BN/Prabhupada 0004 - আজেবাজে কিছুতে আত্মসমর্পন করবেন না
Lecture on BG 10.2-3 -- New York, January 1, 1967
প্রক্রিয়াটি হল... সেটিও ভগবদগীতায় উল্লেখ করা হয়েছে। তদবিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া (ভ.গী. ৪.৩৪) যদি আপনি সেই চিন্ময় বিজ্ঞানটি বুঝতে চান, তাহলে আপনাকে এই নীতিগুলো পালন করতে হবে। সেটি কি? তদবিদ্ধি প্রণিপাতেন। আপনাকে শরণ নিতেই হবে। একই কথা; যেমন নমন্ত এব। যতক্ষণ না আপনি বিনম্র হবেন, আপনি শরণাগত আত্মা হতে পারবেন না। এবং কোথায় ? প্রণিপাত। এমন ব্যক্তি আপনি কোথায় পাবেন যে, "এই সেই ব্যক্তি...ইনি এমন একজন ব্যক্তি আমি যার কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারি "? তার মানে আমাদের একটু পরীক্ষা করে নিতে হবে যে কোথায় আত্মসমর্পণ করা যায়। সেটুকু জ্ঞান আপনার অবশ্যই থাকা উচিত। কোন আজেবাজে লোকের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। আপনাকে করতেই হবে...এবং কিভাবে আপনি সেই বুদ্ধিমান বা আজেবাজে লোক খুঁজে পাবেন? সেটিও শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি কঠ উপনিষদে উল্লেখ করা হয়েছে। তদবিদ্ধি প্রণিপাতেন পরি...(ভ.গী.৪.৩৪) কঠ উপনিষদে বলা হয়েছে যে তৎ-বিজ্ঞানার্থং স গুরুমেবাভিগচ্ছেৎ শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্ম-নিষ্ঠম্ [মুণ্ডক উপনিষদ ১.২.১২] এই শ্রোত্রিয়ম্ এর অর্থ হচ্ছে যিনি গুরু-শিষ্য পরম্পরার মাধ্যমে এসেছেন। এবং তিনি গুরু-শিষ্য পরম্পরার মাধ্যমে এসেছেন তার প্রমাণ কি? ব্রহ্ম-নিষ্ঠম্l ব্রহ্ম-নিষ্ঠম্ মানে তিনি পরম সত্যকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন। তাই সেই রকম জায়গায় আপনাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। প্রণিপাত। প্রণিপাত মানে প্রত্যক্ষ-রূপেন নিপাতং, কোন সঙ্কোচ থাকা চলবে না। যদি আপনি এমন কোন ব্যক্তি খুঁজে পান, তবে সেখানে আত্মসমর্পণ করুন। প্রণিপাত। এবং তার সেবা করার চেষ্টা করুন, তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করুন, এবং তাকে প্রশ্ন করুন। গোটা ব্যাপারটাই তখন উন্মোচিত হবে। আপনাকে এই ধরনের একজন প্রামাণিক ব্যক্তি খুঁজতে হবে এবং তাঁর নিকট শরণ নিতে হবে। তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা মানে ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করা কারণ তিনি ভগবানের প্রতিনিধি। আপনার প্রশ্ন করার অনুমতি রয়েছে, কিন্তু বৃথা সময় নষ্ট করার জন্য নয়, বিষয়টি বোঝার জন্য। একে বলা হয় পরিপ্রশ্ন। এইসব হল পদ্ধতি। সুতরাং সবকিছুই এখানে রয়েছে। আমাদের শুধু সেগুলো গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যদি আমরা এই প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে কেবল নেশা করার দ্বারা আমাদের সময় নষ্ট করি, মানসিক জল্পনা কল্পনা এবং বাজে কাজে সময় নষ্ট করি, ওহ্, তাহলে এটি কোনদিনও সম্ভব হবে না। তাহলে আপনি কোনদিনই ভগবানকে বুঝতে পারবেন না l কারণ ভগবান এমনকি দেবতা এবং মহান মুনিঋষিদের দ্বারাও বোধগম্য নন l তাহলে আমাদের অতি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার আর কি কথা ? সুতরাং এই হল পদ্ধতি। এবং যদি আপনি অনুসরণ করেন, অসংমূঢ়, অসংমূঢ়, যদি আপনি নীতিগুলো অনুসরণ করেন , এবং ধীরে কিন্তু নিশ্চিতরূপে, অসংমূঢ়, কোনো সন্দেহ ছাড়াই, যদি আপনি করেন, এটি প্রত্যক্ষ অবগমম্ ধর্মম্। যদি আপনি অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন "হ্যাঁ। আমি কিছু পাচ্ছি।" এমন নয় যে আপনি অন্ধকারে রয়েছেন, আপনি অন্ধভাবে অনুসরণ করছেন। যখনই আপনি নিয়মগুলো পালন করবেন, আপনি বুঝতে পারবেন। ঠিক যেমন যদি আপনি পুষ্টিকর খাবার খান , আপনি শক্তি অনুভব করবেন এবং আপনার ক্ষুধা নিবৃত্তি হবে। আপনাকে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না l আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন l একইভাবে, যদি আপনি সঠিক পথে আসেন এবং যদি আপনি নিয়মসমূহ পালন করেন, আপনি বুঝতে পারবেন, "হ্যাঁ, আমার উন্নতি হচ্ছে।" প্রত্যক্ষ...নবম অধ্যায়ে তিনি বলেছেন প্রত্যক্ষম অবগমং ধর্মং সুসুখম্। আর এটি অত্যন্ত সহজ। এবং আপনি এটা খোশমেজাজে করতে পারেন। এবং প্রক্রিয়াটি কি ? আমরা হরেকৃষ্ণ জপ করি এবং কৃষ্ণপ্রসাদ গ্রহণ করি এবং ভগবদ্গীতার দর্শন পাঠ করি, অপূর্ব কীর্তনধ্বনি শুনি। এটি কি খুব কঠিন? এটা কি খুব কঠিন? একদমই না। তাই এই প্রক্রিয়ার দ্বারা আপনি 'অসংমূঢ়' হয়ে যাবেন। কেউই আপনাকে প্রতারণা করতে পারবে না। কিন্তু আপনি যদি প্রতারিত হতে চান তাহলে অনেক প্রতারকও রয়েছে। সুতরাং একটি প্রতারক-প্রতারিতের সমাজ গড়বেন না। শুধু পরম্পরা পদ্ধতি অনুসরণ করুন, ঠিক যেমনটি বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখ করা হয়েছে এবংশ্রীকৃষ্ণ দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। প্রামাণিক উৎস থেকে এটি বুঝতে চেষ্টা করুন এবং আপনার জীবনে তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। তাহলেই অসম্মূঢ় স মর্ত্যেষু। মর্ত্যেষু অর্থ ... 'মর্ত্য' অর্থ যারা মৃত্যুবরণ করবে। তারা কারা? এই বদ্ধ জীবেরা, ব্রহ্মা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পিঁপড়ে পর্যন্ত, তারা সবই মর্ত্য। মর্ত্য মানে একটি সময় আসবে যখন তারা সব মরে যাবে। সুতরাং মর্ত্যেষু। মরণশীল মানুষদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বুদ্ধিমান হন। অসম্মূঢ় স মর্ত্যেষু। কেন? সর্ব-পাপৈ প্রমুচ্যতে। তিনি সব ধরণের পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত। এই পার্থিব জগতে, এই বিশ্বে, আমি বলতে চাচ্ছি, জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে, আমরা সকলেই সবসময় পাপকার্য করছি। তাই আমাদের এই পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এবং কিভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসা যায়? সেটিও ভগবদ্গীতাতে বলা হয়েছে। যজ্ঞার্থাৎ কর্মণোহন্যত্র লোকোহয়ং কর্মবন্ধনঃ (গীতা-৩.৯) যদি আপনি কাজ করেন, কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণের জন্য কাজ করুন ... যজ্ঞ অর্থ শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ। যদি আপনি শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের জন্য কর্ম করেন, তবেই আপনি যেকোন রকমের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকবেন। শুভাশুভ-ফলৈঃ। আমরা কিছু শুভ বা অশুভ কাজ করে থাকি। কিন্তু যিনি শ্রীকৃষ্ণ চেতনায় রয়েছেন এবং সেই মনোভাবে কর্ম করছেন, তার শুভ হোক বা অশুভ হোক, তাতে কিছু যায়-আসে না। কারণ তিনি সর্বশুভময় শ্রীকৃষ্ণের সংস্পর্শে রয়েছেন। সুতরাং, সর্বপাপৈ প্রমুচ্যতে। তিনি সব ধরণের পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হয়ে যান। এটিই হল পদ্ধতি l এবং যদি আমরা এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করি তবে চরমে আমরা শ্রীকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসতে পারি, এবং আমাদের জীবন সফল হবে। এই পদ্ধতি খুবই সহজ, এবং আমরা সকলেই তা অবলম্বন করতে পারি। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।