BN/Prabhupada 1060 - যদি না ভগবদ্গীতার জ্ঞান বিনয়ী ভাব নিয়ে গ্রহণ করা হয়...



660219-20 - Lecture BG Introduction - New York

যতক্ষণ না একজন ভগবদ্গীতার পাঠ বিনম্র ভাবে না করে... সর্বমেতদ্‌ ঋতং মন্যে যন্মাং বদসি কেশব (ভ: গী: ১০/১৪) হে শ্রীকৃষ্ণ, তুমি আমাকে যা বলেছ তা আমি সম্পূর্ণ সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তোমার ভগবত্তা ! তোমার পরম ভগবত্তার তত্ত্ব উপলব্ধি করা সুদুরুহ। সুতরাং দেব অথবা দানব কেউই তোমার তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। আপনাকে এমনকি দেব-দেবীরাও জানতে পারে না। তার মানে, মানুষের কথা আর কি, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এমনকি মহাপুরুষরাই জানতে পারে না। এবং একজন মানুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত না হয়ে কিভাবে তাকে বুঝতে পারবে?

সুতরাং ভগবদ্গীতার জ্ঞান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হয়েই গ্রহণ করা উচিত। একজন নিজেকে শ্রীকৃষ্ণের সমকক্ষ বলে মনে করা উচিত নয়, অথবা তাকে একজন সাধারণ ব্যাক্তি, মহাপুরুষ মনে করা উচিত নয়। না। শ্রীকৃষ্ণই হল পরমেশ্বর ভগবান। সুতরাং ভগবদ্গীতার বিবৃতি অনুসারে কিংবা অর্জুনের অভিব্যক্তি অনুসারে, ভগবদ্গীতাকে বুঝতে চেষ্টা করার মত ব্যাক্তি, আমাদের উচিত শ্রীকৃষ্ণকে পরম পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান বলে গ্রহণ করা, তারপর, সেই রকম বিনম্র মনোভাব নিয়ে শ্রদ্ধাবনত বিনম্র চিত্তে ভগবদ্গীতা না পড়লে, ভগবদ্গীতা বুঝতে পারা খুবই কঠিন, কারণ শাস্ত্রটি চিরকালই বিপুল রহস্যাবৃত।

সুতরাং ভগবদ্গীতায়....... আমরা দেখব আসলে এই ভগবদ্গীতা কি? ভগবদ্গীতার উদ্দেশ্য হচ্ছে অজ্ঞানতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মানুষকে উদ্ধার করা। প্রতিটি মানুষই নানাভাবে দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে, যেমন ‍কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অর্জুনও এক মহা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অর্জুন ভগবানের কাছে আত্মসমর্পন করলেন এবং তার ফলে তখন ভগবান তাকে গীতার তত্ত্বজ্ঞান দান করে মোহমুক্ত করলেন। এই জড় জগতে কেবল অর্জুনই নন, আমরা প্রত্যেকেই সর্বদাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জর্জরিত। অসৎ-গ্রহাৎ. এই জগতের অনিত্য পরিবেশে আমাদের যে অস্তিত্ব, তা অস্তিত্বহীনের মতো। কিন্তু মূলত আমরা অস্তিত্বহীন নই। আমাদের অস্তিত্ব হচ্ছে নিত্য, কিন্তু যে-কোন কারণবশত আমরা অসৎ সত্তায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। অসৎ বলতে বুঝায় যার অস্তিত্ব নেই।

হাজার হাজার মানুষের মধ্যে দুই-একজন অনুসন্ধান করতে শুরু করেছে আমি কে? কেনই বা সে দুঃখ-দুর্দশায় জর্জরিত এই বিষয়ে সচেতন..... মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না এই বিষয়ে সচেতন হচ্ছে আমি কেন দুঃখ ভোগ করছি? আমি এই দুঃখ-দুর্দশা চাই না। আমি এ সমস্ত দুঃখ-দুর্দশার সমাধান করতে চেয়েছি, কিন্তু আমি ব্যর্থ। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে বুঝতে পারছে যে, সে যথার্থ মানুষ নয়। মানুষের মনুষ্যত্বের সূচনা তখনই হয় যখন তার মনে এই সমস্ত প্রশ্নের উদয় হতে শুরু করে। বহ্মসুত্রে এই অনুসন্ধানকে বলা হয় ব্রহ্মজিজ্ঞাসা। অথাতো ব্রহ্মজিজ্ঞাসা। মানব জীবনে আর সমস্ত কর্মকেই ব্যর্থ বা অর্থহীন বলে গণ্য করা হয়- এই ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা ব্যতীত মনে। অতএব যে লোক তার মনে এই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন আমি কে, আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি, আমি কোথা থেকে এলাম? মৃত্যুর পরে আমি কোথায় যাব? যখনই কারো মনে এই সমস্ত প্রশ্নের উদয় হয়, তখন একজন বিবেকী মানুষের মন জাগ্রত হয়, তারাই ভগবদ্গীতার প্রকৃত শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এবং তিনি অবশ্যই শ্রদ্ধাবান হবেন। শ্রদ্ধাবান। তিনিই ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা, অকৃত্রিম ভক্তি অর্জন করেন। অর্জুন ছিলেন এমনই একজন আদর্শ অনুসন্ধানী শিক্ষার্থী।