BN/Prabhupada 1051 - আমার কোন সামর্থ্য নেই, কিন্তু আমি আমার গুরু আজ্ঞাকে জীবন ও আত্মা বলে গ্রহণ করেছি
750712 - Lecture SB 06.01.26-27 - Philadelphia
প্রভুপাদঃ তোমরা কি রোজ গাইছ না? এর অর্থ বোঝ? রোজ কীর্তন গাইছ? অর্থ কি এর? কে ব্যাখ্যা করবে? হুহ্? কেউই জানে না? হ্যাঁ, বল অর্থটা কি?
ভক্তঃ আমার একমাত্র ইচ্ছা এই যে গুরুদেবের মুখপদ্ম নিঃসৃত বাক্য দ্বারা আমার মন যেন পবিত্র হয়, আমার আর কোন আশা নেই।"
প্রভুপাদঃ হ্যাঁ, এটাই আদেশ। গুরুমুখপদ্মবাক্য চিত্তেতে করিয়া ঐক্য। চিত্ত মানে চেতনা, হৃদয়। "আমি কেবল এটাই করব, ব্যাস্। আমার গুরু মহারাজা আমাকে বলেছেন; আমাকে এটা করতেই হবে"। চিত্তেতে করিয়া ঐক্য, আর না করিহ মনের আশা। এটি আমার গর্ব নয়, কিন্তু আমি বলতে পারি যে আপনার আজ্ঞার কারণেই আমি এটি করতে পেরেছি। তাই আমার অন্য সব গুরুভাইদের থেকে আমার যে কিছু বেশি সাফল্যই তোমরা দেখছ না কেন, তা কেবলই এই কারণে। আমার কোন সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমি আমার গুরুবাক্যকে আমার জীবন ও আত্মা বলে গ্রহণ করেছি। এটাই বাস্তব সত্য। গুরুমুখপদ্মবাক্য চিত্তেতে করিয়া ঐক্য। সবারই এটা করা উচিৎ। কিন্তু সে যদি এতে কোন যোগ-বিয়োগ বা বদল করে, শেষ হয়ে যাবে। না। কোন সংযোজন, পরিবর্তন নয়। তোমাকে গুরুর কাছে যেতে হবে - গুরু মানে ভগবানের বিশ্বস্ত সেবক। এবং কীভাবে তাঁর সেবা করবে, তাঁর সেই কথা গ্রহণ কর। তাহলেই তুমি সার্থক। যদি তুমি মনে কর, "আমি আমার গুরুর থেকে বেশি বুদ্ধিমান এবং আমি সংযোজন পরিবর্তন করতে পারি" তাহলে তুমি শেষ। সেটাই একমাত্র কথা। এর পর গাও।
ভক্তঃ শ্রীগুরু চরণে রতি, এই সেই উত্তম গতি
প্রভুপাদঃ শ্রীগুরু চরণে রতি, এই সেই উত্তম গতি যদি তুমি জীবনে সত্যিই প্রগতি সাধন করতে চাও, তোমাকে অবশ্যই গুরুর চরণের বিশ্বস্ত সেবক হতে হবে। তারপর?
ভক্তঃ যে প্রসাদে পুরে সর্ব আশা।
প্রভুপাদঃ যে প্রসাদে পুরে সর্ব আশা। যস্য প্রসাদাৎ সম্পূর্ণ বৈদিক দর্শনেই এই উপদেশ দেয়া হয়েছে আমরা যদি তা না করি, তাহলে আমরা মূর্খ হয়েই থাকি। সেই কথা অজামিল উপাখ্যানে বলা হয়েছে আমরা আজকে এই শ্লোকটা পড়ছিলাম, স এবম্ বর্তমানঃ আজ্ঞাঃ ব্যাসদেব আবার বলছেন... যে, "এই মূর্খ ওখানে ছিল..., তার ছেলে নারায়ণের সেবায় যুক্ত ছিল।" সে তা জানতো না। "এইসব নারায়ণ আবার কি?" সে কেবল তার ছেলেকে জানতো। কিন্তু নারায়ণ এতোই কৃপাময় ছিলেন যে সে যেহেতু নিরন্তর তাঁর নাম কীর্তন করছিলেন "নারায়ণ, দয়া করে এখানে এসো, নারায়ণ দয়া করে এটা নাও" তাই শ্রীকৃষ্ণ ভেবেছেন, "সে নারায়ণ নাম কীর্তন করছে" শ্রীকৃষ্ণ এতোই কৃপাময়। সে কখনই নারায়ণকে ভাবে নি। "আমি নারায়ণের কাছে যাচ্ছি"। সে তার ছেলেকে চেয়েছিল কারণ সে তার প্রতি স্নেহপরায়ণ ছিল কিন্তু সে নারায়ণ নাম জপের সুযোগ পেয়েছিল। সেটাই তাঁর সৌভাগ্য। এই কারণে আমরা নাম বদলে দেই। কেন? কারণ এই সব নামের উদ্দেশ্য কৃষ্ণদাস হওয়া ঠিক যেমন উপেন্দ্র। উপেন্দ্র মানে বামনদেব। তাই তোমরা যদি 'উপেন্দ্র' 'উপেন্দ্র' ডাকতে থাকো, সেই নামটিই গণ্য হবে। সেই কথা পরে ব্যাখ্যা করা হবে।
এখানেও এই কথা বলা হয়েছে... প্রথম শ্লোকে বলা হয়েছে, মূঢ়। এবং দ্বিতীয় শ্লোকে বলা হয়েছে, স এবম্ বর্তমানঃ অজ্ঞ (শ্রীমদ ভাগবত ৬/১/২৭) । অজ্ঞ মানে মূর্খ। মূঢ় মানে মূর্খ। অজ্ঞ মানে অজ্ঞান। যার কোন জ্ঞান নেই। জ্ঞ মানে যার জ্ঞান আছে। অজ্ঞ মানে যার কোন জ্ঞান নেই। মৃত্যুকাল উপস্থিতে। তাই এই জগতে সকলেই মূঢ়, অজ্ঞ। সে পরোয়া করে না যে "আমাকে মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হবে"। তখন আমার সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে, আমার সকল পরিকল্পনা, আমার সম্পদ, আমার সবকিছুই। সে তা জানে না। আসলে জানে, কিন্তু এসব ভাবতে সে পরোয়া করে না। তাই সবাই মূঢ় এবং অজ্ঞ। মৃত্যু আসা সত্ত্বেও, মতিম্ চকারে তনয়ে বালে নারায়ণাঃবয়ে সে বুঝতে পারছে যে "আমি এখন মরছি, মৃত্যু সামনে" সে তখনও তার ছেলের কথা ভাবছে যং যং বাপি স্মরণ লোকে ত্যজত্যন্তে (গীতা ৮/৬) তার একটা সন্তান ছিল। নারায়ণ।
এখন তার অবস্থা আলাদা। কিন্তু আমি যদি সেই একই ভাবে আমার কুকুরের প্রতি স্নেহশীল হই, তাহলে আমার অবস্থানটি কি? অথবা যে কোন কিছু। স্বাভাবিকভাবেই, আমি আমার কুকুরের কথা চিন্তা করব। আর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে আরেকটা কুকুরের মতো দেহ, বা কুকুরের দেহ পেতে হবে। সেটিই প্রকৃতির নিয়ম। যং যং বাপি স্মরণ লোকে ত্যজত্যন্তে কলেবরম্ মৃত্যুর সময় পরীক্ষা হবে তুমি কি ধরণের দেহ পাবে, সেই পরীক্ষা। যং যং বাপি স্মরণ ভাবম্ ঠিক যেমন সে তার ছেলের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিল, তার ছেলের কথা চিন্তা করছিল ঠিক তেমনই যদি তুমি তোমার কুকুর বা অন্য কারও প্রতি আসক্ত থাকো, তুমি সে সময় সেই কথাই চিন্তাই করবে এই জন্য হরেকৃষ্ণ কীর্তনের অভ্যাস কর, যাতে মৃত্যুর সময় তুমি কৃষ্ণস্মরণ করতে পার এবং তোমার জীবন সার্থক করতে পার।
অনেক ধন্যবাদ।
ভক্তবৃন্দঃ জয় প্রভুপাদ