BN/Prabhupada 0948 - এই যুগকে বলা হয় কলিযুগ, এটি খুব একটি ভাল সময় নয়। কেবল মতানৈক্য এবং কলহ



720831 - Lecture - New Vrindaban, USA

এই যুগকে বলা হয় কলি যুগ, এটি খুব একটা ভাল সময় নয়। কেবল মতানৈক্য এবং কলহ। ঠিক যেমন রাতের বেলা, যখন আমরা আমাদের সুন্দর ঘরে ঘুমিয়ে থাকি, কিন্তু সূক্ষ্ম দেহটি আমাকে পাহারের চূড়ায় নিয়ে যায়। মাঝে মাঝে আমরা স্বপ্নে দেখি যে, আমি পাহারের চূড়ায় চলে এসেছি, অনেক উঁচুতে, এবং সেখান থেকে আমি নীচে পড়ে যাচ্ছি। যদিও আমার স্থুল দেহটি একটি সুন্দর, আরামদায়ক ঘরে শুয়ে আছে, কিন্তু আমার সূক্ষ্ম শরীর আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিদিন এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ঠিক তেমনি, মৃত্যু মানে এই স্থুল শরীরের পরিবর্তন। ঠিক যেমন তোমার একটা জামা আর কোট রয়েছে, সাধারণত তুমি হয়তো কোটটি পরিবর্তন কর, কিন্তু তোমার জামাটা তুমি পরে থাকো। একইভাবে, আমার সূক্ষ্ম দেহটি রয়ে যায় আর আমি আমার স্থুল শরীরটি ত্যাগ করি। একেই বলা হয় মৃত্যু। আর আমার সূক্ষ্ম দেহটি আমাকে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে আর একটি মাতৃগর্ভে বহন করে নিয়ে যায়, এবং আমি সেখানে আমার মায়ের থেকে উপাদান সংগ্রহ করে আর একটি নতুন শরীর ধারণ করতে থাকি, এবং যখন শরীরটি প্রস্তুত, তখন আমি মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসি এবং আমি আবার সেই সূক্ষ্ম এবং স্থুল শরীর নিয়ে চলতে থাকি। ভগবৎ ধর্ম মানে হচ্ছে যে আমাদের সূক্ষ্ম এবং স্থুল- এই দুটিরই উর্ধ্বে আসতে হবে, আমাদেরকে চিন্ময় শরীরের স্তরে আসতে হবে। এটি খুবই বিজ্ঞানসম্মত। আর যেই মুহূর্তে আমরা এই চিন্ময় শরীর লাভ করি, 'মুক্ত সঙ্গ', স্থুল এবং সূক্ষ্ম শরীর থেকে মুক্ত হই, আমরা আমাদের প্রকৃত দেহ অর্থাৎ চিন্ময় দেহের স্তরে আসব; প্রকৃতপক্ষে তখনই কেবল আমরা প্রকৃত আনন্দ আর স্বাধীনতা অনুভব করতে পারব।

তাই এই কৃষ্ণভাবনামৃতের পন্থাটি হচ্ছে মনুষ্য সমাজের জন্য সবচাইতে বড় আশীর্বাদ কারণ এটি মানুষকে তার চিন্ময় দেহের স্তরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে - স্থুল ও সূক্ষ্ম জড় দেহের অতীত। সেটিই হচ্ছে জীবনের পূর্ণসিদ্ধি। মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই স্তরে আসা, চিন্ময় স্তর, জড় স্থুল সূক্ষ্ম দেহের ধারণাকে অতিক্রম করা। সেটি সম্ভব। আর তা এই যুগে আরও সহজ করে দেওয়া হয়েছে। এই যুগকে বলা হয় কলিযুগ, এটি খুব একটা ভাল সময় নয়। কেবল পারস্পরিক মতানৈক্য, কলহ, সংঘর্ষ আর ভুল বোঝাবুঝি। এই কলিযুগ এসবেই পরিপূর্ণ। আর এই সবই ঘটছে। তাই এই যুগে চিন্ময় স্তরে আসাটা খুবই কঠিন। আগে এটি এতো কঠিন ছিল না। লোকেরা খুব সহজেই বৈদিক সভ্যতায় প্রশিক্ষিত হতেন। কিন্তু এখনকার লোকেরা আগ্রহী নয়। তারা শুধুমাত্র এই স্থুল শরীরটির প্রতিই আগ্রহী, অথবা, যারা একটু বেশি উন্নত, তারা বড়জোর সূক্ষ্ম দেহের প্রতি আগ্রহী। কিন্তু তাদের এই চিন্ময় দেহ সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। যদিও শিক্ষার উন্নতি হচ্ছে , কিন্তু চিন্ময় শরীর সম্পর্কে কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। তারা কেবল এই জড় স্থুল ও সূক্ষ্ম শরীরটি নিয়ে ভাবে। তাই এই আন্দোলন, এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্দোলন। যারা এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন গ্রহণ করেছেন, তারা অনেক, অনেক ভাগ্যবান।