BN/Prabhupada 0921 - প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে থাকতে পারলে তুমি কি খুব গর্ব অনুভব করবে না



730422 - Lecture SB 01.08.30 - Los Angeles

যদি তুমি এক পক্ষের হয়ে কাজ কর... সেটিও আবার নিখুঁতভাবে নয় এটা ভেবে যে তুমি এর থেকেও আরও বড় কিছু বানাতে পারবে আমার মনে হয় না আধুনিক যুগে সবচেয়ে বড় কিছু বানিয়েছে আমরা ভাগবত থেকে এই তথ্য পাই কপিলদেবের পিতা কর্দম মুনি তিনি একটি শহরের মতো বিশাল বিমান বানিয়েছিলেন সরোবর, উদ্যান, বিশাল বিশাল অট্টালিকা, রাস্তা সমন্বিত একটি বিশাল শহর তৈরি করেছিলেন এবং সারা শহরটি ব্রহ্মাণ্ডের ওপর উড়ে বেড়াচ্ছিল আর কর্দম মুনি তাঁর স্ত্রীকে সব গ্রহলোক ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন তিনি একজন মস্ত বড় যোগী ছিলেন, তাঁর স্ত্রী দেবহুতি ছিলেন স্বায়ম্ভুব মনুর কন্যা। অনেক বড় একজন সম্রাটের কন্যা তিনি । কর্দম মুনি বিবাহ করতে চেয়েছিলেন, এই বাসনা তাই তৎক্ষণাৎ মনু... তাঁর কন্যা দেবহুতিও বললেন, "আমি এই ঋষিকে বিবাহ করতে চাই" তাই তিনি কন্যাকে সেই ঋষির কাছে নিয়ে এলেন, "প্রভু, এই নিন আমার কন্যা। দয়া করে একে আপনার পত্নী হিসেবে গ্রহণ করুন।" তিনি ছিলেন রাজকন্যা, অত্যন্ত ঐশ্বর্যশালী, কিন্তু তাঁর পতির কাছে আসাতে তাঁকে এতো সেবা করতে হয়েছিল যে তিনি ক্ষীণ কলেবর হয়ে গিয়েছিলেন যথেষ্ট আহার না নিয়ে এবং সারাদিনরাত সেবা করতে করতে

তাই কর্দম মুনি তাঁর প্রতি কিছুটা করুণাময় হলেন "এই কন্যা আমার কাছে এসেছে, সে একজন সম্রাটের কন্যা, আর আমার রক্ষণাবেক্ষণে সে পর্যাপ্ত আরাম পাচ্ছে না। তাই আমার উচিৎ তাঁকে কিছু আরামের ব্যবস্থা করে দেয়া"। তিনি তাঁর পত্নীকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি কীভাবে একটু আরাম পাবে"? সাধারণত স্ত্রীলোকের স্বভাব হচ্ছে ভাল বাড়ি, ভাল খাবার, ভাল পোশাক ভাল সন্তানাদি, এবং ভাল স্বামী। এটাই মেয়েলোকের লক্ষ্য। তিনি তাঁর কাছে প্রমাণ করলেন যে তিনি সবচেয়ে ভাল পতিই পেয়েছেন তাই প্রথমে তিনি তাঁকে সবধরনের ঐশ্বর্য দিলেন, বিশাল বিশাল অট্টালিকা, দাসী, ধনসম্পদ। তারপর তাঁর যোগশক্তি বলে তিনি সেই বিমানটি বানালেন কর্দম মুনি একজন মানুষ ছিলেন যদি তিনি তাঁর যোগশক্তিবলে এত অদ্ভুত কিছু করতে পারেন, আর শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন যোগেশ্বর, সমস্ত যৌগিক শক্তির পরম প্রভু ভগবদগীতায় তাঁকে যোগেশ্বর বলে সম্বোধন করা হয়েছে একটু সামান্য যৌগিক শক্তির দ্বারাই তিনি এত বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে গেলেন আর ভগবান হচ্ছেন সমস্ত যোগসিদ্ধির পরম নিয়ন্তা, মালিক। যত্র যোগেশ্বর হরিঃ (গীতা ১৮/৭৮) ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, যেখানে যোগেশ্বর হরি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আছেন, সমস্ত যৌগিক শক্তিও সেখানেই আছে আর যেখানে ধনুর্ধর অর্জুন, পার্থ , তাহলে সেখানে সবকিছুই আছে। সবকিছু আছে।

তাই আমাদের সেই কথা মনে রাখা উচিৎ অর্থাৎ আমরা যদি আমাদের সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্যে রাখতে পারি তাহলে সমস্ত সিদ্ধিই সেখানে থাকবে যত্র যোগেশ্বর হরিঃ। সমস্ত সিদ্ধি সেখানে। আর এই যুগে কৃষ্ণকে বিশেষভাবে নামরূপে কলিকালে কৃষ্ণ অবতার, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি এই যুগে তাঁর নাম রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, "হে প্রাণনাথ, তুমি এতোই করুণাময় যে তুমি তোমার নামরূপে আমায় তোমার সঙ্গ প্রদান করছ" নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তিস্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ (চৈতন্য চরিতামৃত ২০/১৬, শিক্ষাষ্টক ২) "আর এই হরিনাম যে কোন অবস্থায় করা যায়, কোন বাঁধাধরা কঠিন নিয়ম নেই"। তুমি যে কোন স্থানে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে পার।

ঠিক যেমন এই বাচ্চাগুলো এরাও জপ করে, নৃত্য করে। এটা একেবারেই কঠিন কিছু নয়। যেমন হাঁটতে যাবার সময় আমাদের শিষ্যেরা তাঁরা জপমালা নিয়ে যায় তাঁরা সমুদ্রতীরে হাঁটছে, কিন্তু জপ করছে। এতে কি কোন ক্ষতি আছে? কিন্তু লাভ অনেক যে, আমরা ভগবান কৃষ্ণের ব্যক্তিগত সান্নিধ্যে রয়েছি। অনেক প্রাপ্তি। যদি তুমি খুব গর্ব অনুভব কর... যদি তুমি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ব্যক্তিগতভাবে সান্নিধ্যে আসতে পার, কতোটা গর্ববোধ করবে তুমি? "ওহ্‌ আমি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে আছি" তাহলে তুমি কি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে থাকতে খুব গর্ববোধ করবে না? (হাসি) আর তিনি কে যিনি কোটি কোটি নিক্সন বানাতে পারেন?

তাই এটাই তোমার সুযোগ। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি (চৈতনয় চরিতামৃত ২০/১৬, শিক্ষাষ্টক ২) "হে ভগবান, আপনি আমার প্রতি কতোই না দয়ালু যে আপনি সর্বদা আপনার ব্যক্তিগত সান্নিধ্য দিচ্ছেন আমায়, নিরবচ্ছিন্নভাবে। আপনি করুণা করে তা দিচ্ছেন, দুর্দৈবম্‌ ঈদৃশম্‌ ইহাজনি নানুরাগঃ কিন্তু এতোই দুর্ভাগা যে আমি সেই সুযোগ নিচ্ছি না" দুর্দৈব । দুর্ভাগ্য। তাই আমাদের এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন মানুষকে কেবল এই অনুরোধ করছে , "হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন"।