BN/Prabhupada 0422 - মহামন্ত্র জপের সময় দশ অপরাধ বর্জন ৬-১০



Lecture & Initiation -- Seattle, October 20, 1968

শ্রীল প্রভুপাদ: তারপর?

মধুদ্বিষ: "ষষ্ঠ অপরাধ- নাম বলে পাপ আচরণ করা।" শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। এখন এই দীক্ষার মাধ্যমে, আজ থেকে তোমার হিসেব, অতীত জীবন, সমস্ত পাপকর্ম, যা কিছু ছিল সব শেষ হলো। এখন, হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার মাধ্যমে, তোমার সমস্ত পাপকর্মের ফল বিনষ্ট করতে পারো। এর মানে এই নয় যে তুমি পাপকর্ম করবে এবং চিন্তা করবে যে, "আমি পাপকর্ম করব এবং জপ করব। এর ফলে পাপের ফল বিনষ্ট হবে। হিসেব বরাবর থাকবে।" না, এমনটি নয়। এটি কখনো কোর না। যেটি হয়ে গেছে তা তো হয়ে গেছেই। ব্যাস্‌। আর না। এখন শুদ্ধ জীবন হওয়া উচিত। আর অবৈধ যৌনজীবন নয়, নেশাজাতীয় দ্রব্য নয়, দ্যুতক্রীড়া নয় এবং আমিষ আহার নয়। এখন এসব শেষ। এটি এই নয় যে, "ওহ, আমি হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করছি। তাই হোটেল যাওয়া যাক এবং কিছু মাংস খেয়ে নেয়া যাক।" না। তখন এটি হবে মারাত্মক পাপ। এটি কখনো করো না। তখন হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করা কার্যকরী হবে না, যদি তুমি অপরাধ কর। তারপর?

মধুদ্বিষ: "সপ্তম অপরাধ- শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিকে ভগবানের দিব্য নামের মহিমা উপদেশ করা।"

শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। অবিশ্বস্ত, যাদের কোন বিশ্বাস নেই, যে ভগবান এবং তাঁর নাম হলো পরম। ঠিক যেমন এই জড় জগতে, কোন ব্যক্তির নাম এবং ব্যক্তি ভিন্ন। মনে করো তোমার নাম মি. জন। তাই যদি আমি বলি, "জন, জন, জন," যেহেতু জন একশত মাইল দূরে। তাই কোন সাড়া পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই নাম, ভগবানের দিব্য নাম, ভগবান সব জায়গায় উপস্থিত আছেন। ঠিক টেলিভিশনের মতো। আমি বলতে চাচ্ছি টেলিভিশন হচ্ছে, কোন একজায়গায় ছাড়া হয়। যদি তোমার যন্ত্রটি থাকে, সাথে সাথে ছবিটি তোমার ঘরে চলে আসবে। যদি এটি জড়জাগতিক ভাবে সম্ভব হয়, তাহলে আধ্যাত্মিক ভাবে শ্রীকৃষ্ণের নামের মাধ্যমে এর সম্ভাবনা কতটুকু? তুমি এখন শ্রীকৃষ্ণের নাম জপ করছো, তার মানে শ্রীকৃষ্ণ সাথে সাথে তোমার জিহ্বায় অবস্থান করছেন। সুতরাং এটি কি?

মধুদ্বিষ: সপ্তম? "শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিকে ভগবানের দিব্য নামের মহিমা উপদেশ করা।"

শ্রীল প্রভুপাদ: তাই, যার বিশ্বাস নেই যে ভগবানের নাম এবং স্বয়ং ভগবান একই, এখানে কোন পার্থক্য নেই, তাকে কখনোই ভগবানের মহিমা উপদেশ করা উচিত নয়। তাকে উপদেশ দেয়া হয় বোঝার জন্য, কিন্তু সে যদি বুঝতে অসমর্থ হয়, তখন তাকে উপদেশ করা উচিত নয়, অথবা তাকে কিছু সময় দেয়া দরকার বুঝার জন্য। কিন্তু তোমার সবসময় মনে রাখা উচিত যে, নাম চিন্তামণিঃ কৃষ্ণশ্চৈতন্য রস বিগ্রহঃ। (চৈ.চ. মধ্য ১৭.১৩৩) শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীকৃষ্ণের নাম অভিন্ন। যখনই তুমি হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করছ, তার মানে শ্রীকৃষ্ণ তোমার জিহ্বায় নৃত্য করছেন। তাই তোমাকে এইভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ঠিক যেমন শ্রীকৃষ্ণ.. তোমার গুরুদেব যখন তোমার সামনে উপস্থিত থাকেন তখন তুমি তাঁকে অনেক বেশি সন্মান প্রদর্শন কর। সুতরাং যদি শ্রীকৃষ্ণ তোমার জিহ্বায় অবস্থান করেন, তখন তোমাকে কতটা সতর্ক থাকতে হবে? তাই তোমাকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে শ্রীকৃষ্ণ এখানে আছেন। শ্রীকৃষ্ণ সব জায়গায় সবসময় আছেন। ভগবান সব জায়গায় আছেন, কিন্তু আমরা তা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু এই বিশেষ জপ, যত দ্রুত পবিত্র নাম জপ, এর অর্থ তোমার অবশ্যই জানা উচিত। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণের সাথে সঙ্গ করার ফলে তুমি পবিত্র হতে পারবে। শৃন্বতাম্ স্বকথাঃ। ঠিক যেমন আগুনের সংস্পর্শে তুমি উত্তাপ অনুভব করো, অনুরূপভাবে, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গ প্রভাবে তুমি পবিত্র হতে পারবে। ধীরে ধীরে তোমার আত্মশুদ্ধি হবে। আর কোন জাগতিক জিনিস নয়। শেষ। এই হলো পদ্ধতি। তারপর?

মধুদ্বিষ: "অষ্টম অপরাধ- পবিত্র নামকে বৈদিক কর্মকাণ্ডে বর্ণিত পূর্ণকর্ম বলে মনে করা।

শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। এখন এই অনুষ্ঠানটি করা হচ্ছে। এটিকে এভাবে নেয়া উচিত নয় যে আমরা কিছু ধর্মীয় আচার করছি। না। ধর্মীয় আচার ভিন্ন জিনিস। এটি হলো.. যদিও এটি আনুষ্ঠানিকতা মনে হচ্ছে, কিন্তু এটি হলো সর্বোৎকৃষ্ট। এটির অবস্থান সকল ধরনের ধর্মের উপরে। এটি হলো উচ্চতর শিক্ষা। এই পদ্ধতিটি হলো কীভাবে ভগবানের প্রতি ভালবাসা বিকশিত করা যায়। এইটুকুই..."ধর্ম" মানে, সাধারণত বিশ্বাস। কিন্তু এটি বিশ্বাসের প্রশ্ন নয়। এটি মূলত বিকাশ করছে, তুমি শ্রীকৃষ্ণকে কতটুকু ভালোবাসছ। সুতরাং এটি সকল ধর্মের অতীত। এটি সাধারণ কোন ধর্ম নয়। "ধর্ম" মানে..মনে কর তুমি খ্রিষ্টান, আমি হিন্দু। যখন আমর এই শরীরটি নষ্ট হয়ে যাবে, তখন আমার খ্রিষ্টান ভাব বা ধর্ম, সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ভগবানের প্রতি এই যে ভালোবাসা তা কখনো শেষ হবে না। এটি তোমার সাথে যাবে। তুমি যেখানেই জন্মগ্রহণ কর, এটি বিকশিত হবে। যদি তুমি শেষ করতে পারো, তুমি সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের কাছে, তাঁর ধামে ফিরে যেতে পারবে, এবং তোমার সকল জড়জাগতিক বন্ধন শেষ হয়ে যাবে। এমনকি তুমি যদি সক্ষম নাও হও, তারপরও এটি তোমার সাথে যাবে। সম্পদ। এটি হলো...ব্যাংকের হিসেব কখনো কমবে না। এটি বাড়বে। তারপর?

মধুদ্বিষ: "নবম অপরাধ- পবিত্র নাম জপ করার সময় অমনোযোগী থাকা।"

শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। যখন তুমি জপ করবে তখন সেটি তোমাকে শুনতেও হবে। হরে কৃষ্ণ, এই দুটি শব্দ, হরে কৃষ্ণ, তোমাকে শুনতেও হবে। যদি তুমি শুন, তাহলে তোমার মন এবং জিহ্বা উভয়ই তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটি হলো প্রকৃত ধ্যান, প্রথম শ্রেণীর যোগ, শোনা এবং জপ করা। তারপর?

মধুদ্বিষ: "তারপর সর্বশেষ দশম অপরাধ- জপের অনুশীলনে নিযুক্ত থাকার পরও বিষয়াসক্তি বজায় রাখা।"

শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। এই সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি হলো যে আমরা আমাদের ভালোবাসা জড়জাগতিক বস্তু থেকে ভগবানের দিকে স্থানান্তর করতে যাচ্ছি। তাই আমাদের সংযমী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এটি হবে স্বয়ংক্রিয়। ভক্তিঃ পরেশানুভব বিরক্তিঃ অন্যত্র স্যাৎ (শ্রীমদ্ভাগবতম্ ১১.২.৪২) যদি তুমি সত্যিকার অর্থে ভগবানের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে পার, তখন স্বাভাবিকভাবেই তুমি এইসকল জড়জাগতিক বিষয়গুলো ভালোবাসতে ভুলে যাবে । এটি হলো ক্রম। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। তোমার উচিত... তাহলে এটি সম্ভব। ঠিক যেমন যখন আমরা খাই, তখন ধীরে ধীরে খাওয়ার প্রতি আমাদের লালসা কমতে থাকে। যখন তোমার পেট ভরে যায়, তখন তুমি বলো, "আমার আর চাই না। আমার হয়ে গেছে।" অনুরূপভাবে, কৃষ্ণভাবনামৃত এতই সুন্দর যে তাতে উন্নতির সাথে সাথে তুমি তথাকথিত জড়জাগতিক বিষয়গুলো ভোগ করতে ভুলে যাবে। এবং যখন এতে তুমি পূর্ণতা প্রাপ্ত হবে, তখন তুমি জড়জাগতিক বিষয়গুলোকে পাত্তাই দিবে না। এটিই হলো পরীক্ষা। তুমি বলতে পারবে না, "আমার ধ্যানে উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য আমার জড়জাগতিক আসক্তি একই আছে। তার মানে কোন উন্নতি হয়নি। উন্নতি মানে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির প্রতি তোমার আসক্তি কমে গেছে। এটি হলো উন্নতি। এখন তুমি জপ করতে পারো...ওহ তুমি পেয়েছ....হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ কর।