BN/Prabhupada 0218 - গুরু আমাদের চোখ খুলে দেয়
Lecture on SB 6.1.55 -- London, August 13, 1975
আমরা জীব। আমরা কৃষ্ণের অভিন্ন অংশ। যেমন আগুন এবং স্ফুলিঙ্গ, আমাদের স্থিতি এইরকম। এই সূর্য এবং তার উজ্জ্বল ছোট কণা একত্রে রৌদ্রে পরিণত হয়। আমরা প্রতিদিন রৌদ্র দেখি, এটি একটি সমজাতীয় মিশ্রণ নয়। অণু কণা আছে, খুব ছোট, উজ্জ্বল। আমরাও সেইরকম খুব ছোট... যেমন পরমাণু আছে, জড় পরমাণু, কেউ গণনা করতে পারবে না। এইরকম আমরা ভগবানের পরমাণু স্ফুলিঙ্গ। আমরা সংখ্যায় কত, কোন গণনা নেই, অসংখ্য। অসংখ্য মানে আমরা গণনা করতে পারি না। অনেক জীব। আমরা খুব ছোট কণা এবং আমরা এই জড় জগতে এসেছি। যেমন বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা, তারা উপনিবেশ স্থাপন করতে অন্য দেশে যায়। জড় সম্পদ উপযোগ করার জন্য এবং নিজের ইন্দ্রিয় সন্তুষ্ট করার জন্য। আমেরিকা আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং ইউরোপিয়ানরা সেখানে গিয়েছিল। বিচার ছিল ওখানে যাওয়া এবং... আর এখন তারা চন্দ্র গ্রহে যাবার চেষ্টা করছে, খোঁজ করছে কোন সুবিধা আছে কিনা। এটাই বদ্ধ আত্মার প্রবৃত্তি। তারা এই জড় জগতে আসে, কৃষ্ণ ভুলিয়া জীব ভোগ বাঞ্ছা করে।
অর্থাৎ পুরুষ মানে ভোক্তা। কৃষ্ণ হচ্ছে আসল ভোক্তা। ভোক্তারাং যজ্ঞ তপসাং (ভ.গী. ৫.২৯)। আমরা কৃষ্ণকে নকল করছি, এই হচ্ছে আমাদের স্থিতি। প্রত্যেকে কৃষ্ণ হবার চেষ্টা করছে। মায়াবাদী, তারা তপস্যা করে- খুব কঠোরভাবে আধ্যাত্মিক জীবনের সিদ্ধান্ত পালন করে- কিন্তু যেহেতু তারা মায়ার অধীন, তারা অবশেষে মনে করে যে "আমি ভগবান, পুরুষ" একই রোগ, পুরুষ। পুরুষ মানে ভোক্তা। কি আমি কৃষ্ণ..." ভোক্তারাং যজ্ঞ... এবং অনেক অগ্রগতির পর, নিয়ম নীতি অনুসরণ করে, অনুশোচনা করে, মায়া এতটাই শক্তিশালী যে, সে এখনও এই ধারণার অধীন যে "আমি একজন পুরুষ"। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, কিন্তু পরম পুরুষ, যেমন কৃষ্ণ ভগবদ গীতায়, বর্ণনা করেছেন। পরম ব্রহ্ম পরম ধাম পবিত্রং পরমং ভবান, পুরুষং শ্বাশতঃ (ভ.গী.১০.১২) "আপনি পুরুষ।" মায়া এত শক্তিশালী, এত জীবনে লাথি খাবার পরও, প্রত্যেক জীবনে, এখনও তারা ভাবছে, "আমি পুরুষ। আমি ভোক্তা।" এটাই রোগ।
এখানে বলা হয়েছে, এষা প্রকৃতি-সঙ্গেনা পুরুষ্যস্য বিপর্যয় (শ্রী.ভা. ৬.১.৫৫)। জড় জীবন এই ধারনা থেকে শুরু হয়, "আমি পুরুষ। আমি ভোক্তা।" এবং যেহেতু তিনি এই ধারণাটি ত্যাগ করতে পারেন না যে "আমি একজন ভোক্তা" প্রত্যেকটি জীবনে, বিপর্যয়। বিপরীত অবস্থা। বিপরীত অবস্থা মানে ... কারণ জীব ভগবানের অভিন্ন অংশ আর ভগবান সদ-চিৎ-আনন্দ-বিগ্রহ (ব্র.সং.৫.১) তাই আমরাও সদ-চিৎ-আনন্দ-বিগ্রহ, ছোট সদ-চিৎ-আনন্দ-বিগ্রহ, কিন্তু আমাদের স্থিতি প্রকৃতি, পুরুষ নয়। তাদের মধ্যে উভয়ই... রাধা এবং কৃষ্ণের মতো, তারা একই গুনের। রাধা-কৃষ্ণ-প্রণয়-বিকৃতি হ্লাদিনী-শক্তির অস্মাৎ (চৈ চ আদি ১.৫)। তারা একই, কিন্তু তবুও, রাধা হছে প্রকৃতি এবং কৃষ্ণ হচ্ছে পুরুষ। একইভাবে, আমরা যদিও কৃষ্ণের অংশ, কিন্তু আমরা প্রকৃতি এবং কৃষ্ণ পুরুষ। তো আমরা কপটপূর্বক পুরুষ হবার জন্য ভাবি, একে বলে মায়া অথবা বিপর্যয়। এটা বলে হয়েছে। এবং প্রকৃতি-সজ্ঞেন পুরুষ্যস্য বিপর্যয়। বিপর্যয় মানে পুরুষের সাথে বাস্তবে আনন্দ নেওয়া। যখন পুরুষ এবং প্রকৃতি, ছেলে এবং মেয়ে, আনন্দ নেয়, তারা আনন্দ নেয়, তারা ওই সুখ পায়, কিন্তু একজন পুরুষ আর একজন প্রকৃতি। একইভাবে, কৃষ্ণ পুরুষ এবং আমরা প্রকৃতি। যদি আমরা কৃষ্ণের সাথে আনন্দ নিতে চাই, তাহলে ওই আনন্দ সদ-চিৎ-আনন্দ, ওখানে আছে। এটা আমরা ভুলে যাই। আমরা পুরুষ হতে চাই। তাই কোন না কোন প্রকারে এই অবস্থা, একটা মিথ্যা ধারণা পুরুষ এবং ভোক্তা হওয়ার। তাহলে পরিণাম কি? ফলস্বরূপ আমরা প্রত্যেক জীবনে,ভোক্তা হবার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমরা ভোগী, ভোক্তা নই। আমরা শুধু ভোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছি। এটা আমাদের স্থিতি।
তাই কি ভাবে আমরা এই সংগ্রাম থামাব এবং মূল স্থিতিতে ফিরে আসব? এটি এখানে বলে হয়েছে। স এব ন চেরাদ ঈশ-সঙ্গাদ বিলিয়তে (শ্রী.ভা. ৬.১.৫৫)। জীবনের এই মিথ্যা ধারনা, যে " আমি পুরুষ," এটা পুরোপুরি শেষ করা যায়। কিভাবে? ঈশ-সঙ্গ, ভগবানের সঙ্গ দ্বারা, ইশ। ঈশ মানে সুপ্রীম নিয়ন্তা। ঈশ-সঙ্গ। ঈশ কোথায়? আমি ঈশ দেখতে পারি না। আমি দেখতে পারি না। এমনকি কৃষ্ণ ঈশ, সর্বোচ্চ, কিন্তু আমি তাকে দেখতে পারি না।" এখন কৃষ্ণ এখানে আছে। তুমি অন্ধ, কেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছো না? এইজন্য তুমি দেখতে পাচ্ছো না, তোমাকে চোখ খুলতে হবে, বন্ধ নয়। এটা গুরুর কাজ। গুরু চোখ খুলে দেন।
- অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য
- জ্ঞানাঞ্জয়-শলাকয়া
- চক্ষুরুন্মীলিতং যেন
- তস্মৈ শ্রী-গুরুবে নমঃ
- (গৌতমিয় তন্ত্র)
কিভাবে কৃষ্ণ চোখ খোলে? জ্ঞানাঞ্জয়-শলাকয়া দ্বারা। যেমন অন্ধকারে আমরা কিছু দেখতে পারি না। কিন্তু যদি দেশলাই অথবা মোমবাতি থাকে, যদি মোমবাতি জ্বালানো হয় তাহলে আমরা দেখতে পাই। একইভাবে গুরুর কাজ হচ্ছে চোখ খুলে দেওয়া। চক্ষু খোলার অর্থ তাকে জ্ঞান দেওয়া। " তুমি পুরুষ নও। তুমি প্রকৃতি। তোমার বিচার বদলাও।" এটাই কৃষ্ণ ভাবনামৃত।