BN/Prabhupada 0894 - কর্তব্য করতেই হবে, এমনকি যদি তা কষ্টপূর্ণও হয়। এর নাম তপস্যা



730417 - Lecture SB 01.08.25 - Los Angeles

অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন যে, "তুমি যা বলছ তা সবই ঠিক, যে আমি এই দেহ নই, আমি আত্মা। কেউই এই দেহ নয়। সে আত্মা। এই দেহের বিনাশে..." (পাশ থেকে) ওটা বন্ধ কর। "এই দেহের বিনাশ হলেও আত্মা থাকবে কিন্তু যখন আমি দেখছি যে আমার পুত্র মারা যাচ্ছে, পিতামহ মারা যাচ্ছে, আমি হত্যা করছি আমি কীভাবে আমাকে সান্ত্বনা দেব যে আমার পিতামহ মারা যাচ্ছে না, আমার সন্তান মারা যাচ্ছে না, কেবল দেহের পরিবর্তন হচ্ছে? কারণ আমি তো এইভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত। তাই দুঃখ তো থাকবেই।" শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, সেটা সত্য। তাই তোমাকে অবশ্যই তা সহ্য করতে হবে, ব্যাস্‌। এর আর কোন প্রতিকার নেই।" ত্বাম্‌ তিতিক্ষস্য ভারত।

ভগবান কখনও বলেন নি যে এগুলো বাস্তব না, যখন অর্জুন বললেন যে, "আমি জানি যে আমার সন্তান যখন মারা যাচ্ছে তখন সে দেহের পরিবর্তন করছে, অথবা আমার পিতামহ মারা যাচ্ছে, দেহ পরিবর্তন করছে, আমি সেটা জানি। কিন্তু তারপরও যেহেতু আমি সেই দেহের চামড়ার প্রতি অত্যন্ত আসক্ত, তাই আমাকে দুঃখ পেতেই হচ্ছে"। তখন কৃষ্ণ বলছেন, হ্যাঁ, ভোগান্তি থাকবেই, কারণ তুমিও সেই দেহাত্মবুদ্ধিতেই থাকছ তাই ভোগান্তি থাকবেই, সহ্য করা ছাড়া আর কোন প্রতিকার নেই। আর কোনই সমাধান নেই"। মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণ সুখদুঃখদা (গীতা ২/১৪)

ঠিক যেমন তোমাদের দেশে সকাল বেলা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, স্নান করাটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, কিন্তু তাঁর মানে কি এই যে ভক্তরা স্নান করা বন্ধ করে দেবে? না। যদিও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তবু স্নান করতেই হবে। কর্তব্য করতেই হবে। কর্তব্য করতেই হবে। এমনকি যদি তা অল্পবিস্তর কষ্টসাপেক্ষ হয়, তবুও। এরই নাম তপস্যা। তপস্যা মানে আমরা অবশ্যই আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত কর্তব্য চালিয়ে যাব এই জগতের সমস্ত ধরণের বিপদ এবং দুঃখদুর্দশা থাকা সত্ত্বেও। এরই নাম তপস্যা। তপস্যা মানে জীবনের কঠিন জিনিসগুলো স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে নেয়া। কখনও কখনও তপস্যার পদ্ধতিতে, প্রচণ্ড গ্রীষ্মে মাথাফাটা সূর্যের তাপে, তারপরও চারপাশে আগুন জ্বালিয়ে এইসব কিছুর মাঝখানে বসে তাঁরা ধ্যান করছেন। তপস্যার এইরকম কিছু পন্থা রয়েছে। কনকনে ঠাণ্ডায় গলা সমান জলে দাঁড়িয়ে তাঁরা ধ্যান করেন এগুলো তপস্যার অঙ্গ হিসেবে রয়েছে।

কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তোমাদের এই সব করতে বলছেন না তিনি খুব সুন্দর কার্যক্রম দিয়ে গেছেনঃ নাচ, গাও আর প্রসাদ পাও (হাসি) তবুও আমরা করতে চাই না। আমরা এই তপস্যাটিও নিতে পারি না, এতোটাই অধঃপতিত। সুসুখম্‌ কর্তুম্‌ অব্যয়ম্‌ (গীতা ৯/২), এটি এমন এক ধরণের তপস্যা যা অনুশীলন করা অত্যন্ত সহজ এবং সুখদায়ক। তা সত্ত্বেও আমরা সেটি করতে রাজি না আমরা রাস্তায় পচে মরব, যেখানে সেখানে শুয়ে থাকব, তারপরও, আমি মদ খাব, মৈথুন সুখ ভোগ করব আর রাস্তায় পড়ে থাকব। তাহলে কিই বা আর করা যাবে? আমরা ভাল সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি। এখানে এসো, কীর্তন কর, নাচ, এবং সুখে থাক , প্রসাদ পাও সুখী হও। কিন্তু লোকেরা তা গ্রহণ করবে না। তাই ওদের বলা হয় অভাগা।

তাই চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, এতদৃশী তব কৃপা ভগবন্‌ মমাপি দুর্দৈবম্‌ ঈদৃশম্‌ ইহাজনি নানুরাগঃ (CC Antya 20.16) মহাপ্রভু বলেছেনঃ নাম্নামকারী বহুধা নিজসর্বশক্তি ভগবানেরদিব্য নামে সমস্ত শক্তি দেয়া হয়েছে যেমন কৃষ্ণের অনন্ত শক্তি রয়েছে তেমনই তাঁর নামেও অনন্ত শক্তি আছে তাই নাম্নামকারী বহুধা। কৃষ্ণের বহু নাম আছে তাঁর হাজার হাজার নাম আছে। তার মধ্যে কৃষ্ণ নামটি মুখ্য নাম্নামকারী বহুধা নিজসর্বশক্তি তত্রার্পিতা নিয়মিত স্মরণে না কালঃ আর সেই নাম গ্রহণের কাল সম্বন্ধে কোন কঠিন বাঁধাধরা নিয়ম নেই যে তুমি অমুক অমুক সময়ে নাম করতে পারবে না। যে কোন সময়। যে কোন সময় তুমি করতে পার আর নাম শ্রীকৃষ্ণেরই অভিন্ন রূপ। এইভাবে ভগবান ও ভগবানের নাম, কৃষ্ণ নাম কৃষ্ণ থেকে অভিন্ন এটা ভেব না যে, কৃষ্ণ গোলোক বৃন্দাবনে থাকে, আর তাঁর নাম তাঁর থেকে ভিন্ন ঠিক যেমন এই জগতে আমাদের এই অভিজ্ঞতা আছে। এখানে নাম আর ব্যক্তি আলাদা কিন্তু চিন্ময় পরম জগতে সেই ভিন্নতা নেই তাই বলা হয় পরম। কৃষ্ণের নামও কৃষ্ণের মতোই শক্তিশালী