BN/Prabhupada 0912 - যারা উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন তাঁরা ভেতরে এবং বাইরে ভগবানকে দেখতে পারেন



730420 - Lecture SB 01.08.28 - Los Angeles

সমোহহম্‌ সর্বভূতেষু (গীতা ৯/২৯) তিনি সকলের প্রতিই সমভাবাপন্ন এখন তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী এটা তোমার ওপর নির্ভর করে তুমি উনাকে কীভাবে বুঝবে। তাই কুন্তীদেবীও এই শ্লোকে একই কথা বলছেনঃ সমম্‌ চরন্তম্‌ সর্বত্র (ভাগবত ১/৮/২৮) সমম্‌ চরন্তম্‌। চরন্তম্‌ মানে গতিশীল তিনি সর্বত্র বিচরণ করছেন, বাইরে, ভেতরে সর্বত্র। আমাদের কেবল তাঁকে দেখার জন্য আমাদের চোখকে পরিষ্কার করতে হবে তার নাম ভগবদ্ভক্তি , ভগবানের উপস্থিতি অনুভব করার জন্য ইন্দ্রিয়কে পরিশুদ্ধ করা ভগবান সর্বত্র আছেন। অন্তর্বহিঃ অন্তঃ মানে ভেতরে, বহিঃ মানে বাইরে "যারা কম বুদ্ধিসম্পন্ন তারা ভগবানকে কেবল ভেতরে খোঁজেন, আর যাদের উন্নত বুদ্ধিমত্তা, তাঁরা ভেতরে এবং বাইরে সর্বত্র তাঁকে দেখতে পান এটাই হচ্ছে পার্থক্য।

ধ্যান হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধির লোকেদের জন্য ধ্যান মানে তোমাকে তোমার ইন্দ্রিইয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যোগ অভ্যাস মানে যোগ ইন্দ্রিয় সংযম। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো অত্যন্ত চঞ্চল। যোগের মাধ্যমে, অর্থাৎ বিভিন্ন আসন অভ্যাসের মাধ্যমে মন এবং ইদ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করা হয় তারপর আমরা আমাদের হৃদয়ের দ্বারা ভগবান শ্রীবিষ্ণুর রূপের ওপর মনোনিবেশ করতে পারি এর নাম যোগ পদ্ধতি অথবা যারা অত্যন্ত দেহাত্মবুদ্ধিতে মগ্ন তাদের জন্য যোগ পন্থা নির্দেশিত, দৈহিক আসনাদি অভ্যাস করা এবং ভগবানকে হৃদয়ে দেখার চেষ্টা করা। কিন্তু ভক্তরা, আরও উন্নত তাঁদের জন্য আলাদা করে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করতে হয় না কারণ ভগবদ্ভক্তিতে যুক্ত হওয়া মানে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করা

যেমন ধর, তুমি যদি বিগ্রহ পূজায় নিযুক্ত থাক, মন্দির মার্জন বিগ্রহকে সাজসজ্জা করাতে, বিগ্রহের জন্য ভোগরন্ধন করতে, সবকিছু সুন্দরভাবে কর... তাহলে তোমার ইন্দ্রিয় এমনিতেই নিযুক্ত থাকছে তোমার ইন্দ্রিয়গুলো বিক্ষিপ্ত হবার সুযোগ কোথায়? ইন্দ্রিয়গুলো আপনা থেকেই সংযত। কারণ আমাদের ইন্দ্রিয় তখন হৃষীকেন হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্যতে (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্যলীলা ১৯/১৭০) ভক্তি মানে ইন্দ্রিয়কে ইন্দ্রিয়ের অধিপতির সেবায় নিযুক্ত করা হৃষীকেশ মানে ইন্দ্রিয়ের অধিপতি এবং হৃষীক মানে ইন্দ্রিয় বর্তমানে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো নিজেদের পরিতৃপ্তির কাজে নিযুক্ত সর্বোপাধি, উপাধিযুক্তঃ। আমি এই দেহ তাই আমার অবশ্যই আমার ইন্দ্রিয়কে সংযত করা উচিৎ। এটি হচ্ছে জীবনের অশুদ্ধ অবস্থা কিন্তু যখন কেউ এই উপলব্ধিতে আসেন যে, আমি আমার এই দেহটি নই আমি চিন্ময় আত্মা, ভগবানের অংশ, তাই আমার চিন্ময় ইন্দ্রিয়ের দ্বারা পরমেশ্বর ভগবানের সেবায় নিযুক্ত করা উচিৎ সেটিই দরকার।

এর নাম মুক্তি। মুক্তি মানে হিত্বা অন্যথা রূপম্‌ আমরা যখন বদ্ধ অবস্থায় তখন আমরা আমাদের স্বরূপগত অবস্থান ত্যাগ করি, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কথা অনুযায়ী, আমাদের নিত্য স্বরূপ হচ্ছে জীবের স্বরূপ হয় নিত্য-কৃষ্ণ-দাস (চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ২০/১০৮-১০৯) আমাদের মূল স্বরূপ হচ্ছে আমরা শ্রীকৃষ্ণের নিত্য দাস। তাই যেই মুহূর্তে আমরা ভগবানের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করি, তৎক্ষণাৎ আমরা মুক্ত তৎক্ষণাৎ। কোন পন্থার মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। ইন্দ্রিয়কে এইভাবে ভগবানের সেবায় লাগানোর যে পন্থা, এর মাধ্যমেই তিনি মুক্ত।