BN/Prabhupada 0887 - ব্যক্তি ভাগবত অথবা গ্রন্থ ভাগবত। সর্বদা তাঁদের সেবা কর। তবেই তুমি দৃঢ় হবে



750522 - Lecture SB 06.01.01-2 - Melbourne

বেদ মানে জ্ঞান। অন্ত মানে শেষ স্তর বা শেষ। আমরা প্রকৃতির নিয়মে আবদ্ধ। তুমি বলতে পার না যে তুমি স্বাধীন প্রকৃতির নিয়ম খুব কঠোর। প্রকৃতে ক্রিয়মানানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ (গীতা ৩/২৭) প্রকৃতির নিয়ম... ঠিক যেমন আগুন, তুমি যদি সেটি স্পর্শ কর, তাহলে এটি পুড়িয়ে দেবে এবং এমনকি একটি অবোধ শিশুও যদি তা স্পর্শ করে তবুও তা পুড়িয়ে দেবে কোন অজুহাত চলবে না। তুমি বলতে পার না যে "শিশু তো অবোধ ও তো আগুনের প্রভাব জানে না, তাই আগুনের উচিৎ নয় ওকে পুড়িয়ে দেয়া।" না। অজ্ঞানতা কোন অজুহাত নয়। বিশেষ করে... সেটি দেশের আইন। তুমি বলতে পার না... ধর তুমি একটা অপরাধমূলক কাজ করেছ যদি তুমি অনুনয়-বিনয় কর, "সাহেব, আমি জানতাম না, যে... এই কাজ করলে আমাকে কারাদণ্ড পেতে হবে তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।" না। তাকে ক্ষমা করা হবে না তুমি আইন জান আর নাই জান তুমি যে কাজ করেছ তার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে। এটাই চলছে

তাই এখন আমরা পরজন্মে বিশ্বাস করি না কেবল এই পরিণাম ভোগার ভয়ে কিন্তু তা বলে আমাদের ক্ষমা করা হবে না। আমাদের সেই ধরণের একটি দেহ গ্রহণ করতে হবে অন্যথায় কীভাবে এত ধরণের দেহ এলো? তার ব্যাখ্যা কি? কেন ভিন্ন ভিন্ন ধরণের দেহ, ভিন্ন স্তরের দেহ, ভিন্ন মানের দেহ? সেটিই প্রকৃতির নিয়ম। তাই এই মানব জন্ম যথার্থভাবে ব্যবহার করা উচিৎ কেবল কুকুর বেড়ালের মতো ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য নয় সেটি কোন দায়িত্বপূর্ণ জীবন নয়। দায়িত্বপূর্ণ জীবন মানে, "আমি কুকুর বেড়ালের চেয়ে উন্নত এই দেহ পেয়েছি, এবং আমি কুকুর বেড়ালের থেকে উন্নত মানের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আমি যদি এই দেহ কেবল এই চারটি দেহগত কাজের জন্যই ব্যবহার করি..." চারটি দেহগত প্রয়োজনীয়তা মানে আমাদের কিছু খাবার দরকার কুকুর, বেড়াল, মানুষ, বা উচ্চ আদালতের বিচারক সে কারোরই কিছু না কিছু খেতে হয় তাদের ঘুমের দরকার, এপার্টমেন্ট। তাই... কুকুর বেড়াল এপার্টমেন্ট ছাড়াই ঘুমাতে পারে, কিন্তু ঘুম লাগবে। সেটি বাস্তব। আহার লাগবে, সেটি বাস্তব। এবং যৌন জীবন। সেটিও বাস্তব। এবং প্রতিরক্ষা সেটাও একটা বাস্তবতা কিন্তু এই জিনিসগুলো কুকুর বেড়াল এবং মানুষের মধ্যে সাধারণ

তাহলে মানুষ দেহের বিশেষ সুবিধাটি কি? মানব দেহের বিশেষ সুবিধা এই যে মানুষ বিচার করতে পারে যে "আমি এই আমেরিকান বা অস্ট্রেলিয়ান দেহ বা ভারতীয় দেহ পেয়েছি। তাহলে এর পর আমার কি করা উচিৎ? এর পর কি দেহ পাব?" সেটাই হচ্ছে মানব বুদ্ধিমত্তার যথার্থ প্রয়োগ। একটা কুকুর বেড়াল এই ভাবে চিন্তা করতে পারবে না অতএব, আমাদের কাজ হওয়া উচিৎ, "এখন প্রকৃতির ব্যবস্থায় আমি জীবনের বিবর্তনে এই দেহে আছি এখন আমার উন্নত বুদ্ধিমত্তা আছে। আমার কীভাবে তা প্রয়োগ করা উচিৎ?"

যথার্থ প্রয়োগের কথা বেদান্ত দর্শনে বলা হয়েছে বেদান্ত দর্শন, সম্ভবত তোমরা এর নাম শুনেছ বেদ মানে জ্ঞান। এবং অন্ত মানে শেষ ধাপ বা শেষ। সবকিছুরই একটা শেষ আছে। তুমি শিক্ষা পেয়েছ। তুমি শিক্ষা গ্রহণ করছ এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? সেটাই হচ্ছে বেদান্ত। শেষ বিন্দুটি কি ?

বেদান্ত দর্শন বলে... বেদান্ত দর্শন মানে চরম জ্ঞান পরম জ্ঞান। সেটি ভগবদগীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেই পরম জ্ঞানটি কি? বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যম্‌ (গীতা ১৫/১৫)

তুমি জ্ঞানচর্চা করছ। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, জ্ঞানের চরম উদ্দেশ্য, জ্ঞাতব্য হলাম 'আমি' বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যম্‌ সমস্ত জ্ঞানের প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ভগবানকে জানা। সেটিই জ্ঞানের চরম সীমা প্রগতিশীল জ্ঞানের মাধ্যমে তুমি প্রগতি লাভ করবে কিন্তু যতক্ষণ না তুমি ভগবান কে , তা জানতে পারছ, ততক্ষণ তোমার জ্ঞান অপূর্ণ। তাকে বলা হয় বেদান্ত। অথাতো ব্রহ্মজিজ্ঞাসা। এই মানব দেহ, ভাল সুযোগসুবিধা, বুদ্ধি ... ঠিক যেমন অস্ট্রেলিয়া অনুন্নত ছিল যখন থেকে ইউরোপীয়রা এসেছে, এখন তা অনেক সম্পদপূর্ণ , উন্নত কারণ এতে বুদ্ধি খাটানো হয়েছে।

ঠিক তেমনি, আমেরিকা , আরও অনেক জায়গা তাই এই বুদ্ধি প্রয়োগ করা উচিৎ, আমরা যদি কেবল এই বুদ্ধি সেই একই কাজে লাগাই যা কুকুর বেড়ালেরা করছে, তাহলে তা যথার্থ ব্যবহার নয় সঠিক ব্যবহার হচ্ছে বেদান্ত। অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা এখন তোমার উচিৎ পরম ব্রহ্মকে জানতে চেষ্টা করা।" সেটিই বুদ্ধি।