BN/Prabhupada 0930 - তুমি এই জড় জগতের বদ্ধদশা থেকে বের হও। সেখানে রয়েছে প্রকৃত জীবন, নিত্য জীবন



730423 - Lecture SB 01.08.31 - Los Angeles

তুমি এই জড় জগতের বদ্ধদশা থেকে বের হও। সেখানে রয়েছে প্রকৃত জীবন, নিত্য জীবন সমালোচনা করা আমাদের কাজ নয়, কিন্তু কলি যুগের লক্ষণ সমূহ খুব মারাত্মক আর তা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। আমরা কলিযুগের মাত্র ৫০০০ বছর অতিক্রম করেছি, কিন্তু কলিযুগের আয়ু হচ্ছে ৪,৩২,০০০ বছর। এর মধ্যে মাত্র ৫০০০ বছর গত হয়েছে। ৫,০০০ বছর অতিক্রম করার পর আমরা বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কলিযুগ যত ঘনিয়ে আসবে, দিনগুলো আরও বেশী কঠিন হয়ে উঠবে। তাই সর্বোত্তম হচ্ছে তুমি তোমার কৃষ্ণভাবনামৃতের কাজ শেষ কর আর ভগবদ্ধামে ফিরে যাও। এটি তোমাকে রক্ষা করবে। অন্যথায়, তুমি যদি আবার ফিরে আস, সমস্যাসমূহ আর সংকটপূর্ণ দিনগুলো সামনে আসছে। আমাদের আরও আরও বেশী কষ্ট করতে হবে।

তাই শ্রীকৃষ্ণকে এখানে অজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্‌। ভগবদ্গীতায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে, অজোহপি "আমি জন্মরহিত।" হ্যাঁ। শ্রীকৃষ্ণ জন্মরহিত। আমরাও জন্মরহিত। কিন্তু পার্থক্যটা হচ্ছে আমরা এই জড় দেহের ফাঁদে জড়িয়ে পরেছি। তাই আমরা আমাদের জন্মরহিত অবস্থানটা ধরে রাখতে পারি নি। আমাদেরকে জন্ম গ্রহণ করতে হয়, এক দেহ থেকে অন্য দেহে দেহান্তরিত হতে হয়, আর এই বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই যে পরবর্তীতে তুমি কি ধরণের দেহ পেতে যাচ্ছ। কিন্তু তোমাকে তা গ্রহণ করতে হবে।

ঠিক যেমন আমরা এই জীবনে এক দেহ থেকে অন্য দেহ গ্রহণ করছি। শিশু তার শৈশবের দেহ ত্যাগ করে কৈশোর দেহ ধারণ করে। কিশোরটি তার কৈশোরের দেহ ত্যাগ করে যৌবনের দেহ ধারণ করে। একইভাবে, যখন এই বৃদ্ধ দেহ ত্যাগ করবে, প্রকৃতিগত পরিসমাপ্তি হচ্ছে যে আমাকে অন্য আরেকটি দেহ ধারণ করতে হবে। আবার শিশু দেহ। ঠিক যেমন ঋতু পরিবর্তন। গ্রীষ্মের পর বসন্ত, অথবা বসন্তের পর গ্রীষ্ম আসে, গ্রীষ্মের পর বর্ষা হয়, বর্ষার পর আসে শীত। অথবা দিনের পর আসে রাত, রাতের পর আসে দিন। এগুলো হচ্ছে একটার পর একটা কালচক্র, একইভাবে, আমরা একটার পর একটা দেহ ত্যাগ করছি। আর স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে এই দেহ ত্যাগ করার পর আমাদেরকে আরেকটি দেহ ধারণ করতে হবে। ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৮.১৯)।

এটি খুবই যুক্তিপূর্ণ আর শাস্ত্র সম্মত। আর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত। তাহলে কেন তুমি তা স্বীকার করবে না? যদি তুমি তা স্বীকার না কর, তাহলে এটি হবে মূর্খতা। তুমি যদি মনে কর যে, মৃত্যুর পর আর জীবন নেই, এটি বোকামি। মৃত্যুর পর জীবন রয়েছে। যেহেতু আমরা অনাদি কাল ধরে একটার পর একটা দেহ ধারণ করে আসছি, তাই আমরা চিন্তা করতে পারছি না যে নিত্য জীবন বলতে কিছু রয়েছে। এটি আমাদের জন্য কঠিন।

ঠিক অসুস্থ মানুষের মতো। সে বিছানায় শুয়ে থাকে আর সেখানেই খায়, সেখানেই মল-মূত্র ত্যাগ করে, সে নড়াচড়া করতে পারে না, আর খুব তেতো ঔষধ। নানা রকম অসুবিধা। সে শুয়ে থাকে। তখন সে আত্মহত্যার চিন্তা করে। "ওহ্‌ এই জীবনটা খুব অসহনীয়। আমি আত্মহত্যা করতে চাই।" তাই প্রচণ্ড হতাশাজনক অবস্থায় কখনও কখনও শুন্যতার বা নির্বিশেষবাদের অনুসরণ করা হয়। কোন কিছুকে শুন্য বানিয়ে ফেলা। কারণ এই জীবনটা খুব যন্ত্রনাময়, অনেকসময় এমনকি কেউ এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আত্মহত্যা করে, আমি বোঝাতে চাচ্ছি, জড় অস্তিতের যন্ত্রণাদায়ক জীবন থেকে। আর এই শুন্যবাদ বা নির্বিশেষবাদ হচ্ছে ঠিক এইরকম। মানে তারা চিন্তা করতে পারেনা, প্রকম্পিত হয়, আরেকটি জীবনের কথা ভেবে, আবার খাওয়া, আবার ঘুমানো, আবার কাজকর্ম। কারণ সে মনে করে খাওয়া ঘুমানো মানে বিছানার ওপর। এই যা। আর ভোগান্তি। সে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পারে না। তাই নেতিবাচকভাবে, এটিকে শুন্য বানিয়ে। এটি হচ্ছে শুন্যবাদ দর্শন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়। ব্যাপারটা হচ্ছে তুমি জড় অবস্থার যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে রয়েছ। জড়-জগতের বদ্ধদশা থেকে বের হও। সেখানে রয়েছে প্রকৃত জীবন, নিত্য জীবন।