BN/Prabhupada 0442 - খ্রিষ্টান মত অনুযায়ী, তারা প্রার্থনা করেন, "হে ভগবান আমাদের প্রতিদিনের খাবার জোগান দিন"
Lecture on BG 2.8-12 -- Los Angeles, November 27, 1968
ভক্ত: "শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ভবিষ্যতেও ভগবান এবং অন্যদের এই স্বতন্ত্রতা, নিত্য বজায় থাকবে যেহেতু এটি উপনিষদগুলোতে নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের এই বক্তব্য প্রামাণিক।"
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, উপনিষদ বলে নিত্য নিত্যানাম। এখন, নিত্য মানে শাশ্বত এবং পরমেশ্বর ভগবান হলেন সর্বোচ্চ নিত্য বা শাশ্বত, এবং আমরা স্বতন্ত্র আত্মারা, আমরাও নিত্য শাশ্বত। সুতরাং তিনি হলেন শাশ্বত নেতা। এক বহুনাম... তিনি কিভাবে নেতা হলেন? এক বহুনাম বিদধাতি কামান। এই একজন, একাই অনন্ত ব্যক্তিত্ব, তিনি অন্যান্য নিত্য ব্যক্তিদের সকল প্রয়োজনের যোগান দিচ্ছেন। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এবং প্রকৃতপক্ষে আমরা সেগুলো ভোগ করছি। ঠিক যেমন খ্রিষ্টান ধর্মতত্বে, প্রত্যেকেই গির্জায় যায় এবং ভগবানের পূজা করে, "আমাদের প্রতিদিনকার রুটি প্রদান করুন।" কেন সে ভগবানের কাছে চায়? অবশ্যই, এই নাস্তিক শ্রেণীর মানুষেরা এখন তাদের শিক্ষা দিচ্ছে, রুটি কোথায়? তুমি গির্জায় যাচ্ছ। তুমি আমাদের কাছে আস; আমরা তোমার রুটির যোগান দেব।" তাই এই বৈদিক চিন্তা এখানেও আছে। বেদ সমূহ বলে, এক বহুনাম বিদাধতি কামান। এই সর্বোচ্চ নিত্য একজন। তিনি যোগান দিচ্ছেন, তিনি অন্যান্য সকল নিত্য ব্যক্তিত্বদের পালন করছেন। এবং বাইবেলও নির্দেশ করছেন যে, "তুমি যাও, ভগবানের কাছে তোমার রুটি চাও।" সুতরাং ভগবান যদি না রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং সরবরাহকারী হন তবে এই আদেশ কেন সেখানে রয়েছে? অতএব তিনি হলেন নেতা, তিনি হলেন পালনকর্তা। এবং বেদ সমূহ পরিষ্কারভাবে বলে এই হলো অবস্থা। তিনি হচ্ছেন সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব। এবং এটি জানার মাধ্যমে একজন শান্তি লাভ করতে পারে। এটিই হলো বৈদিক নির্দেশ। এগিয়ে যাও।
ভক্ত: "শ্রীকৃষ্ণের এই বক্তব্য প্রামাণিক কারণ শ্রীকৃষ্ণ মায়ার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে না। যদি স্বতন্ত্রতা..."
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। যদি মায়াবাদী দার্শনিকেরা বলে যে শ্রীকৃষ্ণের এই বক্তব্য হলো মায়া, "তিনি বলেন যে 'প্রত্যেকেই অতীতে স্বতন্ত্র ছিল।' না, অতীতে সকলেই এক ছিল, একসাথে, সমজাতীয়। মায়ার দ্বারা, আমরা স্বতন্ত্র হয়েছি।" যদি মায়াবাদীরা এমন বলে, তখন শ্রীকৃষ্ণ বদ্ধ আত্মাদের মধ্যে একজন হয়ে যায়। তিনি না ...তিনি তাঁর কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলেন। কারণ বদ্ধ আত্মা আপনাকে সত্য দিতে পারে না। আমি বদ্ধ আত্মা। আমি এমন কিছু বলতে পারি না যা পরম। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকে পরম হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং যদি মায়াবাদী মতবাদ গ্রহণ করা হয়, তবে শ্রীকৃষ্ণের মতবাদ বাদ দিতে হবে। যদি শ্রীকৃষ্ণকে বাদ দেওয়া হয়, তবে শ্রীকৃষ্ণের বই, শ্রীমদ্ভগবদগীতা পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। এটি অকেজো, সময়ের অপচয়। তিনি যদি আমাদের মতো বদ্ধ আত্মা হন... কারণ আমরা বদ্ধ আত্মার কাছ থেকে কোনও নির্দেশনা নিতে পারি না। সুতরাং আধ্যাত্মিক গুরুদেব, এমনকি তুমি যদি তাকে বদ্ধ আত্মা রুপে গ্রহণ কর, কিন্তু তিনি তার পক্ষ থেকে কিছুই বলবেন না। তিনি শ্রীকৃষ্ণের পক্ষ থেকে বলবেন। সুতরাং যদি না...বৈদিক নীতিটি হলো যদি না কেউ জড়জাগতিক অবস্থা থেকে মুক্ত না হন, সে আমাদের কোন নিখুঁত জ্ঞান দিতে পারে না। এই বদ্ধ আত্মা, তিনি একাডেমিকভাবে উন্নত হতে পারেন, শিক্ষিত হতে পারেন, তিনি আমাদের কোন নিখুঁত জ্ঞান দিতে পারেন না। একজনই আছেন যিনি এই জড় আইনগুলির শর্তের উর্ধ্বে, তিনি আমাদের নিখুঁত জ্ঞান দিতে পারেন। অনুরূপভাবে শঙ্করাচার্য, তিনিও নির্বিশেষবাদী, তবে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে সর্বোচ্চ কর্তা রুপে গ্রহণ করেছেন। স ভগবান স্বয়ং কৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব পরমেশ্বর ভগবান। আধুনিক মায়াবাদী দার্শনিকেরা, তারা শঙ্করাচার্যের এই মতবাদ প্রকাশ করে না। লোক ঠকানোর জন্য। কিন্তু শঙ্করাচার্যের এই বক্তব্য এখানে আছে। আমরা প্রমান দিতে পারি। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে সর্বোচ্চ কর্তা রুপে গ্রহণ করেছেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রশংসা বা উপাসনা করে অনেক সুন্দর কবিতা লিখেছেন। এবং সবশেষে তিনি বলেছেন, ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ মূধমতে। "তোমরা মূর্খ নির্বোধেরা বল। ওহ, বুঝার জন্য তুমি ব্যকরণের উপর নির্ভর করে আছ।" "এই সমস্তই অর্থহীন।" ভজ গোবিন্দম্। "শুধু গোবিন্দের ভজনা কর।" ভজ গোবিন্দম্ ভজ...তিনি এটি তিন বার বলেছেন। "শুধু গোবিন্দের ভজনা কর।" ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্। ঠিক যেমন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তিন বার বলেছেন, হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম (চৈ. চ. আদি ১৭।২১)। তিন বার বলা মানে খুব বেশি জোর দেওয়া। ঠিক যেমন আমরা মাঝে মাঝে বলি, "তুমি এটি করো, এটি করো, এটি করো।" তার মানে আর অস্বীকার নয়। সমস্ত জোর দেওয়া শেষ। সুতরাং যখন একটি জিনিসে তিনবার জোর দেওয়া হয়, তার মানে এটি চূড়ান্ত। সুতরাং শঙ্করাচার্য বলেছেন, ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ মূধমতে। মূধ, মূধ আমি অনেক বার ব্যাখ্যা করেছি। মূধ মানে বদমাশ, গাধা। তুমি তোমার ব্যাকরণগত উপলব্ধির উপর নির্ভর করে আছ, দুক্রন্ করণে। দুক্রন্, এগুলো হলো ব্যাকরণগত প্রত্যয় এবং উপসর্গ, প্রত্যয়, প্রকরণ। সুতরাং তুমি এই মৌখিক রুট, সেই মৌখিক রুটের উপর নির্ভর করে আছ, এবং তৈরি করা, অন্যভাবে তোমার অর্থের ব্যাখ্যা করা। এই সবই বাজে। এই দুক্রন্ করণে, শব্দের ব্যাকরণগত ভেলকি, মৃত্যুর সময় তোমাকে রক্ষা করবে না। তুমি নির্বোধ, তুমি শুধু গোবিন্দের ভজনা করো, গোবিন্দের ভজনা করো, গোবিন্দের ভজনা করো। এটিও শঙ্করাচার্যের নির্দেশনার একটি। কারণ সে ছিল একজন ভক্ত, একজন মহান ভক্ত। তবে তিনি নাস্তিক হওয়ার ভান করেছিলেন কারণ তিনি নাস্তিকদের নিয়ে কাজ করতেন। তিনি নিজেকে নাস্তিক হিসাবে উপস্থাপন না করলে নাস্তিক অনুসারীরা তাকে শুনবে না। তাই তিনি মায়াবাদী দর্শন উপস্থাপন করেছিলেন। এই মায়াবাদী দর্শন চিরকাল গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। চিরন্তন দর্শন হলো শ্রীমদ্ভগবদগীতা। এটিই হলো রায়।