BN/Prabhupada 0920 - যেহেতু মূল্যবান জীবনীশক্তিটি আছে, তাই সারা দেহ কাজ করছে



730422 - Lecture SB 01.08.30 - Los Angeles

অনুবাদঃ স্পষ্টতই তা অত্যন্ত বিমোহিতকর। হে বিশ্বাত্মা, তুমি প্রাকৃত কর্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও কর্ম কর, তুমি প্রাকৃত জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও, সকলের পরমাত্মা হওয়া সত্ত্বেও তুমি জন্মগ্রহণ কর। তুমি পশু, মানুষ, ঋষি এবং জলচর কুলে জন্মগ্রহণ কর। স্পষ্টতই তা অত্যন্ত বিমোহিতকর।

প্রভুপাদঃ এখানে শ্রীকৃষ্ণকে বিশ্বাত্মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। সমস্ত বিশ্বের পরমাত্মা। ঠিক যেমন তোমার দেহে, আমার দেহে জীবনীশক্তি আছে। সেই জীবনীশক্তি হচ্ছেন আত্মা। আত্মা বা জীবনীশক্তি। কারণ তাতে আত্মা বা জীবনীশক্তি আছে, তাই সারা দেহটি ক্রিয়াশীল।

তেমনই একটি পরম জীবনীশক্তি আছে। সেই পরম জীবনীশক্তি হচ্ছেন পরমাত্মা। তাই তাঁর জন্ম, আবির্ভাব বা অন্তর্ধানের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? ভগবদগীতায় প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, জন্মকর্ম চ মে দিব্যম্‌ এবম্‌ (গীতা ৪/৯) দিব্য মানে চিন্ময়। অজোহপি সন্নব্যায়াত্মা। অজ মানে জন্ম রহিত। অব্যায়াত্মা । কোন ক্ষয় ব্যতীত। তাই কৃষ্ণ হচ্ছেন আদি যেমনটা এই শ্লোকে বলা হয়েছে... কুন্তী শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, "আপনি অন্তরে, আপনি বাইরে - তবুও আপনি অদৃশ্য" কৃষ্ণ ভেতরেও আছেন, বাইরেও আছেন। আমরা সেই কথা বর্ণনা করেছি। ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদদেশে অর্জুন তিষ্ঠতি (গীতা ১৮/৬১) সর্বস্য চাহম্‌ হৃদি সন্নিবিষ্টঃ (গীতা ১৫/১৫) কৃষ্ণ সকলের হৃদয়ে পরমাত্মারূপে বিরাজিত। তাই তিনি সবকিছুর অভ্যন্তেরেই আছেন। অণ্ডান্তরস্থ পরমাণু চয়ান্তরস্থম্‌ (ব্রহ্ম সংহিতা ৫/৩৫) তিনি এমনকি পরমাণুর ভেতরেও আছেন। এবং বাইরেও আছেন।

যেমনটা শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন, তাঁর বাহ্যিক রূপ এই বিশাল মহাজাগতিক সৃষ্টি। সেটি শ্রীকৃষ্ণের বাহ্যিক দেহ। এইসব কথা শ্রীমদ্ভাগবতে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। পাহাড়-পর্বত গুলি সেই রূপের হাড় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ঠিক যেমন আমাদের দেহের কিছু অংশে হাড়ের বিস্তার আছে ঠিক তদ্রূপ এইসব বিশাল, বিশাল পাহাড় পর্বতগুলো সেই রূপের অস্থিস্বরূপ। আর বড় বড় সমুদ্র সেই দেহের লোমকূপের মতো। ঠিক তেমনই ব্রহ্মলোক হচ্ছে কপালের অস্থি

তাই যে ভগবানকে দেখতে পায় না তাদের উপদেশ দেয়া হয়েছে ভগবানকে এইরকম বিভিন্ন রূপে দর্শন করতে এইগুলি বৈদিক শাস্ত্রে দেয়া বিভিন্ন নির্দেশ কারণ ভগবানের মহানতা কেবল অনুভব করা যায়... তাঁর বিশালতা তুমি এটাও জান না যে তিনি কতোটা বিশাল । তোমার বিশালতার ধারণা অনুযায়ী... ঠিক যেমন অত্যন্ত উঁচু পর্বত, আকাশ, বিশাল বিশাল গ্রহ এইসব বর্ণনা করা হয়েছে। ভেবে দেখ। সেটিও কৃষ্ণভাবনামৃত। যদি তুমি এইভাবে চিন্তা কর যে, "এই পাহাড়পর্বত হচ্ছে ভগবানের অস্থি।" সেটিও কৃষ্ণভাবনামৃত। আসলেই তাই। যদি তুমি মনে কর এই বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর হচ্ছে কৃষ্ণ। এই বড় বড় গাছপালা, এরা ভগবানের দেহের লোম এবং তাঁর মস্তকদেশ হচ্ছে ব্রহ্মলোক পায়ের পাতা হচ্ছে পাতাললোক। এইভাবে... এই হচ্ছে মহতো মহীয়ান্‌ যখন তুমি কৃষ্ণকে বিশাল থেকেও বিশালতর ভাবে চিন্তা কর, তখন তুমি এইভাবে ভাবতে পার এবং যদি তুমি মনে কর, কৃষ্ণ ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতম তাহলে সেটিও মহানতা। সেটিও তাঁর বিশালতা ভগবান কৃষ্ণ এই বিশাল মহাজগত সৃষ্টি করতে পারেন এবং তিনি বিন্দুর থেকে ক্ষুদ্রতম একটি কীটও সৃষ্টি করতে পারেন।

কখনও কখনও দেখবে বইয়ের মধ্যে একটি ছোট্ট পোকা হাঁটছে। ওর আকৃতি একটি বিন্দুর (full stop) চাইতেও ছোট। এটাই কৃষ্ণের কারুকার্য। অণোরনীয়ান্‌ মহতো মহীয়ান্‌ তিনি বৃহৎ থেকেও বৃহত্তর কিছু সৃষ্টি করতে পারেন, আবার ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর কিছু এখন মানুষ তাদের বুদ্ধি অনুযায়ী বিশাল বড় ৭৪৭ বোয়িং বিমান বানিয়েছে, বেশ। তোমরা তোমাদের চেতনা অনুযায়ী বিশাল কিছু বানিয়েছ। কিন্তু তুমি কি পারবে একটি কীটের থেকেও ক্ষুদ্র কোন বিমান বানাতে? তা সম্ভব না। তাই জন্য আসলে বিশালতা মানে কেউ যদি বৃহৎ থেকেও বৃহত্তর হতে পারে, আবার ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতম হতে পারে। সেটিই হচ্ছে কারও মহানতা।