান তার থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে , মায়য়াপহৃতজ্ঞানা। কোন ঝগড়ার দরকার নেই ... কিন্তু আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে সাধারণত এই লোকগুলো কি এরা এই চার ধরণের লোকেদের মধ্য

এবং আমাদেরকে ওদের সামনাসামনি হতে হবে আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন হচ্ছে এই সব মূর্খদের সামনা হওয়া দুষ্কৃতিন, মূঢ়া, নরাধমাঃ, এবং তাদের অনুরোধ করা যে তারা যেন কৃষ্ণ ভাবনাময় হয়। এই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন তুমি কেবল একটা নির্জন স্থানে বসে তোমার আভিজাত্য দেখাতে পার না হরিদাস ঠাকুরকে অনুকরণ করে। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ। না। তোমাকে প্রচার করতে হবে। সেটিই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আদেশ "আমার আজ্ঞায় গুরু হইয়া তার এই দেশ" (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ৭/১২৮) সেটিই হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে অনুসরণ করা। হরিদাস ঠাকুরকে অনুকরণ করা নয়। তা সম্ভব না। তুমি করতে পার... এমন কি যদি তা ভালভাবে করেও থাকো, সেটি তোমার নিরাপত্তার জন্য ধরে নিচ্ছি তুমি তা ভালভাবে করতে পেরেছ, কিন্তু সেটি কেবল তোমার নিজের সুরক্ষার জন্য কিন্তু যারা অন্যের কল্যাণের জন্য নিজে বিপদজনক পরিস্থিতিকে স্বীকার করছে, তাঁকে খুব দ্রুতই ভগবান তাঁকে স্বীকার করবেন।

ন চ তস্মান্‌ মনুষ্যেসু
কশ্চিন্‌ মে প্রিয়কৃত্তম্‌
(গীতা ১৮/৬৯)
য ইদম্‌ পরমম্‌ গুহ্যম্‌
মদ্‌ ভক্তেষু আভিধাস্যতি
(গীতা ১৮/৬৮)

তাই যদি তুমি এসবের সামনাসামনি হও... ঠিক যেমন যোদ্ধাদের মতো। তারা দেশের জন্য বিপদের সামনা হচ্ছে, তারা এইভাবে পরিচিতি পাচ্ছে। ঠিক তেমনই, যারা শ্রীকৃষ্ণের হয়ে এই যুদ্ধ লড়ছে, মানুষদের কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করাতে চেষ্টা করছে, তারা মহান যোদ্ধা।

তাই আমি খুব খুশি, বিশেষ করে তোমরা ইউরোপিয়ান বা আমেরিকানরা আমাকে সাহায্য করছ এই আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিতে এবং ভগবানের দ্বারা স্বীকৃত হবার জন্য এটি খুবই সহজ পন্থা। কারণ তিনি বলেছেন, ন চ তস্মান্‌ মনুষ্যেসু কশ্চিন্‌ মে প্রিয়কৃত্তমঃ (গীতা ১৮/৬৯) কে? যিনি এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন প্রচার করছেন সুতরাং আমি তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যে তোমরা সকলে বৃন্দাবন এসেছ এবং তোমরা ভ্রমণ করছ, প্রচার করছ। চলো, আমরা সকলেই এই জীবনটা সারা বিশ্বজুড়ে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারে উৎসর্গ করি। আমরা যদি প্রচার করতে করতে মরেও যাই, তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা মহিমান্বিত হব।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ