BN/Prabhupada 0938 - যীশু খ্রিষ্ট, তাঁর কোন দোষ ছিল না। একমাত্র অপরাধ ছিল তিনি ভগবান সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন



730425 - Lecture SB 01.08.33 - Los Angeles

প্রভুপাদঃ এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যাদেরকে বলা হয় অসুর। তারা হচ্ছে সুরদ্বিষাম্‌। তারা সবসময় ভক্তদের হিংসা করে। তাদের বলা হয় দৈত্য। ঠিক যেমন প্রহ্লাদ মহারাজ এবং তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু। হিরণ্যকশিপু ছিলেন প্রহ্লাদ মহারাজের পিতা, কিন্তু যেহেতু প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন একজন বৈষ্ণব, তাই সে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠেছিল। এটিই হচ্ছে অসুরদের প্রকৃতি। এতোটা ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছিল যে, সে তার পুত্রকে হত্যা করতে তৈরি ছিল। এই ছোট বালকটির একমাত্র অপরাধ ছিল, সে হরে কৃষ্ণ কীর্তন করছিল। এটিই ছিল তাঁর দোষ। পিতা করবেন না... তাই তাদেরকে বলা হয় সুরদ্বিষাম্‌, ভক্তদের প্রতি সর্বদা ঈর্ষাপরায়ণ। অসুর মানে সর্বদা ভক্তদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ। এই জড় জগত এতোটা খারাপ জায়গা যে...

তোমাদের একটি সুন্দর উদাহরণ রয়েছে। ঠিক যেমন যীশু খ্রিষ্ট, প্রভু খ্রিষ্ট। তাঁর কি দোষ ছিল? কিন্তু সুরদ্বিষাম, হিংসুটে লোকেরা তাঁকে হত্যা করেছিল। যদি আমরা খুঁজে দেখি, বিশ্লেষণ করে দেখি যে, যীশু খ্রিষ্টের কি অপরাধ ছিল, কোন অপরাধ ছিল না। তাঁর একমাত্র অপরাধ ছিল তিনি ভগবান সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন; তবু তাঁর অনেক শত্রূ হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে নির্মমভাবে ক্রূশবিদ্ধ করা হয়েছিল। তাই আমরা সবসময় এই সমস্ত সুরদ্বিষামদের দেখতে পাবো। আর শ্রীকৃষ্ণ আসেন এই সমস্ত সুরদ্বিষামদের হত্যা করার জন্য। যার কারণে বধায় চ সুরদ্বিষাম। এই সমস্ত হিংসুটে লোকদের হত্যা করা হয়।

কিন্তু এই হত্যা করার কাজটা শ্রীকৃষ্ণের উপস্থিতি ছাড়াও করা সম্ভব। কারণ অনেক ধরণের প্রাকৃতিক শক্তি রয়েছে, যেমন যুদ্ধ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ। যে কোন কিছু। শুধু কাজ চালু করে দিলেই হলো। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। সুতরাং এই সমস্ত বদমাশদের মারার জন্য শ্রীকৃষ্ণের এখানে আসার প্রয়োজন নেই। তারা শুধু মাত্র শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে, প্রকৃতির নিয়মেই মারা যেতে পারে। প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ (ভগবদ্গীতা ৩.২৭)। সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়সাধনশক্তিরেকা (ব্রহ্মসংহিতা ৫.৪৪)। প্রকৃতির এতো শক্তি রয়েছে যে, এটি সৃষ্টি করতে পারে, এটি পালন করতে পারে, ধ্বংস করেত পারে, বিশৃঙ্খল করতে পারে, সব কিছু। প্রকৃতি এতো শক্তিশালী।

সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়। সৃষ্টি মানে উৎপন্ন করা, স্থিতি মানে পালন আর প্রলয় মানে ধ্বংস। এই তিনটি জিনিস প্রকৃতি করতে পারে। ঠিক যেমন এই জড় সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতিক, প্রকৃতিগত বৈশ্বিক প্রকাশ। এটি প্রতিপালিত হয়। প্রকৃতির দয়ায় আমরা সূর্যালোক পাচ্ছি, আমরা বাতাস পাচ্ছি, বৃষ্টি পাচ্ছি , যা দিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদন করছি। ভালোভাবে আহার করছি, সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছি। এই পালন কার্যটাও প্রকৃতির দ্বারাই হচ্ছে। কিন্তু যেকোনো সময় এই সব কিছুই শেষ হয়ে যেতে পারে শুধু মাত্র একটি শক্তিশালী বাতাসের দ্বারা। প্রকৃতি এতো শক্তিশালী। সুতরাং অসুরদের হত্যা করার জন্য প্রকৃতি ইতোমধ্যেই এখানে রয়েছে। নিশ্চিতরূপে এই প্রকৃতি শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশনায় কাজ করছে। ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্‌ (ভগবদ্গীতা ৯.১০)। তাই শ্রীকৃষ্ণ যদি বলেন যে এই সমস্ত অসুরদের মারতে হবে, তাহলে প্রকৃতির একটি মাত্র দমকা হাওয়া লক্ষ লক্ষ অসুরদের মেরে দিতে পারে।

তাই এই কাজের জন্য শ্রীকৃষ্ণের আসার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ আসেন, যেমনটি এখানে বলা হয়েছেঃ যাচিতঃ। শ্রীকৃষ্ণ আসেন যখন তিনি দেবকী এবং বসুদেবের মতো ভক্তদের দ্বারা প্রার্থিত হন। এই হচ্ছে তাঁর আসা। আর এই জন্যই তাঁর আসা। আর তিনি যখন আসেন, একই সঙ্গে তিনি এটিও দেখান যে, "যে আমার ভক্তদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ, আমি তাদের হত্যা করব।" অবশ্য তাঁর হত্যা আর পালন একই ব্যাপার। তিনি হচ্ছেন পরম। যারা শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক নিহত হয়, তারা তৎক্ষণাৎ মুক্তি লাভ করে, যেটি পেতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগত। তাই মানুষেরা বলে যে, শ্রীকৃষ্ণ এই উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যে আসেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের কল্যানের জন্য আসেন, ক্ষেমায়। ক্ষেমায় মানে কি? পালনের জন্য?

ভক্তঃ "মঙ্গলের জন্য।"

প্রভুপাদঃ মঙ্গলের জন্য। ভক্তদের কল্যান সাধনের জন্য। তিনি সর্বদাই ভক্তদের ভালো চান। অতএব কুন্তিদেবীর এই নির্দেশনা থেকে, আমাদের সবসময় কিভাবে ভালো ভক্ত হওয়া যায় সেই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাহলে আমাদের মধ্যে সমস্ত সদ্ গুণাবলী আসবে। যস্যাস্তি ভক্তির্ভগবত্যকিঞ্চনা সর্বৈঃ গুণৈঃ তত্র সমাসতে সুরাঃ। (শ্রীমদ্ভাগবত ৫.১৮.১২)। তুমি যদি শুধু তোমার ভক্তি বৃদ্ধি কর, সুপ্ত ভক্তি, স্বাভাবিকী ভক্তিকে জাগিয়ে তোল... আমাদের স্বাভাবিকী ভক্তি রয়েছে।

ঠিক যেমন পিতা এবং পুত্রের মধ্যে স্বাভাবিক ভালোবাসা রয়েছে। পিতা মাতার প্রতি পুত্রের স্বাভাবিক ভক্তি বা ভালোবাসা রয়েছে। একইভাবে, আমাদেরও স্বাভাবিকী ভক্তি রয়েছে। যখন আমরা সাংঘাতিক বিপদের মধ্যে পড়ি, তখন এমন কি বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে। কিন্তু যখন তারা আর বিপদে থাকে না , তারা ভগবানকে কলা দেখায়। কাজেই বিপদে পড়ার প্রয়োজন রয়েছে, এই সমস্ত বদমাশদের এই শিক্ষা দেয়ার জন্য যে ভগবান আছেন। তো এটি হচ্ছে স্বাভাবিক। জীবের স্বরূপ হয় নিত্য কৃষ্ণ দাস (চৈ চ মধ্য ২০.১০৮-১০৯)। এটি হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক... কৃত্রিমভাবে আমরা ভগবানকে নির্বাসিত করতে পারি। "ভগবান মৃত, কোন ভগবান নেই, আমিই ভগবান, এই ভগবান, সেই ভাগবান।" আমাদেরকে এই বদমাশি ছাড়তে হবে। তখন আমরা শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা সমস্ত রকমের সুরক্ষা লাভ করব।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ, হরিবোল!