BN/Prabhupada 0990 - ভালবাসা মানে এই নয় যে "আমি নিজেকে ভালবাসি" এবং ভালবাসার ধ্যান করা। না



740724 - Lecture SB 01.02.20 - New York

না ভগবৎ-ভক্তি-যোগ। এটি এক ধরণের যোগ, অথবা প্রকৃত যোগ। সর্বোত্তম যোগ প্রক্রিয়া হল ভগবৎ-ভক্তি, এবং, ভগবৎ-ভক্তি-যোগ শুরু হয়, আদৌ গুর্বাশ্রয়ঃ। প্রথমত গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ কর।

তদ্‌ বিদ্ধি প্রণিপাতেন
পরিপ্রশ্নেন সেবয়া
(গীতা ৪.৩৪)

আনুষ্ঠানিক দীক্ষার কোন অর্থ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত কেও গুরুদেবের কাছে আত্ম-সমর্পণ না করছে, দীক্ষার কোন প্রশ্নই ওঠে না। দিব্য জ্ঞান হৃদে প্রকাশিত। দিব্য জ্ঞান মানে "পারমার্থিক জ্ঞান"। সুতরাং গুরুর সাথে কৌতুক খেলতে, কূটনীতিক এবং ষড়যন্ত্রকারী হয়ে উঠতে, এই মূর্খতা ভগবৎভক্তিযোগে সাহায্য করবে না। তুমি কিছু অন্য জিনিস পেতে পার, কিছু জাগতিক লাভ, কিন্তু পারমার্থিক জীবন পুরো ধ্বংস হয়ে যাবে। এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন পারমার্থিক জ্ঞানদানের জন্য, কীভাবে টাকা পেতে হয়, কীভাবে টাকা উপার্জন করতে হয় তার জন্য নয়। সেটা কৃষ্ণভাবনামৃত নয়। চৈতন্য মহাপ্রভু শিক্ষা দিয়েছেন,

ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং
কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে
(চৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্য ২০.২৯)

ন ধনং। বিষয়ীরা, তারা কি চায়? তারা টাকা চায়। তারা অনেক অনুগামী এবং অনেক অনুসারী চায়, অথবা সুন্দর স্ত্রী। এটাই বিষয়ী। কিন্তু চৈতন্য মহাপ্রভু তা চান নি। ন ধনংঃ "না, না। আমি টাকা চাই না।" এটাই শিক্ষা। ন ধনং ন জনংঃ "আমি কারও ওপর আধিপত্য করতে চাই না।" না। না...ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং কবিতাং; এক সুন্দর স্ত্রীর কাব্যিক কল্পনা। "এই জিনিসগুলো আমি চাই না।" কি হয়? তখন ভগবৎ ভক্তি যোগ শুরু হয়,

মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে
ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী ত্বয়ি
(চৈঃচঃ অন্ত ২০.২৯)

তখন ভগবৎভক্ত মুক্তিও চায় না। কেন কৃষ্ণ,চৈতন্য মহাপ্রভু বলছেন জন্মনি জন্মনি, "জন্মে জন্মে..."? যে মুক্ত, সে এই ধরাধামে আর জন্ম নেয় না। যারা মায়াবাদী, তারা ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন হয়ে যায়, শ্রীকৃষ্ণের দেহ থেকে নির্গত রশ্মি, এবং যারা ভক্ত, তারা বৈকুণ্ঠধামে, অথবা গোলোক বৃন্দাবনে প্রবেশের অনুমতি পায়। (পাশে) আওয়াজ কর না। তাই যদি আমরা প্রসন্নমনা হতে চাই, সর্বদা উল্লসিত- সেটাই পারমার্থিক জীবন। এমন নয় যে সবসময় বিষণ্ণ, কিছু পরিকল্পনা তৈরি করছি। সেটা পারমার্থিক জীবন নয়। তুমি কোন জাগতিক ব্যক্তিকে কখনও প্রসন্ন পাবে না। সে বিষণ্ণ, চিন্তা করছে , ধূমপান করছে, মদ্য পান করছে, কিছু বড় বড় পরিকল্পনা তৈরি করছে। সেটা বিষয়ী। এবং ভগবৎ-ভক্তি-যোগঃ প্রসন্ন-মনসো। ভগবৎ গীতায় আছে,

ব্রহ্ম-ভুত প্রসন্নাত্মা
ন শোচতি ন কাঙ্খতি
(গীতা ১৮.৫৪)

প্রসন্নাত্মা। এটি পারমার্থিক জীবন। যখন তুমি প্রকৃতই পারমার্থিক জীবনে প্রবেশ করবে, নির্বিশেষবাদ অথবা সবিশেষবাদ যাই হও না কেন, দুটোই পারমার্থিক; শুধু পার্থক্য হল নির্বিশেষবাদীরা মনে করে যে "আমি আত্মা; ভগবান আত্মা। তাই আমরা এক। আমরা এতে লীন হয়ে যাব।" সাযুজ্য-মুক্তি। কৃষ্ণ তাদের সাযুজ্য-মুক্তি দেন। কিন্তু তা নিরাপদ নয়, কারণ আনন্দময়োহভ্যাসাৎ (বেদান্ত-সুত্র ১.১.১২) আনন্দ, প্রকৃত আনন্দ, একা অনুভব করা যায় না। দুজন থাকতে হবে। ভালবাসার অর্থ এই নয় যে "আমি নিজেকে ভালবাসি" এবং ভালবাসার ধ্যান করি। না। সেখানে অবশ্যই অন্য একজন ব্যক্তি থাকবে, প্রেমিক। তাই দ্বৈতবাদ। যখনই তুমি ভক্তির পাঠশালায় আসবে, সেখানে অবশ্যই দ্বৈতবাদ থাকবে। দুজন - কৃষ্ণ এবং কৃষ্ণের ভক্ত। এবং কৃষ্ণ ও কৃষ্ণের ভক্তদের আদান প্রদান হল ভক্তি। সেই লেনদেন, তাকে বলা হয় ভক্তি। এটাই ভগবৎ-ভক্তি-যোগ। অদ্বৈতবাদ নয়, একতা। সবসময় ভক্তরা রয়েছে...ভক্তরা ভগবানকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করছে।