BN/Prabhupada 0057 - হৃদয় শুদ্ধিকরণ
Lecture on SB 6.1.34-39 -- Surat, December 19, 1970
রেবতীনন্দন: আমরা সর্বদা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ-কীর্তন করার জন্য উৎসাহিত করি, তাই নয় কি?
শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এটিই হচ্ছে এ যুগের একমাত্র পদ্ধতি। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ-কীর্তনের মাধ্যমে যে কারও... সমস্ত উপলব্ধি স্বচ্ছ হয়ে উঠবে এবং তখনই সে গ্রহণ করতে পারে, তিনি তখন পারমার্থিক জ্ঞান গ্রহণে সক্ষম হন। হৃদয় মার্জন ব্যতীত পারমার্থিক জ্ঞান গ্রহণ ও উপলব্ধি করা অত্যন্ত কঠিন। এই সমস্ত সংশোধনমূলক ধাপ - ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ-এগুলো শুধুমাত্র পরিশোধনের পদ্ধতি। এবং ভক্তিও হলো একটি পরিশোধনের পদ্ধতি, বিধি-ভক্তি। কিন্তু বিগ্রহ অর্চনের সেবায় নিযুক্ত হওয়ার মাধ্যমেও কেউ পরিশুদ্ধ হতে পারে। তৎপরত্বেন...সর্বোপাধি... কেউ যখন উপলব্ধি করতে পারে যে, সে হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিত্য সেবক, তখন সে পরিশুদ্ধ হয়ে উঠে। তিনি পরিশুদ্ধ হয়ে উঠেন। সর্বোপাধি অর্থ হল তিনি উপাধি গ্রহণ করেন না... সর্বোপাধি। তিনি সর্ব প্রকার জড় উপাধি থেকে মুক্ত হতে চান, “আমি আমেরিকান,” “আমি ভারতীয়,” “আমি এটা,” “আমি সেটা।” এইভাবে যখন তুমি সমস্ত দেহগত ধারণা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হবে তখনই হল নির্মলম্। সে তখন নির্মল হয়। বিশুদ্ধ। আর যতক্ষণ পর্যন্ত এসব ধারণা বিদ্যমান থাকে যে, “আমি এটা,” “আমি সেটা,” ততক্ষণ পর্যন্ত সে ... স ভক্তঃ প্রাকৃতঃ স্মৃতঃ। (পাশে কেউ:) ঠিকভাবে বসুন, এভাবে নয়। স ভক্তঃ প্রাকৃতঃ স্মৃতঃ। অর্চায়ামেব হরয়ে... এমনকি এই পন্থায় যখন তারা বিগ্রহ অর্চনায় নিযুক্ত হন, অর্চায়াম্ হরয়ে যৎ- পুজাং শ্রদ্ধয়েহতে, ভক্তি সহকারে নিযুক্ত কিন্তু ন তদ্ভক্তেষু চান্যেষু, কিন্তু তার অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা নেই অথবা সে জানে না যে একজন ভক্তের প্রকৃত অবস্থান কি, তখন স ভক্তঃ প্রাকৃতঃ স্মৃতঃ “তখন তাকে প্রাকৃত ভক্ত, ভক্ত প্রায় বলা হয়।” তাই আমাদেরকে জাগতিক ভক্তির স্তর থেকে ঊর্ধ্বে গমন করতে হবে। দ্বিতীয় স্তরে উপনীত হতে হবে, এ স্তরে সে উপলব্ধি করতে পারে ভক্ত কে, বা অভক্ত কে, ভগবান কি, নাস্তিক কি। সেই স্তরে এই পার্থক্যগুলো রয়েছে। এবং সর্বোপরি পরমহংসের স্তরে এরকম কোন পার্থক্যই থাকে না। ঐ স্তরে একজন ভক্ত সবাইকে ভগবানের সেবক হিসেবে দর্শন করেন। তিনি কারোর প্রতি ঈর্ষান্বিত হন না, তিনি কোনো কিছু বা কাউকে বাহ্যিকভাবে দর্শন করেন না। কিন্তু সেইটি হলো অন্য একটি স্তর। আমাদের সে স্তরটি অনুকরণ করা উচিৎ নয়, কিন্তু আমরা হয়তো এটি জানতে পারি যে পরমহংস স্তর হলো সর্বোচ্চ স্তর। প্রচারক হিসেবে আমাদেরকে এ বিষয়টি তুলে ধরতে হবে... যে রকম আমি এ ছেলেটিকে বলছিলাম, “তুমি এই ভাবে বসো।” কিন্তু একজন পরমহংস তা বলবেন না। একজন পরমহংস, বরং এইভাবে ব্যাপারটি দর্শন করেবেন যে: “সে ঠিকভাবেই বসে আছে।” তিনি এইভাবে দর্শন করেন। কিন্তু আমাদের পরমহংসকে অনুকরণ করা উচিত নয়। কারণ আমরা হলাম প্রচারক, শিক্ষক, আমাদের এজন্যে পরমহংসকে অনুকরণ করা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই সঠিক উৎস, বিষয় সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে।
রেবতীনন্দন: আপনি নিশ্চয়ই পরমহংস স্তরেরও ঊর্ধ্বে, প্রভুপাদ।
শ্রীল প্রভুপাদঃ আমি তোমার চেয়েও নিকৃষ্ট। আমি তোমার চেয়েও নিকৃষ্ট।
রেবতীনন্দনঃ আপনি এত মহান। আপনি হলেন পরমহংস, কিন্তু পরমহংস হয়েও আপনি আমাদের মাঝে প্রচার করছেন।
শ্রীল প্রভুপাদঃ না, আমি তোমার চেয়েও নিকৃষ্ট। আমি সমস্ত জীবের চেয়ে নিকৃষ্ট। আমি শুধুমাত্র আমার গুরুদেবের আদেশ পালনের চেষ্টা করছি। এতটুকুই। এইটিই সবার করণীয় হওয়া উচিত। সর্বোত্তম প্রচেষ্টা কর। সর্বোচ্চ নির্দেশ পালনের সর্বোত্তম চেষ্টা কর। পারমার্থিক উন্নতির জন্য এটিই হল নিরাপদ পন্থা। কেউ হয়তো সর্বনিম্ন স্তরেরও হতে পারে, কিন্তু যদি সে তার ওপর অর্পিত কর্তব্য সুন্দরভাবে পালনের প্রচেষ্টা করে তবে সেই হলো উপযুক্ত। সে হয়তো নিম্ন স্তরের হতে পারে কিন্তু যেহেতু সে তার ওপর অর্পিত কর্তব্য সুন্দরভাবে পালনের প্রচেষ্টা করে তাই সেই হলো উপযুক্ত। সেইটিই হলো বিবেচ্য বিষয়।