BN/Prabhupada 0699 - একজন ভক্ত শ্রীকৃষ্ণের মূল স্বরূপে তাঁকে ভালবাসতে চান



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

ভক্তঃ প্রভুপাদ, আমরা আজকে সকালে ভগবদগীতায় পড়ছিলাম যে যখন ভগবান অর্জুনকে তাঁর বিশ্বরূপ দেখালেন তখন তিনি এবং সমস্ত দেবদেবীরা, ভক্তেরা অসুরেরা সকলেই তাঁর সেই বিশ্বরূপ দেখে ভীত হয়েছিলেন। এটি কিভাবে সম্ভব যে ভগবানের ভক্তেরা যেমন দেবদেবীরা বিশ্বরূপ দেখে ভয় পেতে পারেন?

প্রভুপাদঃ কারণ তারা বিশ্বরূপ ভালবাসেন না তা কি সম্ভব? তুমি পারবে বিশ্বরূপ দেখে সেটাকে ভালবাসতে? শ্রীকৃষ্ণ যদি তোমার সামনে বিশ্বরূপে আবির্ভূত হয় তুমি প্রেমভালবাসা সব ভুলে যাবে (হাসি) বিশ্বরূপ ভালবাসার চেষ্টা কোর না। শ্যামসুন্দরকে ভালবাস। যুদ্ধের সময়ে আমরা শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখেছি আমার মনে আছে , হয়তো ১৯৪২ সাল হবে। তারিখটা ভুলে গেছি আমি প্রসাদ পাচ্ছিলাম। আর তখনই কোলকাতায় বোমাবাজির সাইরেন বেজে উঠল। তখন ব্যবস্থাটা ছিল এইরকম যে যখনই বোমাবাজির সাইরেন বাজবে সরকারের ঠিক করে দেয়া আশ্রয় ঘর থাকতো, তোমার বাড়ির এই ঘরে তুমি আশ্রয় নেবে। আমাদের সবাইকে সেই ঘরে চলে যেতে হোত। আর তারপর আবার বোমাবর্ষণ শুরু হোত। (বোমাবর্ষণের আওয়াজ অনুকরণ করে) আমরা সেই সময় বিশ্বরূপ দেখেছি আমি ভাবছিলাম যে নিশ্চয়ই সেটিও কৃষ্ণের একটি রূপ কিন্তু সেই রূপকে ভালবাসা যায় না। (হাসি) তাই ভগবানের মূল স্বরুপে ভক্ত তাঁকে ভালবাসেন বিশ্বরূপ তাঁর আদি রূপ নয় তিনি যে কোন রূপেই আসতে পারেন, সেটি তাঁর সর্বশক্তির উদাহরণ। কিন্তু প্রেমপূর্ণ রূপটি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণরূপ, শ্যামসুন্দর রূপ।

যেমন ধর, একটি ছোট বালকের বাবা হচ্ছে পুলিশ অফিসার একদিন তিনি পিস্তলে গুলি চালাতে চালাতে কাছে সেই ছেলের সামনে এলেন এমনকি সেই ছোট ছেলেটিও তাঁর বাবাকে ভালবাসতে ভুলে যাবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সন্তান বাবাকে বাড়িতে থাকা অবস্থায় পছন্দ করে, ঠিক স্নেহময় পিতার মতো। ঠিক তেমনই আমরা শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসি তিনি ঠিক যেমনটা সেইভাবে - শ্যামসুন্দর রূপে। অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখানো হয়েছিল বদমাশ জনসাধারণের উদ্দেশ্যে কারণ শ্রীকৃষ্ণ বলেন, "আমি ভগবান" আর তাঁকে অনুকরণ করে বহু বদমাশেরা ঘোষণা করে যে "আমি ভগবান" তাই অর্জুন বলেছিলেন, "কৃপা করে তোমার বিশ্বরূপ দেখাও"। যাতে করে এই সমস্ত বদমাশদেরও তাদের বিশ্বরূপ দেখাতে বলা যায়। যদি তুমি সত্যিই ভগবান হয়ে থাকো তো বিশ্বরূপ দেখাও ওরা সেটি পারবে না। তাই না?

ভক্তঃ ভগবানের শক্তি হিসেবে আমাদের কি মায়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ নয়?

প্রভুপাদঃ হুম্‌ ?

ভক্তঃ ভগবানের শক্তি হিসেবে আমাদের কি মায়াদেবীকে সম্মান করা উচিৎ নয়?

প্রভুপাদঃ যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি সম্মানজনক থাকো তাহলে তুমি সবাইকেই সম্মান করছো। সেটিই ভক্তের যোগ্যতা। তোমাকে একটি পিঁপড়ের প্রতিও যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে, মায়ার কথা আর কি বলার আছে? মায়া ভগবানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শক্তির মধ্যে একটি । আমরা কেন মায়াকে সম্মান করব না? আমরা ... মায়া, দুর্গাকে প্রার্থনা করি, "হে দুর্গা, সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়সাধনশক্তিরেকা ছায়েব যস্য (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪) যখন আমরা দুর্গাকে প্রার্থনা করি, তখন আমরা শ্রীকৃষ্ণকেও প্রার্থনা করি, কারণ আমাদেরকে সর্বত্র কৃষ্ণদর্শন করতে হবে। আমরা মায়ার কার্যকলাপ দেখছি সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে সেখানে শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে হবে, "ওহ্‌, মায়াদেবী ভগবানের নির্দেশনায় কি চমৎকার কাজ করছেন"। পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্মান করা মানে সরকারকে সম্মান করা। যতদিন তিনি সেই অফিসে দায়িত্বে আছেন, আমরা তাঁকে সম্মান জানাই। এবং অফিস ছাড়াও। একজন ভদ্রলোক অফিসেও সম্মান করেন, আবার অফিস ছাড়াও সম্মান করেন। তাঁর কাছে এটা কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু যদি তুমি পুলিশ অফিসারকে সম্মান কর - মায়া মানে ভগবানের পুলিশ বাহিনী। তার মানে দাঁড়াচ্ছে তুমি সরকারকেও সম্মান জানাচ্ছো। তাই এই হচ্ছে সম্মান জানানো। গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌

সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয় সাধনশক্তিরেকা
ছায়েব যস্য ভূবনানি বিভর্তি দুর্গা
ইচ্ছানুরূপম্‌ অপি যস্য চ চেষ্টতে সা
গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌ তমহম্‌ ভজামি
(ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৪)

এই দুর্গা বা জড় শক্তি এতোই শক্তিশালী যে তিনি সৃষ্টি করতে পারেন, বিনাশ করতে পারেন এবং পালনও করতে পারেন কিন্তু তিনি শ্রীকৃষ্ণের অধীনে তাঁর নির্দেশনায় কাজ করছেন তাই আমার সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে ভজনা করি যার নির্দেশনায় দুর্গা কাজ করছেন অর্থাৎ যখন তুমি মায়াকে সম্মান জানাচ্ছো, তুমি একই সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকে সম্মান জানাচ্ছো।