BN/Prabhupada 1006 - আমরা বর্ণপ্রথা চালু করিনি
750713 - Conversation B - Philadelphia
স্যন্ডি নিক্সনঃ আপনি কি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন... আমি এই প্রশ্নটি দুইভাবে করতে চাচ্ছি, প্রথমত আমি এটি এইভাবে জিজ্ঞাসা করব, এক অর্থে মনে হবে যেন ভুল। হতে পারে আমি শুধু এটি এমনভাবে জিজ্ঞাসা করব এবং আপনার উত্তর পাব। আপনি কি পাশ্চাত্যকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন... আপনি কি পাশ্চাত্য দেশে প্রাচীন ভারতীয় বর্ণপ্রথাকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন? আমি একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছি আমি...
প্রভুপাদঃ আপনি কোথায় দেখতে পেলেন যে আমরা বর্ণপ্রথাকে উজ্জীবিত করছি? কোথায় পেলেন? প্রথমে আমাকে জানতে হবে। কেন আপনি এই প্রশ্ন করছেন? যদি আপনি দেখে থাকেন যে আমরা প্রাচীন ভারতীয় বর্ণপ্রথা চালু করছি, তাহলে আপনি বলতে পারেন। কিন্তু যদি এই ধরণের কোন উদ্যোগ না থাকে তাহলে কেন আপনি এই প্রশ্ন করছেন?
স্যন্ডি নিক্সনঃ কারণ বহু পরিমাণ মানুষ এতে আকৃষ্ট হচ্ছে, আর এই কারণে আমি প্রশ্নটি করেছি......
প্রভুপাদঃ না,না, বহু মানুষ- আপনিও তাদের মধ্যে একজন। তাহলে আপনি কোথায় খুঁজে পেলেন যে আমরা বর্ণ প্রথা প্রচলন করছি? প্রথমে খুঁজে দেখান এই ধরণের উদ্যোগটি কোথায়। এরপর আপনি প্রশ্ন করুন। অন্যথায় এটি অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।
স্যন্ডি নিক্সনঃ গীতায় বর্ণ প্রথার কথা বলা হয়েছে।
প্রভুপাদঃ হুউ?
স্যন্ডি নিক্সনঃ গীতা বর্ণ প্রথার কথা উল্লেখ করছে।
প্রভুপাদঃ গীতায় কি উল্লেখ আছে, আপনি কি জানেন?
স্যন্ডি নিক্সনঃ চার বর্ণ আর অস্পৃশ্য বর্ণ।
প্রভুপাদঃ সেটি কি? কিসের ভিত্তিতে?
স্যন্ডি নিক্সনঃ আমি নির্দিষ্ট করে তা বলতে পারব না। কিন্তু ব্রহ্মা... .
প্রভুপাদঃ ব্রহ্মানন্দ। কে বলেছে যে এটি বর্ণপ্রথা? এটি বর্ণপ্রথা নয়। চাতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ (ভগবদ্গীতা ৪.১৩)। কর্ম এবং গুণ অনুসারে চার প্রকার মানুষ রয়েছে। ঠিক যেমন আপনিও বুঝতে পারবেন এখানে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে, চিকিৎসক রয়েছে। আপনি কি এদেরকে বর্ণ হিসেবে দেখবেন? "ওহ্, সে ইঞ্জিনিয়ার বর্ণ। সে মেডিকেল বর্ণ।" আপনি কি তাই বলবেন?
স্যন্ডি নিক্সনঃ আমি কি মনে করি সেটা আমি বলতে চাচ্ছি না, কারণ আমি আপনাকে রেকর্ড করছি। (হাসি)
প্রভুপাদঃ আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি...
স্যন্ডি নিক্সনঃ ঠিক আছে, আমি মনে করি বর্ণ বা জাত সবসময়ই আছে। এটি ঠিক যে, এই সত্যটা আমরা স্বীকার করতে পারি না যে তারা রয়েছে।
প্রভুপাদঃ না, স্বীকার করা মানে যদি একজন ব্যক্তি যোগ্য চিকিৎসক হন তাহলে আমরা তাকে চিকিৎসক হিসেবে স্বীকার করি। আবার কোন ব্যক্তি যদি যোগ্য ইঞ্জিনিয়ার হন, আমরা তাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্বীকার করি। একইভাবে, ভগবদ্গীতা পরামর্শ দিচ্ছে- পরামর্শ নয়; চার শ্রেণীর মানুষ এখানে রয়েছেঃ খুব বুদ্ধিমান শ্রেণীর মানুষ, শাসক শ্রেণীর মানুষ, উৎপাদক শ্রেণীর মানুষ আর সাধারণ কর্মী। এটি এখনও রয়েছে। ভগবদ্গীতা বলছে কিভাবে তাদের শ্রেণী বিভক্ত করা হয়, যে "সে এই শ্রেণীর, উনি এই শ্রেণীর।" এটিই ভগবদ্গীতায় বর্ণনা করা হয়েছে, জন্মগতভাবে কিংবা বংশানুক্রমিক ভাবে কেউ কোন বর্ণের হয় না। আপনি ভুল বুঝার চেষ্টা করবেন না। শ্রেণীবিভাগ ইতিমধ্যেই এখানে রয়েছেঃ এক শ্রেণীর মানুষ খুব বুদ্ধিমান। মানব সমাজে কি এরা নেই? আপনি কি মনে করেন সব মানুষ সমান বুদ্ধিমান? আপনি কি মনে করেন? সেখানে অবশ্যই খুব উন্নত শ্রেণীর মানুষের একটি গোষ্ঠী থাকবে। এই উন্নত শ্রেণীর মানুষের লক্ষণ কি? প্রথম শ্রেণীর উন্নত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মানুষ হচ্ছে সে, যে তার মন এবং ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে, খুব সত্যবাদী, খুব পরিষ্কার, খুব সরল, খুব সহনশীল, উন্নত জ্ঞান সম্পন্ন, জীবনে জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটায়, এবং ভগবানের প্রতি অবিচলিত বিশ্বাস। এটি হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর মানুষ। কাজেই এটি শুধু ভারতেই নয়, যেখানেই আপনি এই ধরণের গুণ খুঁজে পাবেন, সেই প্রথম শ্রেণীর মানুষ।
তাই আমরা এটিই জানাতে চেষ্টা করছি যে, প্রথম শ্রেণীর মানুষ ছাড়া সমাজ অকেজো। সুতরাং প্রথম শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। আপনি প্রশিক্ষণ দিন। ঠিক যেমন একটি ছেলে বুদ্ধিমান; তবুও তার স্কুল কলেজে প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রয়োজন হয়। তখন সে তার প্রথম শ্রেণীর মেধাকে প্রথম শ্রেণীর অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। তো এটিই হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর মানুষ। এখন আমাদের তাদেরকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে কিভাবে মনকে নিয়ন্ত্রন করা যায়, কিভাবে ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্তা হওয়া যায়, কিভাবে সত্যবাদী হওয়া যায়, কিভাবে আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক শুচিতা বজায় রাখা যায়, কিভাবে পূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া যায়, কিভাবে জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের জন্য চেষ্টা করা যায়, কিভাবে ভগবদ্ভাবনাময় হওয়া যায়। এই প্রশিক্ষণ... একজন প্রথম শ্রেণীর মানুষ তা নিতে পারে, ঠিক যেমন এই সমস্ত ছেলেরা নিচ্ছে। তাদের প্রথম শ্রেণীর মেধা রয়েছে, আর এখন তারা প্রশিক্ষিত হচ্ছে। এটিই প্রয়োজনঃ প্রশিক্ষিত প্রথম শ্রেণীর মানুষ। এই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
সুতরাং আমরা এই ধরণের বর্ণপ্রথা চালু করছি না যে, ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা একটা বদমাশও ব্রাহ্মণ। আমরা তা স্বীকার করি না। একজন ব্যক্তি যিনি প্রথম শ্রেণীর ব্রাহ্মণ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত হয়েছেন, আমরা তাঁকে স্বীকার করি। এটি কোন ব্যাপার নয় যে সে কি ভারতের না ইউরোপের নাকি আমেরিকার। আমরা এই প্রক্রিয়াটি চালু করার চেষ্টা করছি। এটিই ভগবদ্গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণপ্রথা মানে হচ্ছে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা একজন মানুষ, আচরণের দিক থেকে সে যদি পঞ্চম শ্রেণীরও হয়, তবু তাকে জন্মগত কারণে প্রথম শ্রেণীর মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। একইভাবে, একজন বুদ্ধিমান মানুষ, সে প্রথম শ্রেণীর সব ধরণের গুণ অর্জনের অনুকূল হতে পারে, কিন্তু যেহেতু সে শূদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, তাই সে শূদ্র। আমরা এই ধরণের মূর্খতা বন্ধ করতে চাই। আমরা প্রথম শ্রেণীর মেধাকে তুলে এনে প্রশিক্ষিত করছি কি করে প্রথম শ্রেণীর মানুষ হওয়া যায়। এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। ঐ ধরণের বাজে জিনিস চালু করা নয়। না, আমরা তা চালু করছি না। অন্যথায় আমি কি করে তাদের পবিত্র উপবীত দান করছি? এখন দেখুন। ভারতবর্ষের যে কেউ বুঝবে, সে একজন প্রথম শ্রেণীর ব্রাহ্মণ। আমরা এইভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।