BN/Prabhupada 0916 - শ্রীকৃষ্ণের তোমার সুন্দর সুন্দর পোশাক, ফুল বা আহারের প্রয়োজন নেই



730415 - Lecture SB 01.08.23 - Los Angeles

প্রভুপাদঃ এই জগতে ভগবানের আবির্ভাব ও তিরোভাব একে বলা হয় চিকীর্ষিতম্‌। চিকীর্ষিতম্‌ এর অর্থ কি লেখা আছে?

ভক্তঃ লীলা।

প্রভুপাদঃ লীলা। এটি কৃষ্ণের লীলা যে তিনি অবতরণ করেন। যক্ষণ তিনি আসেন, অবশ্যই তিনি তখন কিছু কার্যাবলী করেন সেই কাজ হচ্ছে সাধুদের পরিত্রাণ এবং অসাধুদের বিনাশ করা কিন্তু উভয়ই তাঁর লীলা তিনি ঈর্ষাপরায়ণ নন। তিনি ঈর্ষাপরায়ণ হতে পারেন না। অসুরদের বিনাশ করাটাও তাঁর স্নেহ যেমন কখনও আমরা আমাদের সন্তানদের শাস্তি দিই, কষে চড় লাগাই। সেটি ভালবাসার বাইরে নয়। তাতেও ভালবাসা আছে। তাই কৃষ্ণ যখন কোন অসুর হত্যা করেন সেই হত্যা কোন জাগতিক ঈর্ষার স্তর থেকে নয়। না।

তাই শাস্ত্রে এই কথা বলা হয়েছে যে এমনকি অসুরেরাও যারা ভগবানের হাতে নিহত হয়, তারা তৎক্ষণাৎ মুক্তি লাভ করে। ফলাফল একই। যেমন পুতনা। পুতনাকে হত্যা করা হল। পুতনা চেয়েছিল কৃষ্ণকে মারতে, এমন কে আছে যে কৃষ্ণকে মারবে? তা সম্ভব নয়। বরং সে নিজেই হত্যা হয়েছিল। কিন্তু সে নিহত হল, তার ফল কি হল? ফল এই হল যে সে কৃষ্ণের মায়ের গতি প্রাপ্ত হল তাঁকে কৃষ্ণ মা বলে গ্রহণ করলেন সে এসেছিল স্তনে বিষ মাখিয়ে যে, "কৃষ্ণ আমার স্তন পান করবে, আর সঙ্গে সঙ্গে মরে যাবে"। কিন্তু তা সম্ভব না। বরং সেই নিহত হল কৃষ্ণ তাঁর স্তন এবং প্রাণবায়ু উভয়ই শুষে নিলেন কিন্তু কৃষ্ণ তাঁর ভাল দিকটি গ্রহণ করলেন, "এই নারী, রাক্ষসী এসেছিল আমাকে হত্যা করতে, কিন্তু যেকোন ভাবেই হোক আমি তাঁর স্তনদুগ্ধ পান করেছি তাই সে আমার মা। সে আমার মা।" তাই সে মায়ের অবস্থান পেল

এই কথা শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে উদ্ধব বিদুররের কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন যে কৃষ্ণ এতোই দয়ালু ভগবান এতোই দয়াময়, যে ব্যক্তি তাঁকে বিষ দিয়ে হত্যা করতে এলো তাকেও তিনি মা বলে গ্রহণ করলেন। এতোই করুণাময় কৃষ্ণ। "আমি কাকে আর ভজনা করব সেই কৃষ্ণ ছাড়া?" এই উদাহরণ দেয়া হয়েছে প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণের কোনই শত্রু নেই এই কথা এখানে বলা হয়েছে যে, ন যস্য কশ্চিদ্‌ দয়িতাঃ দয়িতাঃ মানে পক্ষপাতিত্ব। তিনি কারোর পক্ষপাতিত্ব করেন না ন যস্য কশ্চিদ্‌ দয়িতোস্তি কর্হিচিদ্‌ দ্বেষ্যশ্চ। আর কেউই তাঁর শত্রুও নয়। কে তাঁর শত্রু হতে পারে? আর কে তাঁর বন্ধু হতে পারেন?

ধর, আমরা বন্ধু বানাই আমরা বন্ধুর থেকে কিছু একটা লাভ আশা করি আর শত্রু মানে আমরা তাঁর থেকে ক্ষতিকারক কিছু আশা করি। কিন্তু কৃষ্ণ এতোই নিখুঁত যে কেউই তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারেন না আর না তো কৃষ্ণকে কেউ কিছু দিতে পারে। তাই তাঁর জন্য বন্ধু বা শত্রুর প্রয়োজনটা কি? কোন প্রয়োজন নেই। তাই এখানে বলা হচ্ছে , ন যস্য কশ্চিদ্‌ দয়িতোহস্তি তাঁর কারও থেকে কোন লাভ পাবার দরকার নেই। তিনি সম্পূর্ণ আমি হয়ত গরীব হতে পারি, আমি কোন বন্ধুর লাভ আশা করি, কারও না কারো। সেটি আমার আশা কারণ আমি অপূর্ণ আমি পূর্ণ নই, আমার বিভিন্ন দিক থেকে কমতি আছে, তাই আমার সবসময় কিছু দরকার তাই আমি কিছু বন্ধু বানাতে চাই, আর একইভাবে শত্রুদের ঘৃণা করি তাই শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর হওয়াতে... কেউই শ্রীকৃষ্ণের কোন ক্ষতি করতে পারে না। কেউ কৃষ্ণকে কিছু দিতেও পারেও না। তাহলে আমরা কেন কৃষ্ণের ভোগের জন্য এত কিছু দিচ্ছি? আমরা তাঁকে পোশাক পরাচ্ছি, সাজাচ্ছি, আমরা কৃষ্ণকে ভাল ভাল আহার্য দিচ্ছি।

তাই বিষয়টা হচ্ছে... এই বিষয়টা বোঝার চেষ্টা কর। তোমার ভাল খাবার, পোশাক বা ফুল কৃষ্ণের দরকার নেই। সেসব কৃষ্ণের দরকার নেই। কিন্তু তুমি যদি দাও, তাহলে তুমিই লাভবান হবে। এটি শ্রীকৃষ্ণের কৃপা যে তিনি তা গ্রহণ করছেন। এই উদাহরণটা দেয়া হয়েছেঃ ঠিক যেমন তুমি যদি মূল ব্যক্তিটাকে সাজাও তাহলে সেই ব্যক্তির প্রতিফলন আয়নাতে পড়লে তাকেও সুন্দর লাগবে। এইভাবে আমরা হচ্ছি প্রতিফলন। বাইবেলেও বলা হয়েছে মানুষকে ভগবানের আদলে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু কৃষ্ণ হচ্ছেন চিন্ময়, আমরা... তাঁরও দুটো হাত আছে, দুটো চরণ আছে, একটা মাথা আছে, অর্থাৎ মানুষকে ভগবানের আদলে তৈরি করা হয়েছে মানে আমরা ভগবানের প্রতিফলন এমন নয় যে আমরা আমাদের রূপের মতো কল্পনা করে কিছু রূপ বানাবো। তা ভুল। মায়াবাদী দর্শন হচ্ছে সেরকম। একে বলা হয় নৃতাত্ত্বিকতা (anthromorphism) তাঁরা বলে যে, "কারণ... পরম তত্ত্ব হচ্ছেন নির্বিশেষ, কিন্তু যেহেতু আমরা ব্যক্তি তাই আমরা কল্পনা করি যে ভগবানও একজন ব্যক্তি।" ঠিক উল্টো। আসলে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা ভগবানের আদলে এই রূপ পেয়েছি। তাই প্রতিবিম্বে... তাই যদি মূল ব্যক্তিটি লাভবান হন, তাহলে প্রতিবিম্বও লাভবান হবে। এই হচ্ছে মূল দর্শন। প্রতিবিম্বও লাভবান হবে।