BN/Prabhupada 0940 - চিন্ময় জগত মানে, সেখানে কোন কাজ নেই, শুধুই আনন্দ



730427 - Lecture SB 01.08.35 - Los Angeles

চিন্ময় জগত মানে, সেখানে কোন কাজ নেই, শুধুই আনন্দ সুতরাং এই জড়জগতে যে জন্মগ্রহণ করে তার কখনও নিজেকে ভাবা উচিত নয় যে, "আমি সম্মানিত অতিথি অথবা পূজনীয় জামাই।" না। প্রত্যেককেই কাজ করতে হবে। সারা বিশ্বে তোমরা তা দেখছ। আমাদের দেশে প্রেসিডেন্ট রয়েছেন, প্রত্যেক দেশেই রয়েছে- তিনি দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করছেন। অন্যথায় তিনি তার প্রেসিডেন্ট পদ ধরে রাখতে পারবেন না। এটি সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ মগজটা রাজনৈতিক বিষয়ে গিজগিজ করছে। বহুমুখী সমস্যা আর এগুলোর সমাধান। তাঁকে এগুলো নিয়ে কাজ করতে হয়। একইভাবে , একটি রাস্তার মানুষ, তাকেও কাজ করতে হয়। এটিই হচ্ছে প্রকৃতি, জড়া প্রকৃতি। তোমাকে কাজ করতে হবে। এটি চিন্ময় জগত নয়। চিন্ময় জগত মানে সেখানে কোন কাজ নেই। সেখানে শুধুই আনন্দ। তোমরা কৃষ্ণ গ্রন্থটা পড়েছ, সেখানে দেখতে পাবে যে, তাঁরা কাজ করেন না। কৃষ্ণ গরু-বাছুর নিয়ে যাচ্ছেন। এটি কাজ করা নয়। এটি আনন্দ। এটি চিত্তবিনোদন। তাঁরা নাচছে, তাঁরা বনে প্রবেশ করছে, তাঁরা গঙ্গার তীরে বসছে। মাঝে মাঝে অসুরেরা আক্রমন করছে, শ্রীকৃষ্ণ তাদের হত্যা করছেন। এই সমস্ত কিছুই আনন্দ খেলা। আনন্দময়ো ভাস্যাৎ। এটি হচ্ছে চিন্ময় জগত। চিন্ময় কার্যকলাপের এরকম একটি নমুনা দেখ। আমরা... আমাদের অনেক শাখা আর বহু সদস্য রয়েছে, কিন্তু আমরা কাজ করছি না। সোজা, চিন্ময় জগতের একটি নমুনা। আমাদের প্রতিবেশীরা হিংসা করছেঃ "কিভাবে এই লোকগুলো নাচে, গায় আর খায়?" (হাসি) কারণ তারা কুকুর বিড়ালের মতো কঠোর পরিশ্রম করছে, কিন্তু আমাদের এরকম কোন দায়বদ্ধতা নেই। আমাদেরকে অফিস কিংবা কারখানায় যেতে হয় না। দেখ, বাস্তব উদাহরণ। এটি হচ্ছে চিন্ময় জগতের একটি ছোট্ট আভাস মাত্র। আমরা শুধু চিন্ময় জগতের একটি নমুনা হওয়ার চেষ্টা করছি। নমুনাতেই এতো আনন্দ, তাহলে একবার কল্পনা কর আসলটাতে কতো আনন্দ। যেকেউ অনুধাবন করতে পারে। এটি বাস্তব। তোমরা চিন্ময় জীবনে আস, আমরা তোমাদের আহ্বান করছি। "দয়া করে আস, আমাদের সাথে অংশগ্রহণ কর। আমাদের সাথে নাচ গাও। প্রসাদ পাও, আর সুখী হও।" "না, না, আমাদের কাজ আছে।" (হাসি) দেখ, আমাদের কাজটা কি? আমরা শুধু ঘোষণা করছি, "দয়া করে আস।' "না।" "কেন?" "আমাকে কুকুর বিড়ালের মতো খাটতে হবে," এই জন্য। তাই শুধু বোঝার চেষ্টা কর। এটিই হচ্ছে পারমার্থিক জীবন আর জাগতিক জীবনের পার্থক্য। জাগতিক জীবন মানে তোমাকে কাজ করতে হবে। তোমাকে বাধ্য করা হবে। অবিদ্যাকর্মসংজ্ঞান্যা তৃতীয়া শক্তিরিশ্যতে (চৈচ আদি ৭.১১৯)। বিষ্ণুপুরানে যখন শ্রীকৃষ্ণের শক্তিকে বিশ্লেষণ করা হয় বলা হয় যে, বিষ্ণুশক্তিঃ পরা প্রোক্তা। বিষ্ণু, শ্রীবিষ্ণুর শক্তি হচ্ছে পরা, উৎকৃষ্টা শক্তি বা চিন্ময় শক্তি পরা। পরা আর অপরা, তোমরা ভগবদ্গীতায় পড়েছ। অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মে পরাম্‌ (ভগবদগীতা ৭.৫)। শ্রীকৃষ্ণকে বিশ্লেষণ করলে দুই ধরণের প্রকৃতি পাওয়া যায়, পরা আর অপরা। উৎকৃষ্টা আর নিকৃষ্টা। ভূমি, আপ, অনল, বায়ু বা ভূমি , জল, অগ্নি, বায়ু এগুলোও প্রকৃতি। এটিও শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃতি। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন বিদ্ধি মে প্রকৃতিঃ অষ্টধা। "এই আট প্রকারে ভিন্না জড়া প্রকৃতি, এরা আমার প্রকৃতি, আমার শক্তি। কিন্তু তারা অপরেয়ম। এগুলো নিকৃষ্টা শক্তি। আরেকটি উৎকৃষ্টা শক্তি রয়েছে।" "সেটি কি, প্রভু?" জীবভূত, এই জীবশক্তি। আর এই সমস্ত বদমাশরা জানে না যে, দুই ধরণের প্রকৃতি কাজ করছে- জড়া প্রকৃতি আর চিন্ময় প্রকৃতি। জড়া প্রকৃতির মধ্যে চিন্ময় প্রকৃতি রয়েছে, তাই এটি কাজ করছে। অন্যথায় জড়া প্রকৃতির স্বাধীনভাবে কাজ করার কোন ক্ষমতা নেই। এই সহজ জিনিসটা তথাকথিত বিজ্ঞানীরা বোঝে না।