BN/Prabhupada 0911 - যদি তুমি ভগবানে বিশ্বাস কর, তবে অবশ্যই সব জীবের প্রতি সমান দয়ালু ও কৃপাশীল হতে হবে
730420 - Lecture SB 01.08.28 - Los Angeles
অনুবাদঃ "হে পরমেশ্বর, আমি মনে করি যে তুমি নিত্যকালস্বরূপ, পরম নিয়ন্তা, আদি এবং অন্তহীন এবং সর্বব্যাপ্ত। তুমি সমভাবে সকলের প্রতি করুণা বিতরণ কর। পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের ফলে জীবের মধ্যে কলহ হয়।"
প্রভুপাদঃ ভগবদগীতাতেও শ্রীকৃষ্ণ ঠিক একই কথা বলেছেন, এই কথা কুন্তীদেবীর দ্বারা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ঠিক তাই যা ভগবান নিজেও বলেছেন সমোহহম্ সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যোহস্তি ন প্রিয়ঃ যে তু ভজনটি মাম্ ভক্ত্যা তেষু তে ময়ি (গীতা ৯/২৯) ভগবান পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারেন না। তা সম্ভব নয়। সকলেই ভগবানের সন্তান। তাই ভগবান কীভাবে এক সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন এবং অন্য আরেকজনের চেয়ে ভাল করবেন? তা সম্ভব নয়। সেটি আমাদের ভুল। আমরা লিখছি, "আমরা ভগবানে বিশ্বাস করি"। কিন্তু আমরা বৈষম্য করছি। যদি তুমি ভগবানে বিশ্বাসই কর, তাহলে তুমি অবশ্যই সমস্ত জীবের প্রতি সমানভাবে দয়ালু ও কৃপাশীল হবে এর নাম ভগবৎ ভাবনামৃত। তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "আমার কোন শত্রু নেই, আমার কোণ মিত্রও নেই।" ন মে দ্বেষ্যোহস্তি ন প্রিয়ঃ।
দ্বেষ্য মানে শত্রু আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, এবং বন্ধুদের প্রতি বন্ধুপরায়ণ। কৃষ্ণ হচ্ছেন পরম। এমনকি যদিও কখনও কোন জীবের প্রতি তাঁকে শত্রুভাবাপন্ন বলে মনে হয়, তবু তিনি তাঁর বন্ধু। যখন কোন অসুরকে হত্যা করা হয়, তার মানে তার আসুরিক ভাবটি হত্যা করা হয়েছে। সে তৎক্ষণাৎ সাধু হয়ে যায়। অন্যথা সে কীভাবে তৎক্ষণাৎ ব্রহ্মজ্যোতিতে উন্নীত হচ্ছে? এই সব অসুরেরা যারা শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা নিহত হয়েছে তাঁরা তৎক্ষণাৎ ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন হয়ে গেছে অবশ্য, ব্রহ্মজ্যোতি, পরমাত্মা, এবং ভগবানে পার্থক্য আছে কিন্তু তাঁরা মূলত এক। বদন্তি তৎতত্ত্ববিদস্তং (ভাগবত ১/২/১১) একই পরম সত্য , বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবান ইতি শব্দ্যতে (ভাগবত ১/২/১১) মূল ভগবানের আংশিক প্রকাশ হলেন পরমাত্মা যিনি সকলের হৃদয়ে বিরাজমান ঈশ্বর সর্বভূতানাম্ হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি (গীতা ১৮/৬১) সেই অংশ প্রকাশ ক্ষীরোদকশায়ী রূপে সকলের হৃদয়ে আছে তিনি হলেন পরমাত্মা। ব্রহ্ম, পরমাত্মা এবং ভগবান পরম তত্ত্ব হচ্ছেন ভগবান তাই, যে যথা মাম্ প্রপদ্যন্তে (গীতা ৪/১১) তিনি সকলের প্রতিই সমদৃষ্টিসম্পন্ন। এটি নির্ভর করে সেই ব্যক্তি বা ভক্তের ওপর যিনি ভগবানকে বুঝতে চাইছেন। তাঁদের নিজ নিজ বোঝার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পরমেশ্বর ভগবান তাঁদের কাছে প্রকাশিত হন নির্বিশেষ ব্রহ্ম, পরমাত্মা বা ভগবানরূপে। সেটি আমার নিজের ওপর নির্ভর করে।
সেই একই উদাহরণ আমি বহুবার দিয়েছি। কখনও কখনও আমরা আমাদের ঘর থেকে পাহাড় দেখি এখানে লস্ এঞ্জেলেসে অনেক পাহাড় আছে। কিন্তু ওগুলি স্পষ্ট নয়। যখন তুমি দূর থেকে সেই পাহাড় দেখবে, মনে হবে একটা মেঘময় কিছু। কিন্তু তুমি যদি সেই পাহাড়ের আরও কাছে যেতে শুরু কর তাহলে তুমি স্পষ্টভাবে দেখতে পারবে ওখানে কিছু একটা আছে, পাহাড়। আর যদি শেষে তুমি পাহাড়েই এসে পৌঁছাও তুমি সেখানে অনেক লোক দেখবে, অনেক বাড়িঘরও দেখবে । সেখানে রাস্তা আছে, মোটরগাড়ি আছে, সবকিছু। সবধরনের বৈচিত্র। ঠিক তেমনই যখন কেউ তার ক্ষুদ্র মস্তিস্কের দ্বারা ভগবানকে বুঝতে চাইবে, "আমি পরম সত্য সম্বন্ধে গবেষণা করে জানতে চাই"। তাহলে তুমি কেবল কিছু আবছা ধারণা পেতে পার, নির্বিশেষ ধারণা। আর তুমি যদি যোগী হও, তাহলে দেখবে ভগবান সকলের হৃদয়ে বিরাজমান ধ্যানাবস্থিত তদ্গতেন মনসা পশ্যন্তি যং যোগিনোঃ (ভাগবত ১২/৩১/১) প্রকৃত যোগীরা ধ্যানের মাধ্যমে তাঁদের হৃদয়াভ্যন্তরে তাঁরা বিষ্ণুরূপ দেখেন। আর যারা ভক্ত, তাঁরা পরমেশ্বর ভগবানকে সামনাসামনি দর্শন করেন। ঠিক এমন আমরা মুখোমুখি দেখা করছি সরাসরি কথা বলছি, সরাসরি সেবা করছি সেই একই ভগবান আদেশ করেছেন যে, "আমাকে এই এই জিনিসগুলো দাও," ... এবং তিনি দেনও। এই হচ্ছে পার্থক্য ।