BN/Prabhupada 0882 - শ্রীকৃষ্ণ আমাদের তাঁর আলয়ে ফিরিয়ে নিতে অত্যন্ত ব্যাকুল, কিন্তু আমরা একগুঁয়ে



730413 - Lecture SB 01.08.21 - New York

শ্রীকৃষ্ণ আমাদের তাঁর আলয়ে ফিরিয়ে নিতে অত্যন্ত ব্যাকুল, কিন্তু আমরা একগুঁয়ে তোমার সীমিত জ্ঞানের দ্বারা তুমি অসীমকে জানতে পার না , তা সম্ভব নয় তাই কুন্তীদেবীর মতো ভক্তদের আশীর্বাদে আমরা বাসুদেবকে জানতে পারি সর্বব্যাপী পরম সত্য, পরমাত্মা বাসুদেব এখানে আছেন কৃষ্ণায়া বাসুদেবায় (ভাগবত ১/৮/২১) মায়াবাদীরা বহু বহু জন্মের পর এই বাসুদেব উপলব্ধির স্তরে আসতে পারে খুব সহজে নয়।

বহুনাম্‌ জন্মনামন্তে
জ্ঞানবান্‌মাম্‌ প্রপদ্যতে
বাসুদেবঃ সর্বমিতি
স মহাত্মা সুদুর্লভঃ
(গীতা ৭/১৯)

সুদুর্লভ - অত্যন্ত দুর্লভ। মহাত্মা - মহান হৃদয় যার। কিন্তু যারা শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারে না, তারা সঙ্কীর্ণ মানসিকতার। তারা মহাত্মা বা উদার মানসিকতার নয় যদি কেউ উদার মনোভাবের হন, তাহলে কৃষ্ণের কৃপায় তিনি কৃষ্ণকে জানতে পারেন

সেবোন্মুখে হি জিহবাদৌ (ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১.২.২৩৪) , পদ্ধতিটি হচ্ছে সেবার দ্বারা সেবা। বাসুদেব উপলব্ধি জিহ্বার দ্বারা শুরু হলেই তা সম্ভব প্রথম সেবা হচ্ছে শ্রবণম্‌ কীর্তনম্‌ (ভাগবত ৭/৫/২৩) হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ কর, বারবার শ্রবণ কর এবং প্রসাদ গ্রহণ কর এই দুটি হচ্ছে জিহ্বার কাজ তুমি উপলব্ধি করতে পারবে। খুবই সরল পন্থা সেবোন্মুখে হি জিহবাদৌ স্বয়ম্‌ ... কৃষ্ণ নিজেকে প্রকাশ করবেন, এমন নয় যে তোমার প্রচেষ্টার দ্বারা তুমি কৃষ্ণকে জানতে পারবে কিন্তু যদি তোমার প্রচেষ্টায় প্রেমময়ী সেবা থাকে তাহলে সেটি তোমাকে যোগ্য বানাবে কৃষ্ণ প্রকাশ করবেন। স্বয়মেব স্ফুরত্যদঃ কৃষ্ণ তোমাকে তাঁর ধামে, তাঁর আলয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত ব্যাকুল কিন্তু আমরা একগুঁয়ে , আমরা যেতে চাই না। তাই তিনি সর্বদাই সুযোগ দেখছেন কীভাবে আমাকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেয়া যায়, তাঁর ধামে। ঠিক যেমন স্নেহময় পিতা। বদমাশ ছেলে তাঁর পিতাকে পরিত্যাগ করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, কোন আশ্রয় নেই, কোন খাবার নেই, খুব ভোগান্তি পোহায় পিতা তাঁর সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকেন তেমনই কৃষ্ণ আমাদের পরম পিতা এই জড় জগতে সমস্ত জীবেরা ঠিক যেন ধনী ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়া, রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা উদ্ভ্রান্ত সন্তানের মতো তাই মানব সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে সেই ব্যক্তিকে কৃষ্ণভাবনামৃত দান করা সবচেয়ে বড়... তুমি এমন কোন উপকার আর দিতে পারবে না, কোন জাগতিক লাভ প্রাপ্তিই জীবাত্মাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না যদি তাঁকে কৃষ্ণভাবনামৃত দেয়া হয়... সেই একই পদ্ধতি একটি বিপথগামী ছেলে যেভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় যদি তাকে মনে করিয়ে দেয়া যায় যে, "ওহে বালক, তুমি এত দুঃখভোগ করছ কেন? তুমি অমুক অমুক ধনী ব্যক্তির সন্তান। তোমার পিতার তো কত সম্পত্তি আছে। তুমি কেন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছ?" আর যদি এতে করে সে তার চেতনায় ফিরে আসে, "ওহ্‌ হ্যাঁ আমি অমুক বড় ধনী ব্যক্তির সন্তান। আমি কেন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব?" তাহলে সে বাড়ি ফিরে যাবে। যদ্‌ গত্বা ন নিবর্তন্তে (গীতা ১৫/৬)

তাই এটিই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল সেবা যে এটা তোমাকে জানানো যে "তুমি শ্রীকৃষ্ণের অংশ। তুমি তাঁর সন্তান। শ্রীকৃষ্ণ ঐশ্বর্যশালী। ছয় ধরণের ঐশ্বর্য। তুমি কেন এখানে ঘুরছ, এই জগতে পচে মরছ কেন?" তাই এটাই সর্বোচ্চ সেবা। কৃষ্ণভাবনামৃত। কিন্তু মায়া খুবই শক্তিশালী। তারপরও সমস্ত ভক্তদের কর্তব্য যে সকলকে কৃষ্ণভাবনামৃতে আলোকিত করা। ঠিক যেমন কুন্তীদেবী বলছেন প্রথমে তিনি বললেন, অলক্ষ্যম্‌ সর্বভূতানাম্‌ অন্তর্বহিঃ অবস্থি (ভাগবত ১/৮/১৮) যদিও পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভেতরে এবং বাইরে আছেন তবু মূর্খ এবং বদমাশদের কাছে তিনি অলক্ষ্য, অদৃশ্য। তাই তিনি বলছেন, এই হচ্ছেন ভগবান, কৃষ্ণায় বাসুদেবায় (ভাগবত ১/৮/২১) তিনি সর্বব্যাপ্ত পরমেশ্বর ভগবান কিন্তু তাঁর আনন্দ দেবকীর পুত্র হয়েই। দেবকীনন্দনায়। দেবকীনন্দনায়। দেবকীনন্দন শব্দটি অথর্ববেদেও আছে শ্রীকৃষ্ণ দেবকীনন্দন রূপে আসেন। এবং তাঁর পালক পিতা নন্দগোপ, নন্দ মহারাজ।