Template

Template:BN/Bengali Main Page - Collaborate With Us

Revision as of 13:15, 4 October 2019 by ManiGopal (talk | contribs)

" কলিযুগের পাপক্লিষ্ট, মন্দভাগ্য ও অধঃপতিত জীবেদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে আজ থেকে ৫৩৪ বছর পূর্বে ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তনের প্রবর্তন করেছিলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদবর্গ বাংলা থেকে এই আন্দোলনের সূচনা করে ক্রমান্বয়ে তা উড়িষ্যা, উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত তথা সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেন। তাঁরই দিব্য নির্দেশে শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু সারা বাংলার প্রচারকার্যের মূল ভূমিকা পালন করেন। তাই এই বঙ্গভূমি বিশেষ করে শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর আশীর্বাদপুষ্ট। পরবর্তীকালে ব্রহ্ম-মাধ্ব গৌড়ীয় বৈষ্ণব পরম্পরার আচার্যগণ একে একে তাঁদের অনবদ্য অবদানের দ্বারা এই আন্দোলনকে আরও পুষ্ট করেছেন। উল্লেখ্য বিষয় হল যে, সমগ্র জীবের কল্যাণের লক্ষ্যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এই সর্বোৎকৃষ্ট দান 'গোলোকের প্রেমধন হরিনাম সংকীর্তন' বহুকাল ধরে কেবল ভারতবর্ষের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এই আন্দোলনকে বিশ্বমাপের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যপারে যিনি বাস্তবিক পরিকল্পনা করেন তিনি হলেন ভগবান শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর বিশেষশক্তিপ্রাপ্ত পরমহংস মহাত্মা ঠাকুর শ্রীল ভক্তিবিনোদ। ১৮৯৬ সালে তিনি প্রথম পাশ্চাত্যদেশে তাঁর গ্রন্থ 'শ্রীগৌরাঙ্গলীলা স্মরণমঙ্গল' প্রেরণ করেন। এই গ্রন্থের Caitanya Mahaprabhu: His Life and Precepts (শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী ও শিক্ষা) শীর্ষক ৪৭ পৃষ্ঠার ভূমিকায় তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, খুব শীঘ্রই এমন একজন মহান ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটবে যিনি সারা বিশ্বজুড়ে পরিভ্রমণ করবেন এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করবেন। তিনি আরও বলেন সেই দিন সমাগত যখন আমেরিকান, ইংরেজ, জার্মান, ফরাসীরা মৃদঙ্গ করতাল সহযোগে তাদের নিজ নিজ নগরে-দেশে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র সংকীর্তন করবে এবং সেই সব শ্বেতাঙ্গ বৈষ্ণবেরা তাদের ভারতীয় আর্যভ্রাতাদের সাথে 'জয় শচীনন্দন, জয় শচীনন্দন' বলে কীর্তন করবে।

শ্রীল ভক্তিবিনোদের ঠাকুরের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে সার্থক রূপদান করতে ভারতের পশ্চিমবাংলার কলকাতা শহরে অভয়চরণ দে'র আবির্ভাব যিনি পরবর্তীতে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের বিশেষ কৃপাধন্য শিষ্য হন ও শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ-নামে পরিচিত হন। তিনি তাঁর শ্রীগুরুদেবের নির্দেশে মাত্র ১১ বছরে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে ভারতীয় বৈদিক সভ্যতা তথা এই হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের অভূতপূর্ব প্রচার ও প্রসার ঘটান। শ্রীল প্রভুপাদের যেই শিক্ষা সারা বিশ্বকে আজ গভীর অন্ধকার থেকে এক দিব্য আলোকের সন্ধান দিয়েছে তাঁর সূত্রপাত ইংরেজী ভাষাভাষী দেশে হলেও তিনি সর্বদাই চাইতেন কৃষ্ণভাবনামৃতের এই অপূর্ব উপহারটি বাংলা ভাষা তথা তাঁর আপন মাতৃভাষায় যেন প্রচারিত হয় এবং বাঙ্গালী লোকেদের কাছে যেন তা পৌঁছে যায়। সেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৭ সালে ইস্কনের বর্তমান জিবিসি-দের অন্যতম শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী মহারাজকে আদেশ করেন তাঁর গ্রন্থসমূহ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার জন্য। মহারাজ সেই নির্দেশকে শিরোধার্য করে এই মহান লক্ষ্যে ব্রতী হন। ১৯৮৬ সালে ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ৫০০তম আবির্ভাব তিথির বছরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনীভিত্তিক সবচাইতে প্রামাণিক গ্রন্থ শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। শ্রীল প্রভুপাদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে শ্রীমদ্ভাগবতের বাংলা ভাষায় সুসম্পন্ন হয়। এইভাবে ধীরে ধীরে শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থসমূহ বাংলা ভাষায় অনুবাদ হলেও, আরও হাজারো অমূল্য রত্ন বাংলা ভাষায় অনুবাদের অপেক্ষায় রয়েছে। তন্মধ্যে শ্রীল প্রভুপাদ প্রদত্ত প্রবচন, প্রাতঃভ্রমণকালীন কথোপকথন, কক্ষ আলোচনা, পত্র বিনিময়, আগমনী বক্তৃতা, ব্যক্তিগত নির্দেশ-উপদেশ ইত্যাদি বহু কিছু রয়েছে। শ্রীল প্রভুপাদের সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় আজকে সারা পৃথিবী তাঁর বাণীরূপ কৃপা আশীর্বাদ প্রাপ্ত হচ্ছে, আমরা চাই সেই একইভাবে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সহ আপামর বাংলাভাষাভাষীরাও যেন সেই সুযোগ লাভ করেন এবং কৃষ্ণভাবনামৃতের স্পর্শ পেয়ে তাদের দুর্লভ মানবজীবনকে সার্থক করতে পারেন।

বাংলা ভাষা সর্বদাই সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন কারণে সম্মানের দাবী রেখেছে। বাংলার বহু কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, ধর্মতাত্ত্বিক, ডাক্তার, ঔপন্যাসিক, বৈজ্ঞানিকদের বিশ্বব্যাপী অবদানের জন্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি জগৎজুড়ে বিখ্যাত। বিশ্বের অনেক স্থানেই বাঙ্গালী সংস্কৃতি বহুল পরিচিত ও আদৃত। এতো জাগতিক অবদানের পরও পারমার্থিক জ্ঞানে আজও আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে, অনেক ধরণের ছলনা, কুসংস্কার, সহজিয়াবাদ আর ধর্মীয় অপসিদ্ধান্তের বেড়াজালে এই বঙ্গভূমি এবং কোটি কোটি বাঙ্গালী জনগণ আজও প্রকৃত সত্যের থেকে বঞ্চিত। অথচ এই বাংলার মাটিতেই প্রেমাবতার স্বয়ং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভূত হয়েছিলেন সমস্ত জীবেদের জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে উদ্ধার করে তাদের প্রকৃত আলয় ভগবদ্ধামে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। আর শ্রীল প্রভুপাদই সেই মহান ব্যক্তিত্ব যিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী 'পৃথিবীতে যত আছে নগরাদি গ্রাম, সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম' এর একমাত্র সার্থক রূপকার। শ্রীল প্রভুপাদ প্রদত্ত শিক্ষাবলীই কেবল পারে আমাদের সমস্ত অন্ধকার থেকে মুক্ত করে প্রকৃত চিন্ময় জ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত করতে, আমাদের নিত্যপ্রভু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমারাদের হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করতে এবং চরমে আমাদের শুদ্ধ প্রেমভক্তি লাভ করে ভগবানের চিন্ময় ধামে প্রত্যাবর্তন করতে। আর বাণীপিডিয়া সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শ্রীল প্রভুপাদের সমস্ত শিক্ষাবলী পৃথিবীতে বিদ্যমান ভাষাসমূহের মধ্যে যত বেশি সম্ভব ভাষায় অনুবাদের মহান কার্যক্রম শুরু করেছে। তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই শ্রীল প্রভুপাদের শিক্ষাবলীর ইন্টারনেটভিত্তিক প্রচারের এই যুগান্তকারী এবং সর্বোত্তম সেবায় নিজেকে যুক্ত করার। চলুন আমরা সকলে মিলে শ্রীল প্রভুপাদের করুণাবারিকে ত্রিতাপক্লিষ্ট জগতবাসীর কাছে নির্মল বর্ষাধারার ন্যায় ঝরে পড়তে সাহায্য করি, কমপক্ষে যেন বাংলাভাষাভাষী লোকেরা শ্রীল প্রভুপাদের এই আযাচিত কৃপা থেকে বঞ্চিত না হয়।